একসময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ছিল মাটির ঘর। আর, এই মাটির ঘর ছিল ঐতিহ্যের নিদর্শন। কালের বিবর্তনে ইট-পাথরের দালানের ভিড়ে তা দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্তমান প্রজন্মের অর্থশালীরা বাপ-দাদার ঐতিহ্য বহনকারী মাটির ঘর ভেঙে লোহা-সিমেন্টের বিলাসবহুল বহুতল বাড়ি বানানোর দিকে ঝুঁকেছেন।
গ্রাম-বাংলার শীত ও গরমের সময় বেশ আরামদায়ক। এখনকার দালানের মতো একসময় গ্রামের বিত্তশালীরা অনেক টাকা-পয়সা ব্যয় করে মাটির বাড়িও তৈরি করতেন। এমনকি দৃষ্টিনন্দন বহুতল মাটির ঘর নির্মাণ করতেন অনেকে।
তবে এসব বাড়ি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এর মধ্যেও বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার নিমাইদীঘি গ্রামে রয়েছে ৪৩ বছর আগে বানানো ৭ কক্ষের তিনতলা মাটির বাড়ি, ঐতিহ্যের নিদর্শন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নন্দীগ্রাম উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরে থালতা মাজগ্রাম ইউনিয়নের নিমাইদীঘি গ্রামে মাটির তিনতলা বাড়িটি অবস্থিত। বাড়িটি ১২ শতক জমির ওপর নির্মিত। মাটির বাড়িতে টিনের ছাউনি দেয়া হয়েছে। মাটির এই বাড়িটি দেখতে অনেকটা প্রাসাদের মতো।
১৯৭৬ সালে এই বাড়িটির নির্মাণ করেন ওই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ মণ্ডল। তিনি শখের বসে এ বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে ইদ্রিস আলী মণ্ডল বসবাস করছেন। তবে তার এই স্মৃতি এখনো আছে।
ইদ্রিস আলী মণ্ডল বলেন, মাটি, খড় ও পানি ভিজিয়ে কাদায় পরিণত করে ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। এ দেয়াল তৈরিতে বেশ সময় লাগে। কারণ একসঙ্গে বেশি উঁচু করে মাটির দেয়াল তৈরি করা যায় না। প্রতিবার এক থেকে দেড় ফুট উঁচু করে দেয়াল তৈরি করা হয়। কয়েকদিন পর শুকিয়ে গেলে, আবার তার উপর একই উচ্চতার দেয়াল তৈরি করা হয়।
এভাবে তিনতলা বাড়িটির ৩৫-৪০ ফুট উঁচু নির্মিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে মাটির তিনতলা বাড়ি নির্মাণ করতে ৫ মাস সময় লাগে। তবে এই বাড়িটি সম্পন্ন করতে সময় লেগেছিল প্রায় ৯ মাস। সেই সময় এর পেছনে কাজ করেছিল অর্ধশতাধিক শ্রমিক। আর, বাড়িটির তিনতলায় ওঠার জন্য রয়েছে মই।
বর্তমানে বাড়িটিতে ইদ্রিস আলী মণ্ডলসহ তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে বসবাস করছেন। তবে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে বাড়িটি হয়ে উঠতে পারে গ্রাম-বাংলার একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে এ বাড়িটি দেখার জন্য লোক আসে।
এ-বিষয়ে থালতা মাজগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, এটি গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য বহন করে। উপজেলার সবচেয়ে বড় তিনতলা মাটির বাড়ি এটাই।
বর্তমানে মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিয়েছে—ইট, সিমেন্ট, বালি ও রডের তৈরি পাকা ঘর। তবে গ্রাম-বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক-বাহক ও পর্যটকদের জন্য দৃষ্টিনন্দন দর্শনীয় স্থান এই নিমাইদীঘি গ্রাম ও তিনতলা বাড়ি।
—শুভ প্রতিনিধি, বগুড়া
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
করোনায় দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ১০৮, শনাক্ত ৫৮৬৯ জন
করোনায় আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্ত, মৃত্যু ৮১
একদিনে করোনায় ৮৫ জনের মৃত্যু