খুচরো কথা চারপাশে
আমাদের পৃথিবী, করোনা ভ্যাকসিন ও অন্যান্য
সুনীল শর্মাচার্য
আমাদের পৃথিবী, করোনা ভ্যাকসিন ও অন্যান্য
করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে
এখন মানুষ দেখছি করোনা ভ্যাকসিন নেবার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। ডাক্তাররাও বলছেন, ভ্যাকসিন নিন, ভ্যাকসিন নিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। আবার বেতারে টিভিতে প্রচার, ‘ভ্যাকসিন নিলেও ছ’ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন, নিয়মিত হাত ধুন ইত্যাদি ইত্যাদি।’
কিন্তু কোভ্যাকসিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দেয়নি। এবার কোভিশিল্ডকেও ইউরোপীয় দেশগুলি অনুমতি দিচ্ছে না। তার মানে, এই দুই ভ্যাকসিন যারা নিয়েছেন, তারা এখন বিপদে পড়লেন। বুঝতেই পারছেন, মোদি সরকার দেশের মানুষের কেমন উপকার করছেন।
.
কবিতা কি?
কবিতা কি? এটা কখনো বুঝিনি। এখনো বুঝি না। যা লিখি, তা কবিতা নয়, এইটুকুই এখন বুঝি।
অনেক কবিবন্ধু আছেন, তারা কবিতা কি? বললেই নানা মুনির নানা মত খাড়া করেন। কবিতা এই, কবিতা সেই। জ্ঞানের মা-ষষ্টি! এমন সব কথা জাহির করে যে, কবিতা সত্যিই অবাস্তব ছবিতা হয়ে যায়। তখন একটা ধাঁধা বা ধুঁয়ো শব্দ-তরঙ্গ খেলা করে।
প্রশ্ন, হাজার প্রশ্ন থাকতে পারে; কিন্তু কবিতা? সে ক-বি-তা-ই! সারাজীবন ধরে লিখে বোঝা যায় না। সারা জীবন ধরে তাকে তপস্যায়ও বাঁধা যায় না, গড়াও যায় না!
.
আইনের চোখে
আইনের চোখে সবাই সমান। এই মিথ্যেটি প্রায়শই আমাদের সবাইকে শুনতে হয়। এই আইন বড়লোকদের জন্য একরকম, সমাজে প্রভাবশালীদের জন্য আরেকরকম, আমলাদের জন্য একরকম, নেতা মন্ত্রীদের জন্য আরেকরকম।
আর গরিব মানুষের জন্য ভীষণরকম। তার নিস্তার নেই। প্রতিপদে আইনের চোখ রাঙানি! এই তো সমাজ। এই তো ইংরেজদের আইনি ব্যবস্থা—যা স্বাধীনতার পর দেশীয় আইনি ব্যবস্থা এখনো দেশীয় হয়ে ওঠেনি!
.
হাজার হাজার বছর ধরে
মানুষ সভ্যতার যেদিন থেকে শুরু, গুহা থেকে নেমে এসে মানুষ তার নিজের জন্যে, অস্তিত্বের জন্য, আর ক্রমশই সুখ বৈভবের জন্যে হিংসার চর্চা করে এসেছে। প্রথম দিকের হাজার হাজার বছর বাবা চিনতে পারত না আমিই তার ছেলে কিংবা মেয়ে। তারপর মায়ের কাছে থেকেই মমতার আর ভালোবাসার পাঠ নিয়েছে মানুষ।
হাজার হাজার বছর, ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতি যত হয় হোক, মানুষের ভালোবাসার চর্চা করতে হবে, চর্চা
করতে হবে ভালোবাসাবাসির, না-হলে এই পৃথিবী ধুলোময়লা হয়ে যাবে। আসুন, আমরা এইরকম ভাবতে চেষ্টা করি।
.
