shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

নিলেশ ও ছোট্ট ভূত, পর্ব ৬

Little Ghost
Little Ghost

শিশুতোষ উপন্যাস, ধারাবাহিক—পর্ব ৬

নিলেশ ও ছোট্ট ভূত

আফরোজা অদিতি

নিলেশ ও ছোট্ট ভূত

ওরা দুজনে একমনে নাচছে। কোনোদিকে খেয়াল নেই।

‘এই একা একা অমন করি লাফাচ্ছ ক্যান।’ কথা শুনে লাফানো বন্ধ করে নিলেশ।

ঐ পাড়াতে থাকে ময়েনউদ্দিন, ময়েন কাকা। ময়েনউদ্দিন এই পথ দিয়ে যাচ্ছিল, ওকে লাফাতে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। সালাম দেয় নিলেশ। নিলেশকে খুব ভালোবাসে ময়েন। যখন হারিয়ে গিয়েছিল, তখন বাড়ির সকলের সঙ্গে খুঁজতেও বেরিয়েছিল ময়েন। খুব ভালো মনের মানুষ। তা ছাড়া ভালো ভালো গল্প জানে, সুন্দর গুছিয়ে গল্প বলে, অভিনয় করতে পারে।

ময়েন কাকাকে ডাব দুটো দিলো নিলেশ। কে পেড়েছে, ক্যান পেড়েছে, ক্যান দিতেছ—এইরকম হ্যানত্যান নানান প্রশ্ন করলো ময়েন কাকা। তারপর ডাব না-নিয়ে চলে গেল।

যাবার সময় বলে গেল, ‘তুমি গাছে উঠে ডাব পাড়ছো নিলেশ, ঐ ডাব আমি খাতি পারি না। তুমি আর গাছে চড়বা না, আমারে কও!’

‘না আর গাছে উঠে ডাব পাড়বো না; কথা দিলাম।’ ময়েন কাকা এক বিঘত একটা হাসি দিয়ে চলে গেল।

নিলেশ ডাব নিয়ে কী করবে—এই চিন্তা করতে লাগলো।

‘এবারে কী হবে ডিংডং। বাড়িতে মিথ্যে বলতে হবে। কিন্তু মিথ্যা কথা তো আমি বলি না। তা ছাড়া গুরুজনদের কাছে মিথ্যে বলতে হয় না, মিথ্যে বলতে নেই। কী করবো যে তাই ভাবছি। কাউকে পেলে দিয়ে দিতাম, কিন্তু কাউকে দেখতে পাচ্ছি না, এখানেই ফেলে যেতে হবে এখন।’

নিলেশের চিন্তিত মুখ দেখে ডিংডং বলল, ‘আমি দুঃখিত মানে সরি।’

ডাব নিয়ে কী করবে ভাবছে নিলেশ, ভাবছে ডিংডং। দুজনেই ভাবছে, একটা উপায় তো বের করতে হবে। নিলেশ ডাব গাছের নিচে বসে পড়লো। চিবুকে তর্জনি ঠেকিয়ে চুপচাপ একদিকে তাকিয়ে ভাবছে। হঠাৎ করে কেউ দেখলে ভাববে—কী এক চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে, ধ্যানমগ্ন সন্ন্যাসী! কিংবা বিজ্ঞানী-টিজ্ঞানী হবে কেউ একজন! নিলেশের মনে ঐসব চিন্তা নেই, ও শুধু ভাবছে ডাবের কী ব্যবস্থা হবে? ডাবের জন্য মায়ের কাছে মিথ্যে বলতে পারবে না, আবার বন্ধুকেও ছাড়তে পারবে না।

ডিংডং-ও এইসব ভাবছিল। হঠাৎ লাফিয়ে ওঠে বলে, ‘বন্ধু এক কাজ করো, ডাব খেয়ে ফেল।’

‘একা একা তো খেতে পারবো না ডং। তুমি তো ডাব খাবে না, আমি তোমাকে রেখে কি করে খাই।’

ডিংডং একটু হেসে, একটু কেশে বলল, ‘ঠিক আছে খেয়ে দেখি, কী হয়!’

‘ডাব খাবো যে কাটবো কি ভাবে।’ বলল নিলেশ।

ডিংডং দৌড়ে বাড়ির ভেতরে গিয়ে ছুরি নিয়ে এলো। ডাব কেটে দুজনে খেয়ে ফেলল। ডাব খেতেই ডিংডং-এর পেটের মধ্যে গুড়গুড় শুরু হলো। পেট চেপে শুয়ে পড়লো ডিংডং। ওকে শুতে দেখেই কাছে এলো নিলেশ।

মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল, ‘কী হলো, কী হলো, তুমি এভাবে শুয়ে পরলে কেন? শরীরের মধ্যে কোনো অসুবিধা হচ্ছে।’

‘হ্যাঁ। মনে হচ্ছে একটি নদী ঢুকে গেছে আমার পেটের মধ্যে। স্রোতের মতো টান দিচ্ছে বুঝতে পারছি। নদীজলের কলকল শব্দ শুনতে পাচ্ছি।’

