
খুচরো কথা চারপাশে
অবিভাজ্য আগুন
সুনীল শর্মাচার্য
অবিভাজ্য আগুন
১
এই আমাদের ভারত। আর আমরা সেই মূর্খ ভারতবাসী, এত কিছুর পরও এক জনবিরোধী সরকার ও তার দলের প্রতি অন্ধ! আমাদের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এসব নিয়ে আন্দোলন করে না, তারা মেতে থাকে ক্ষুদ্র স্বার্থে।
জ্বালানি পেট্রোলের দাম দিন দিন বাড়ছে, তবু কারো মাথা ব্যথা নেই, প্রতিবাদ নেই, তেমন জোরালো আন্দোলন নেই।
এবার দেখুন : How much are you Taxed?
Country Tax on Fuel
Germany 65%
Italy 65%
UK 62%
Japan 45%
US 20%
India 260%
*As Fuel Gets Expensive…
India imports nearly 85% of its crude
.
২
ধর্ম যখন মানুষ থেকেও বড় হয়ে ওঠে, তখন পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে আসে! মানুষ, মানবতার
ধ্বংসও অবশ্যম্ভাবী!
.
৩
মানুষ যদি না-বাঁচে, তবে কাকে নিয়ে রাজনীতি করবেন—রাজন!?
.
৪
স্বাধীন দেশের নাগরিক আমি, আর কত রকম কার্ড বহন করবো? মৃত্যুর পর কি কার্ড আমাকে স্বর্গে নিয়ে যাবে?
হায়, আমার স্বাধীনতা লুট হয়ে যায় দিনে-রাতে!!
.
৫
সমকাম বৈধ। এরপর হয়তো পরকীয়াও বৈধ হবে! ভারতীয় সমাজব্যবস্থা কী বদলে গেল?
পরম্পরা বলে একটা বন্ধন ছিল, তা ভবিষ্যতে কি হবে, ভবিষ্যতই জানে?
.
৬
ভাবছিলাম, একটি জাগ্রত, প্রাণচঞ্চল জাতিকে ‘হিন্দু বাঙালি’ ‘মুসলিম বাঙালি’ বলে যারা খণ্ডিত, দ্বিখণ্ডিত করতে চাইছে, তাদের মূঢ়তার বিনাশ অবশ্যম্ভাবী।
কিছু সংখ্যক দিকভ্রষ্টের নীতি আর ক্ষুদ্রতাদুষ্ট চিৎকারের উদ্দেশ্যে, প্রায় ৯৫ বছর আগে, নোয়াখালী সম্মেলনের অভিভাষণে, রবীন্দ্রময় এস ওয়াজেদ আলী (১৮৯০-১৯৫১) প্রকারান্তরে জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, আমরাও যদি এরকম চিৎকার করতে থাকি, শ্মশানের শৃগালের চিৎকার শুনে যেমন পথিক দূরে সরে যায়, আমাদের সে বিকট চিৎকার শুনেও বিশ্ববাসী ভারতের দিগন্ত প্রসারিত শ্মশান থেকে দূরে সরে যাবে; আর আমরা নরমাংসলোলুপ রসনা সঞ্চালন করতে করতে রোষ কষায়িত দৃষ্টিতে পরস্পরের দিকে চাইতে থাকব!
.
৭
গণতন্ত্রও যে স্বৈরতন্ত্রের ভূমিকা নেয়—তা জানা ছিল না!
.
৮
আবার মধ্যযুগ কি ভারতে ফিরে আসছে?
.
৯
অসৎ আর ধান্দাবাজ রাজনীতির ক্ষমতায়—দেশ কখনো সৎ ও দক্ষ-জনসেবক প্রশাসন আশা করতে পারে না!
.
১০
রাজনৈতিক নেতারা দেশটাকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে না তো?
.