নেট-দুনিয়ায় এখন
নেট-দুনিয়ায় এখন সবার অধিকার, নিমন্ত্রণ। ফেসবুকে তো যা খুশি বলা যায়, করা যায়। আহা, কী আনন্দ! কারো ওপর খুব রাগ, গোপন অসূয়া, এ যেন তার বাপান্ত করার সুবর্ণ সুযোগ।
অতি চালাক হলে অন্য কাউকে দিয়ে আক্রমণ করাও, হাবিজাবি লিখে মনের জ্বালা মিটিয়ে থাকো রসেবসে, পরমানন্দে। কেউ তোমার কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবে না। কারো নামে জালি একাউন্ট খুলে মনের সুখে যত খুশি অপদস্ত করো। কেউ কিচ্ছুটি করতে পারবে না, এমন ভেবে পুলকিত হওয়া যেতেই পারে।
ঈর্ষাকাতরতার এখন বাড়বাড়ন্ত। ফেসবুকের মাধ্যমে কত বন্ধুজন মেলে, আবার ঈর্ষান্বিত মানুষজনের সন্ধানও মেলে। আসলে নেট-দুনিয়া এখন রাগ চরিতার্থ করার, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সহজ উপায়! হ্যাঁ, নেট-দুনিয়ার সামগ্রিক ছবি অবশ্য এমন নয়।
ভালো দিক, সামাজিক দায়িত্ব-পালনের দিক, আন্দোলনের দিক, অনেক গুপ্ত-খবরাখবরও প্রচার করে প্রশাসনের দৃষ্টিপাত করা যায়। অশুভের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, ক্ষোভ সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেবারও সামাজিক মাধ্যম। ফেসবুক না-থাকলে এসব সম্ভব হতো না। ফেসবুক রহো রহো আমাদের পাশে।
.
রাতদিন খাই খাই
রাতদিন খাই খাই
থামবার জো নাই…
বাতিল ধারাতেই চলছে গ্রেপ্তারি। এমনই দেশের অবস্থা! কত লোক তার বিনাবিচারে, শুধু সন্দেহের কারণে জেলে পচে মরছে, তার খবর কে রাখে? বর্তমান কেন্দ্রীয় ফ্যাস্টিট সরকার দিনে দিনে হিটলারকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
মারা গেলেন মানবাধিকার কর্মী, আদিবাসী অধিকার রক্ষা আন্দোলনের অগ্রণী ফাদার স্ট্যান স্বামী। এটা মৃত্যু নয়, পরিকল্পিত রাষ্টীয় হত্যা! স্ট্যান স্বামীর কথা ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে গেল ফাদার ম্যাক্সিমিলিয়ানের কথা। আউশউইৎস কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্দী হওয়ার এই পাদরির কথা।
ইতিহাসের চলন বড় অদ্ভুত। আমার পছন্দ হোক আর না-ই হোক, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ধর্মের লোকেরা জড়িয়ে গেছেন সর্বত্র। স্ট্যান স্বামী। তারপর কে? তারপর কে? তার পর কে? কবে থামবি তুই? জানি, আগুন যতদিন না তোকে খাবে, তুই থামবি না…
.
আমাদের পৃথিবীতে এ বি সি ডি গ্রেডের মানুষ
আমাদের পৃথিবীতে সামাজিক, রাজনৈতিক, শিল্প, বাণিজ্য জগৎ মিলে চার শ্রেণির মানুষ বসবাস করে। তাদের আমরা এ বি সি ডি এই চার গ্রেডে ভাগ করতে পারি। অনেক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়—পৃথিবীটা শাসন করছে বি-গ্রেডের মানুষজন। আর পৃথিবীটাকে বাঁচিয়ে রাখছে সি এবং ডি-গ্রেডের মানুষজন।
আর এ-গ্রেডের মানুষগুলো বাস্তবে পৃথিবীর কোনো কাজেই লাগে না। তারা শুধুই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। একটা নির্ঝঞ্ঝাট আরাম আয়েশের মধ্যে জীবন কাটিয়ে আর দশটা জড় বস্তুর মতো পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়।
অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের বক্তব্যটাও এই জন্য গুরুত্বপূর্ণ : ‘অর্থনীতি টিকিয়ে রাখে গরিব মানুষেরা, ধনীরা নয়!’ মানে সেই সি আর ডি-গ্রেডের মানুষজনেরাই!
