
তিনটি কবিতা
নাসিমা খাতুন
নাসিমা খাতুনের তিনটি কবিতা
অস্থায়ী নিবাস
বাদশাহী মেজাজে হেঁটে পরাস্ত করি লম্বা পথের ক্রোশ,
দিগন্ত দ্বিখণ্ডিত করি পালোয়ানি শরীরের বাহুবলির দেমাগে,
লাঙ্গলের ফলার ধর্ষণে কুমারী মাটির জরায়ুতে প্রসব করাই
সামন্তবাদী সময়ের উর্বর পেলবতা।
ধূসর ভূমিতে লালচে রঙের ফানুস উড়িয়ে আকাশকে ছুঁই
পাহাড়তলীর চূড়া ভেদ করা মুখোশের প্রহারে।
.
এতো সে ব্যস্ত জীবন!
এতো যে উদভ্রান্ততা!
পিচঢালা সময়ে যুগের করতলে ধূলার বিনুনিতে গড়ে তুলেছি
নিজেরই অজান্তে শুধুই অস্থায়ী সাম্রাজ্য!
.
শৈশবে মায়ের চোখের আড়াল হওয়া কষ্টের মতো
হারিয়ে ফেলেছি চিরচেনা মাটির প্রসাধন থেকে ব্যস্ত পায়ের চিহ্ন।
.
পাতালের সরোবরে নেমে গেছে যে পথ,
সেখানে কীসের এতো আনাগোনা!
কীসের জয়গান!
চেনা হলো না সে পথের ধারে বেড়ে উঠা
স্থায়ী আবাদের পিরামিডের খাঁজকাটা চিহ্ন।
নাসিমা খাতুনের কবিতা
নূপুর ও শিকলের গান
নূপুর পরা আমার শৈশব ছিল বড্ড মায়াময়
রিনিঝিনি ঝংকারে দিনগুলি ছন্দময়
সকাল-সন্ধ্যা, বেলা-অবেলা ছিল নূপুরের জমিন।
.
নূপুর বাজে
শৈশব হাসে
নিক্কনের ফ্রেমে নজরবন্দি
বিকল্প পাহারায় রুনুঝুনু ধ্বনি।
.
আমার শৈশব, আমার কৈশোর—যুবতী হলো নূপুরের ছন্দে,
নূপুরের শিঞ্জনে মুক্ত স্বাধীন প্রাক্তন পথের উচ্ছ্বলতা।
.
তখন বুঝিনি—
ওটা ছিল পায়ে শিকল পরার পূর্ব-প্রস্তুতি,
আজ আমার সারাশরীরে শব্দহীন নূপুর,
নিষেধাজ্ঞার শিকল দাবড়ে বেড়ায়
কারারুদ্ধ জীবনের ইশতেহারে।
পায়ের বেড়িতে পরাধীনতার মঞ্চ এঁকে
স্বাধীনতার রক্ত চুষে চুষে পুষ্ট হয় শিকলের দেহ।
.
পরম্পরা
সুগন্ধি খেজুর রসের হাড়ির তলা ফুটো করে
পুঁজিবাদী পিঁপড়ের দল হিরোইনের ছায়ামুর্তি
আবাদ করতে আবিষ্কার করেছে ডিএনএ কোড
.
প্রতিবেশি দুই চোখ পস্পরের সমান্তরাল প্রতিদ্বন্দ্বী,
তীর্যক কম্পাসে আঁকে একে-অপরের চক্ষুশূল নজর,
বিপ্রতীপ আয়নায় ধরা পড়ে উইন উইনের
নাছোরবান্দা কূটকৌশল।
.
ফুলের জরায়ু ক্ষত করে কৃষিজীবী মৌমাছি
লুটে আনে শষ্যদের ভ্রুণ—
ব্যবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানে সম্পদের কারুকার্যখচিত
তাজমহল গড়ার নেশায়।
শিকারি মৌয়াল ধনতন্ত্রের বাণিজ্যিক শাখার দক্ষ কারিগর,
মৌমাছির বিজ্ঞানে আগুন লাগিয়ে টিকিয়ে রাখে
বাস্তুসংস্থানে দুর্বলকে শোষণের সামন্তবাদী পরম্পরা।
4 thoughts on “নাসিমা খাতুনের তিনটি কবিতা”