নিলেশ ওর কথায় পেটে কান লাগিয়ে শুনতে চেষ্টা করে, কিন্তু কিছুই শুনতে পায় না। ডিংডং লাফিয়ে বেড়াচ্ছে ঘোড়ার মতো, লাফানোর সঙ্গে সঙ্গে মুখ দিয়ে গলগল করে পানি বের হয়ে গেল। ডিংডং যতো লাফায় ততোই পানি বের হতে থাকে ওর পেট থেকে। লাফিয়ে লাফিয়ে একসময় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে ডাব গাছের তলে।

কিছুক্ষণ দম নিয়ে জোড় হাত করে ডাব গাছকে লক্ষ করে বলে, ‘ডাব গাছ, ডাব গাছ ক্ষমা করো, মাফ করো আমাকে; আমি আর তোমাকে না-বলে তোমার শাখা থেকে ডাব পাড়বো না, খাবোও না। আমাকে ক্ষমা করো।’

কথা বলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে ডিংডং। চুপচাপ ওর ভাবগতিক দেখছে নিলেশ। একটু পরে নিলেশ দেখলো, আবার ডং কথা বলছে।

ডং বলছে, ‘ডাব গাছ আর একটি কথা তোমাকে জানিয়ে রাখি, আমি শুধু তোমার শাখা থেকে নয়, কোনো বৃক্ষ থেকেই কোনো ফুল-পাতা-ফল ছিঁড়বো না কখনো। ডাব গাছ, ডাব গাছ আমায় ক্ষমা করো।’

কথা শেষ করে উঠে বসলো ডং।

নিলেশ অবাক কণ্ঠে বলে, ‘ডং তুমি এমন কথা বলছো কেন? আর তুমি কি বৃক্ষ মানে জানো?’

‘বৃক্ষ মানে গাছ, আমি জানি।’ নিলেশের প্রশ্নের উত্তরে বলে ডং। তারপর বলে, ‘আমি এটাও জানি, গাছেরও প্রাণ আছে। আর এই কথা স্যার জগদীশ চন্দ্র বলেছেন। স্যার জগদীশ চন্দ্র একজন বিজ্ঞানী।’

ওর কথা শুনে হাততালি দিলো নিলেশ। বলল, ‘বাহ্!’

নিলেশের বাহ্ কথাটি শুনে ককিয়ে ওঠে ডং। বলে, ‘না, না তুমি এ-কথা বলো না বন্ধু, আমি জানি ডাব খাওয়ার জিনিস, সবাই খায়, এটাও ঠিক আছে। কিন্তু আমি না বলে ব্যথা দিয়েছি গাছকে, গাছের কাছে অনুমতি নিয়ে ডাব পাড়তে হতো। এই কাজ করা ঠিক হয়নি আমার!’

ডিংডং-এর কথা খুব মনে ধরে নিলেশের, নিলেশও জানে মাটিরও প্রাণ আছে। মাটির যদি প্রাণ না থাকতো, তাহলে ফসল ফলে কীভাবে। কিন্তু যখন বন্যা হয়, তখন মানুষের সঙ্গে সঙ্গে মাটিরও কষ্ট হয় নিশ্চয়! আর শুধু বন্যাতেই নয়, খরাতে নিশ্চয় কষ্ট হয় মাটির! তৃষ্ণার্ত মানুষের কষ্টের মতো মাটিরও তখন পিপাসা পায়! তৃষ্ণার্ত মানুষের পিপাসায় বুকের মধ্যে আইঢাই করে। মানুষের মনে হয়—এই বুঝি বুক ফেটে যাচ্ছে, তেমনি খরাতে মাটির বুক ফেটে যায়, তখন পানি দিলে চোঁ চোঁ শব্দে পানি শুকিয়ে যায়! মানুষ আর এই পৃথিবীর মাটি-ফুল-লতা-পাতা-ফল—সকলের প্রাণ আছে! এই কথাগুলো ভাবায় নিলেশকে।

ডং-ও ওর সঙ্গে একমত। ‘ঠিক বলেছ বন্ধু, এই প্রকৃতির সকলেরই প্রাণ আছে, ওরাও পিপাসিত হয়, ওরা পীড়িত হয়, ওরাও ব্যথা পায়।’

(চলবে)

…………………

পড়ুন

কবিতা

আফরোজা অদিতির পাঁচটি কবিতা

গল্প

রাত ভোর হতে আর কত দেরি

শিশুতোষ উপন্যাস

নিলেশ ও ছোট্ট ভূত : পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫, পর্ব ৬

মুক্তগদ্য

অর্থ এক বিলাসী প্রেমিক

ভ্রমণ

গোকুল মেধ বা বেহুলার বাসরঘর

অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা

অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা – ২য় পর্ব

দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি

দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি – ২য় পর্ব

About The Author

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...