১১
ভারতবর্ষের রাজনীতিতে এখন মিথ্যার চাষ চলছে। ভয় আর আতঙ্কের চাষ চলছে। মানুষের জীবনহানির চাষ চলছে। আর রাজনৈতিক নেতারা তাদের রাজনৈতিক ফায়দা, ব্যক্তিগত ফায়দা লুটছে।
ভারতবর্ষের মানবাধিকার কর্মীরা, বুদ্ধিজীবীরা কোথায়? তারা কি শীতঘুমে গর্তে লুকিয়ে আছেন? স্বার্থের বসন্ত এলে আবার জেগে তত্ত্ব ঝাড়বেন!
.
১২
ছোটবেলায় ঠাকুরমার মুখে শোনা গল্পে জানি, দেশভাগের সময় নিম্নোল্লেখিত স্লোগান দিয়ে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা বাঁধাতো :
.
এক.
হিন্দু হিন্দু তুলসীপাতা
হিন্দু খায় গরুর মাথা
দুই.
মুসলমান মুসলমান ব্যাঙের ছাতা
মুসলমান খায় শুয়োরের মাথা
তিন.
কালী আমার শালী, দুর্গা আমার বো
লক্ষীর পাছায় লাথি মাঝ গঙ্গায় থো
চার.
নবীর কল্লা আল্লা খায়, আল্লার কল্লা নবী গো
দুটোর কল্লা চিবিয়ে মুসলমান মক্কায় হাড্ডি থো
.
—এখন ভাবি, এসবও তো ইতিহাসের উপাদান!
.
১৩
এখন দেখছি তালেবান শব্দটি আর আফগানিস্তানে আটকে নেই। পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। কট্টর এবং মৌলবাদী মাত্রেই তালেবান। সে মুসলিম হোক, হিন্দু হোক বা খ্রিস্টান হোক!
.
১৪
নিজেকে নিজেই প্রণাম করি
ঈশ্বর চুপ করে আছেন…
.
১৫
আজ ভারতীয় বাঙালিদের জাতিসত্তার বিনাশ,
প্রজন্মের বিনাশ আসন্ন…
.
জাগো বাঙালি, জাগো!!
.
১৬
ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে যাচ্ছি…
টনক নড়ে না!
ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়
বুঝতেও পারি না!!
.
১৭
সূর্য ডুবে গেল। এরপর আঁধার! এ আঁধার
আমাদের জীবন থেকে মনে হয় আর যাবে না!
.
১৮
রাম নাম সত্য হ্যায়
করোনা-টরোনা ঝুটা হ্যায়
.
১৯
রাম নামে উন্মত্ত দেশ। করোনা মহামারী, সরকারি সম্পত্তি বিক্রি, চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহাল—সব চাপা পড়ে গেল!
নগ্ন শাসকের নগ্নতা লজ্জাহীন…
.
২০
দেশের ক্ষত ঢাকতে গিয়ে
ধর্ম হলো হাতিয়ার!
.
২১
আমাদের পূর্বপুরুষরা কি গাধা ছিল!
দিন দিন তাই তো প্রতীয়মান হচ্ছে…
.
২২
NRC গান্ধী আর নেহরুর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের উপহার!
.
২৩
রাতে শুয়ে বিছানায় ভয় নিয়ে ভাবি। ভয় এখন দেশের বুকে থরে থরে বিথরে! আমাদের মনে। নিজের কাছে গুটিয়ে যাই। সময় বড় অসময়। কখন কি হয় ভাবতে ভাবতে রাত গভীর হয়।
ঘুম আসে না। অশুদ্ধ আঁধারি আমাকে গ্রাস করে। দূর থেকে কুকুরের কান্না কানে আসে। অঝোরে বৃষ্টি। ঘুম বড় আকাল হলো আজ রজনীতে!
.
২৪
দেশে কত কিছু হচ্ছে। মানুষ তবু চুপ আছে।
এই চুপ থাকাটাই কি কোনো তুফানের সংকেত!
.
২৫
আমাদের অবস্থা দিন দিন ঘেঁটেঘুঁটে ‘ঘ’…
সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কারণে!