.
এ-জীবনে প্রেম ও অন্ন
এ-জীবনে প্রেম ও অন্ন বারবার ক্ষুধা হয়ে মাথা উঁচু করে। এরা সুন্দর এবং ভয়ঙ্কর। এদের সুগভীর রহস্য মানুষকে নিয়মিত বাঁচিয়েও রাখে। মানুষ এদের উপস্থিতি লক্ষ্য করে যুগপৎ আনন্দিত ও বিস্মিত হয়।
কখনো কখনো, আলো-অন্ধকার এক থমথমে টানেলের মধ্যে দিয়ে ওরা এসে মানুষকে ডাক দেয়। তখন অন্য এক জগতের বিস্ময় ছাড়া মানুষের সামনে আর কিছুই থাকে না।
.
অনবধানতাবশত
মাঝে মাঝেই অনেক জানা বানান আমরা হরহামেশাই ভুল লিখে থাকি। এসব সবার ক্ষেত্রেই হয়। আমারও হয়। অনবধানতাবশত একটি বানান ভুল লিখেও চোখে পড়ে না। যেমন, আজ হলো—‘উত্যক্ত’ বানানটা। পরে পড়ার সময় এডিট করে ‘উত্ত্যক্ত’ লিখলাম। আমি তো শব্দটির
উৎপত্তি জানি। উৎ+ত্যক্ত সন্ধি করে হয় ‘উত্ত্যক্ত’!
প্রথমে কেন এই ভুল চোখে পড়লো না? সবাই কী লেখেন? হ্যাঁ, ‘উত্যক্ত’ লেখা দেখেছি অনেক জায়গায়। সেই ভুল বানান কি আমার অচেতন মনে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিল?
.
নশ্বরতাই চরম সত্য
যখন লিখে কিছুই হলো না, তখন না-লেখাই ভালো। এই মনোভাব থেকে লেখা ছেড়ে দেয় অনেকেই। এই মনোভাবের বিরোধী আমি। কিছু হবার জন্য লেখার জগতে পা দিইনি, এমন কি, কিছু পাবার জন্যও নয়। এ জগতে এসেছি, দুর্ঘটনাবশত। অপদার্থ হিসেবে নিজেকে সবদিক থেকে প্রমাণ করার পর, এই জগতে এসে, এক মহাঘোরে নিমজ্জিত হয়ে পড়ি।
তকনো ভাবিনি বা অনুধাবন করিনি যে, লেখা আমার প্যাশন, আমার শ্বাসপ্রশ্বাস, বেঁচে থাকার
একমাত্র উপায়। সুতরাং, লিখে কিছু হয়নি, এ-কথা বলতে পারবো না। বেঁচে আছি, এটাই যথেষ্ট।
জীবনের অসংখ্য ঝড়ঝাপটা থেকে এই লেখা আমাকে বাঁচিয়েছে। ফলে, লেখা ছেড়ে দেবার কথা ভাবি না। পাঠক নেই, অথবা আমার লেখা কারো ভালো লাগে না, তা আমি কি করবো? একটা কথাই জানি, আমি ও আমার লেখা নশ্বর। এই নশ্বরতাই চরম সত্য।
.
