নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা উপসর্গ নিয়ে ১০৭০ জনের মৃত্যু। এই প্রেক্ষিতে তিন সপ্তাহ ধরে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণ বা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বাড়ছে। এর আগে টানা ছয় সপ্তাহ ছিল কমতির দিকে। অথচ, গত এক সপ্তাহে ১৭৯ জনের এমন মৃত্যু হয়েছে। এক সপ্তাহে এটি সর্বোচ্চ।
তার আগের সপ্তাহে এমন মৃত্যু ছিল ১৫৪ জনের। সব মিলে করোনার উপসর্গ নিয়ে সারা দেশে মারা গেছেন ১ হাজার ৭০ জন।
গত ৭ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত এই মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরি (বিপিও)। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) একটি প্রকল্প।
জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপির আর্থিক সহায়তায় কয়েকটি বিষয় নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে বিপিও।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রতিবেদন দিচ্ছে তারা।
গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, করোনার উপসর্গ নিয়ে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে চট্টগ্রাম বিভাগে ৩১০ জন।
এর পর ঢাকায় ২৭০, খুলনায় ১১২, রাজশাহী ১১০, বরিশাল ১০৪, সিলেট ৭০, রংপুর ৬১ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৩ জন।
২৫টি গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষণ
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দেশের ২৫টি গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষণ করে আজ শুক্রবার নতুন প্রতিবেদন দিয়েছে বিপিও।
বিপিও বলছে, গত ৮ মার্চ থেকে করোনা বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য সংগ্রহ করে প্রতি সপ্তাহে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে।
এতে দেখা যায়, ২২ থেকে ২৮ মার্চের সপ্তাহে করোনা উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়।
এর পরের সপ্তাহে এটি দাঁড়ায় ৬৩ জনে। পরের সপ্তাহগুলোতে ১০৬, ১২০ এ পৌঁছায়।
তার পর আগের সপ্তাহের চেয়ে কমতে থাকে। গত ছয় সপ্তাহে এটি কমার দিকেই প্রবণতা ছিল।
১১৪, ৯৩, ৫০, ৬৭, ৪৮ ও ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মাঝে কমলেও, তিন সপ্তাহ ধরে এটি বাড়ছে।
বিপিও গবেষকেরা বলছেন, তাঁরা নিয়মিতভাবে তথ্য যাচাই-বাছাই করে সংশোধন করছেন। ফলে প্রকাশিত পুরনো তথ্যও মাঝেমধ্যে পরিবর্তন করা হচ্ছে।
এর আগে ১৯ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ১ হাজার ১০ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিলেন তাঁরা। পরে এটি সংশোধন করে।
গত সপ্তাহের প্রতিবেদনে আগের তিন সপ্তাহের দেওয়া তথ্য পরিবর্তন করা হয়েছে।
আর নতুন প্রতিবেদনে আগের সপ্তাহে মৃত্যুর তথ্য সংশোধন করায় মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, করোনা রোগীর মতো উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও, তাঁরা করোনায় আক্রান্ত নাও হতে পারেন।
একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে ৮৫ শতাংশের করোনা পাওয়া যায়নি বলেও, উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে।
গবেষকেরা বলছেন, দৈনিক সংবাদপত্র জাতীয় ও আঞ্চলিক, টেলিভিশন, অনলাইন মিলে ২৫টি গণমাধ্যম থেকে প্রতিদিন তথ্য নিচ্ছে বিপিও।
এর পর এসব তথ্য থেকে মোটামুটি গ্রহণযোগ্যটা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তবে মাঠপর্যায় থেকে এসব তথ্য যাচাই করা হয় না।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আরো কয়েকটি বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেছে বিপিও।
তাদের প্রতিবেদন বলছে, করোনা নিয়ে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে ১৩ জুন পর্যন্ত ৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
এ ছাড়া ত্রাণ আত্মসাৎ, খাদ্যে ভেজাল ও করোনা বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘনের মতো অনিয়ম ও অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জরিমানা করা হয়েছে ১০ হাজার ১৩০ জনকে।
বিপিও প্রকাশিত প্রতিবেদন
বিপিও প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে ১৯৬টি নির্যাতন ও সামাজিক কলঙ্ক দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৪৬টি বিক্ষোভ হয়েছে।
এর মধ্যে ৩১ শতাংশ ত্রাণসামগ্রী ও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সহায়তার দাবিতে, বেতন ও বোনাস পরিশোধের দাবিতে ৪৩ শতাংশ এবং ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের বিরুদ্ধে ৭ শতাংশ।
এ ছাড়া করোনা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে ১২৬টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সারা দেশে। এতে ১৩ জন মারা গেছেন এবং ৫৪১ জন আহত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করোনায় মৃত্যুর হিসাব দেওয়া হয় প্রতিদিন।
তবে করোনার উপসর্গ বা সন্দেহজনক মৃত্যুর কোনো সরকারি তথ্য দেওয়া হয় না। এ-দায়িত্ব কিছুটা পালন করছে সিজিএস।
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
করোনায় আরো ১৭৮ জনের মৃত্যু
টানা ২০ দিন পর দৈনিক মৃত্যু দুইশ’র নিচে ১৯৭ জন
করোনায় আরো ২১৫ জনের মৃত্যু