.
২৬
সুন্দর যদি হতে চাও, সুন্দরের কাছে যাও…
.
২৭
ভোটে যে দল জেতে—তাদের নিয়ে আমরা মত্ত হই, আর যে দল হারে—তাদের নিয়ে আমরা একটুও ভাবি না! নেগেটিভ, পজেটিভ বিশ্লেষণও দরকার গণতন্ত্রের স্বার্থে…
.
২৮
প্রত্যেক পুরুষের একজন রাধা আছে
প্রত্যেক নারীর একজন কৃষ্ণ আছে
.
২৯
জীবন আমার কাটিয়ে দিলাম বন্ধুবিহীন
নিজের কাছে নিজেই দেখি বড্ড অচিন
.
৩০
বিপন্ন আজ
বিপন্নতার দেশে…
.
৩১
পৃথিবী ইতিহাস গড়ছে না ভাঙছে, বুঝি না!
মানুষ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে না পেছনে যাচ্ছে, বুঝি না!
.
৩২
রাজনীতি আর খাটনীতি—
সংস্কৃতিটাকে শেষ করে দিলো…
.
৩৩
আমাদের দেশ স্বাধীন (?)
কিন্তু আমরা স্বাধীন না!!
.
৩৪
ছোটবেলায় আমাদের কোনো ধর্ম ছিল না!
বড় হতেই দেখি, ধর্ম পাঁচিল হয়ে গেছে…
.
৩৫
খেলতে খেলতে জীবন যায়
কূল কিনারা নাহি পায়!
.
৩৬
যতক্ষণ তুমি তোমার অতীত খুঁজে না পাবে, ততক্ষণ তোমার বর্তমান বদলাবে না! তোমার ভবিষ্যতও বদলাবে না! কেন না, পৃথিবীতে Authentic বলে কিছু নেই।
জানো, There’s nothing called authentic, Because the past is always Changing!
.
৩৭
ভারতীয় মিডিয়া—ভারতীয় সংস্কৃতি ধ্বংস করছে…
.
৩৮
রে পাগল, কেউ নিরপেক্ষ নয়, নিরপেক্ষ কথাটা
বড্ড রাজনৈতিক!
.
৩৯
আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্বচ্ছ ভারত গড়ার লক্ষ্যে ভীষণ অগ্রণী! কিন্তু শুধু পথঘাট ঝাট দিলে স্বচ্ছ ভারত হবে না! মনের ময়লা ঝাট দিয়ে পরিস্কার করে স্বচ্ছ ভারত গড়ুন।
ধর্মের অন্ধময়লা, জাতি বিদ্বেষের ময়লা, অসম অর্থনীতির ময়লা, দুর্নীতির ময়লা, বেকারির ময়লা, ঘুষের ময়লা, কুশিক্ষার ময়লা, শ্রেণীবৈষমের ময়লা, দারিদ্রতার ময়লা—ইত্যাদি ময়লা ঝাট দিয়ে তাড়ালে—তবেই হবে প্রকৃত স্বচ্ছ ভারত!
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য
গল্প
এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প: সুনীল শর্মাচার্য
আঁধার বদলায় : সুনীল শর্মাচার্য
প্রবন্ধ
কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য
মতামত
মুক্তগদ্য
খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে
ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন
বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে
ভারতে চীনা দ্রব্য বয়কট : বিষয়টা হাল্কা ভাবলেও, সমস্যাটা কঠিন এবং আমরা
রাজনীতি বোঝো, অর্থনীতি বোঝো! বনাম ভারতের যুবসমাজ
ভারতে শুধু অমর্ত্য সেন নয়, বাঙালি সংস্কৃতি আক্রান্ত
ভারতের CAA NRC নিয়ে দু’চার কথা
ভারতের এবারের বাজেট আসলে অশ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধু কর্পোরেট কা
8 thoughts on “অবিভাজ্য আগুন”