এ কোন দেশ
যে বয়সে মানুষ তীর্থে যায়, হজ করে, সে বয়সে এসে ভাবছি—এই দেশ কীভাবে পরাধীন হয়ে যাচ্ছে দুই বেনিয়ার হাতে পড়ে। আমাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যত মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে ধুলোয়, তরুণ প্রজন্মকে করে তোলা হচ্ছে অথর্ব। ক্রমে সব স্বাধীনতা হরণ করে নেওয়া হচ্ছে। সংবিধান জিনিসটা আর সুরক্ষিত থাকছে না। নিত্য নতুন ছুরিকাঘাতে তাকে ছিন্নভিন্ন করা হচ্ছে।
যে সংবাদ জগত ছিল সরকারের সমালোচনামুখর, সেই জগত এখন সরকারের সমালোচনা করলেই তাকে কোণঠাসা করতে উঠে পড়ে লেগে যাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষকে পৌরাণিক যুগে নিয়ে যাবার চেষ্টা চলছে সরকারি মদতে। এ কোন দেশ আমরা তুলে দিচ্ছি আমাদের সন্তানদের হাতে!
.
আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে : ‘মন্দাক্রান্তা’ ছন্দ নিয়ে
আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে : মন্দাক্রান্তা ছন্দ নিয়ে ভাবছিলাম। ‘মন্দাক্রান্তা’ আসলে সংস্কৃত কবিতার ছন্দ। বাংলায় চলন মাত্রাবৃত্ত রীতিতে।
৮+৭+৭+৫ মাত্রা-বিশিষ্ট পর্ব বা পঙক্তি। মিল ১ম-২য়, ৫ম-৬ষ্ঠ, ৪র্থ-৮ম। প্রথম ৮ মাত্রার পর্বে চারটি মাত্রাই রুদ্ধ দল। দ্বিতীয় ৭ মাত্রার পর্বে প্রথম পাঁচটি মাত্রাই রুদ্ধ দল। দ্বিতীয় ৭ মাত্রার পর্বে প্রথম পাঁচটি মাত্রা মুক্ত দল, শেষটি রুদ্ধ।
তৃতীয় ৭ মাত্রার পর্বে শুধু দ্বিতীয় মাত্রাটি মুক্ত দল, অবশিষ্ট তিনটি মাত্রাই রুদ্ধ। অন্তিম পর্ব বা চরণ/পঙক্তির প্রথম মাত্রাটি শুধু মুক্ত জল, অবশিষ্ট শেষ দুটি মাত্রা রুদ্ধ। উদাহরণ (মৎকৃত) :
.
আয় আয় মেঘ আয়
দূরে সে অলকায়
একলা নিশ্চুপ
নিরুত্তাপ।
গম্ভীর গর্জন
জানো তো হে সুজন
প্রেম যে জ্বর জ্বর
প্রবল কাঁপ।।
…………………
পড়ুন
মুক্তগদ্য
খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে
ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন
বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে
ভারতে চীনা দ্রব্য বয়কট : বিষয়টা হাল্কা ভাবলেও, সমস্যাটা কঠিন এবং আমরা
রাজনীতি বোঝো, অর্থনীতি বোঝো! বনাম ভারতের যুবসমাজ
ভারতে শুধু অমর্ত্য সেন নয়, বাঙালি সংস্কৃতি আক্রান্ত
ভারতের CAA NRC নিয়ে দু’চার কথা
ভারতের এবারের বাজেট আসলে অশ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধু কর্পোরেট কা
ইন্ডিয়া ইউনাইটেড বনাম সেলিব্রিটিদের শানে-নজুল
করোনা, ভারতীয় জনগণ ও তার সমস্যা
ধরি মাছ না ছুঁই পানি, ফেসবুক, কবিতা ও অন্যান্য
আমরা প্রত্যেকেই আজ ফ্যাসিস্ট এবং প.বঙ্গের বাঙালিরা
ফেসবুক, কবি, বুনো ফুল এবং আমিও পলিটিক্যাল
নিত্য নতুন বাঁশ, লিটল ম্যাগাজিন ও অন্যান্য
আমাদের পৃথিবী, করোনা ভ্যাকসিন ও অন্যান্য
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
শিব্রাম বলেছিলেন, কিছু বাস্তব সত্য
বিসর্জন
বয়স বাড়ে কখন, নোটবই ও অন্যান্য