shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

নিরঞ্জন রায়ের চারটি কবিতা

Niranjan Roy
Niranjan Roy

চারটি কবিতা

নিরঞ্জন রায়

নিরঞ্জন রায়ের চারটি কবিতা

একফোঁটা স্বপ্ন জল

আমি বলেছিলাম চুক্তিটা না-করাই ভালো

হাতে হাতে রেখে তুমি বললে—

এই হাত ছিন্ন হবে না জীবনেও।

.

নদী মোহনার দিকে যায়, স্বাক্ষর লাগে না 

সাগরতরঙ্গ আলিঙ্গনে মেলায়

তীরে এসে নিজেকে হারায়

ঝরনাও গড়িয়ে পড়ে পাহাড় ফুঁড়ে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই।

.

তুমি বললে অন্য কথা

দৃঢ় মুষ্টিতে আমার হাত ধরে বললে—

আজ থেকে আমাদের নতুন এই পথচলা

পথ কেটে কেটে রাজমহলের দিকে এগিয়ে যাওয়া;

দুজনের স্বপ্নগুলো নৌকোর পালে জমা করা  

ঘুড়ি ওড়া—দূর নীলাকাশে

জলরঙে আলপনা আঁকা—কমলবনে,

চোখ জোড়াকে একই বিন্দুতে স্থিত রেখে   

বুনোফুলে বাগান লালিম করা।

.

ফাগুনের মৃদুমন্দ বাতাসে ঘুড়িটা ঠিকমতোই উড়ছিল,

শীতের হাওয়ায় বট-পাকুড়ের পাতা ঝরছিল

কোরাস কণ্ঠ জীবনের গান গাইছিল 

পা যুগল তালে তালে

পরস্পর চোখে নতুন পৃথিবী গড়ে

জোড়া বলাকার মতো নীলাকাশে ডানায় ভর দিয়ে

জীবন স্কেলে ভারসাম্য রেখে যাচ্ছিল।

.

তুমি বলেছিলে কথা দাও

আমি শঙ্কিত 

তবুও তোমার হাতে হাত রেখে বলেছিলাম—

কোজাগরী চাঁদের আলো না, আমি তোমাতেই খুঁজি অন্ধকারে দিশা।

.

হঠাৎ ঝড় এলো, ঝড়-বৃষ্টি আসে প্রকৃতির নিয়মে

তোমার হাতে পায়ে মেহেদির আলপনা

লাল শাড়ি পরনে,

কপালে রক্তিম টিক, কাজলে মাখামাখি দু’চোখ,

অনামিকায় ঝুলে আছে সোনালু লতা,

মুখোমুখি পিড়িতে, অচেনা পদ্মপাতার ওপর

টলোমলো তোমার একফোঁটা স্বপ্ন জল।

.

ঘর সাজাতে ব্যস্ত আমি

তোমার কোমল হাতের স্পর্শ ফেরি করি 

তুমিই ভাঙলে মুকুর 

উল্টো সুরে ইতিহাসে নাম লেখালে

মীরমদন পরাজিত, তবুও লোকমুখে তার স্তুতিগাথা।

.

আফ্রোদিতির প্রতিদ্বন্দ্বী

আকাশে চাঁদ উঠেছে কি-না কে জানে

তবুও আলো এসে খেলা করে অন্ধকার কুটিরে।  

.

দেখা হয়নি তার সাথে শালপিয়ালের বনে বা অন্য কোনো বিজনদ্বীপে

কত বসন্তদিন মিলেছে দিগন্তে ফলহীন রোদনে। 

.

মেসেঞ্জারে সবুজবাতির ক্ষীণ আলোয় দেখা একপলক

মুখমণ্ডলের ক্ষুদে রূপ দিয়েছিল বনসাইয়ের ঝলক  

তবুও অজানা শিহরণে উত্তেজিত আগন্তুক যুবক।

.

আকাশে চাঁদ থাকা-না-থাকা তফাৎ করেনি বৃন্দাবনে

পূর্ণাঙ্গ অবয়ব সে পেয়েছিল শিল্পীমনে

বিকশিত বুনোফুলের বাহারও ম্লান হয়েছিল তার কাছে

শতাব্দী নাম ধরে সে এখন হৃদয়মুকুরে ভাস্বর

আফ্রোদিতির প্রতিদ্বন্দ্বী সেজে।

.

অবুঝ উদাসী পাখি

চারিদিকে আলোর বিচ্ছুরণ ভোরের সূর্য দীপ্যমান

গাড়ি চড়ে নববধূ যায়, ছড়ায় বর্ণিল রঙ

ভাটপাতা ধুলোমাখা শরীরেও উদ্দীপ্ত 

গেয়ে যায় জীবনের গান। 

.

ডোবানালায় কচুরিপানা ফুল দোলে

উঁকি দেয় পানকৌড়ি

মাছেরা তবুও সাহসী জীবনের রঙে গা ভাসায়।

.

ঘাসের ডগায় জমে থাকা মুক্তো হারিয়ে যায় কোন সে মায়ায়

গাঢ় নীল চোখে আকাশ নতজানু,

রাতের তারারা এগিয়ে একধাপ

নদীবুকে জলকেলি সারে, লুকোচুরিতে মেতে ওঠে বনের গহীনে।

.

ভালোলাগার এসব দৃশ্য যায় আসে পুরনো দিনের কথা বলে

মোহজালে আবিষ্ট মানুষ একই নাটকের অভিনেতা-অভিনেত্রী

দিনশেষে দিগন্তের শূন্যতায় মিলিয়ে যায়।

.

তবুও তোমার কথা মনে হলেই অবুঝ উদাসী পাখি

সুদূরের দ্বীপদেশে একটু নির্জন জায়গা খোঁজে

নীরবে-নিভৃতে।

.

কুরুক্ষেত্র খেলা করে

জলঘোলা করে অবিনাশ দাঁড়ালো গঙ্গার তীরে

ওপরে দোলের চাঁদ

ঝুলে আছে আকাশ 

দু’ধারের গাছগুলো ঝুঁকে নদীর বুকে, কানে কানে ফিরছে বাতাস।  

.

অবিনাশ নিজের প্রতিচ্ছবি খুঁজে না-পেয়ে

তাকায় শূন্যে  

সমুদ্রের ফেনিল ঢেউ তীরে আঘাত হেনে ভারী করে দীর্ঘশ্বাস

কুহক জালে ঢাকা পড়ে আত্মপরিচয়।

.

গঙ্গা বয়ে চলে নিরবধি অবিনাশের হৃদয় ঘিরে

কুরুক্ষেত্র খেলা করে যায় আজও মানুষের ভেতর

মিথোলজির পেরিফেরি ছাড়িয়ে।

.

About The Author

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...