শিশুতোষ উপন্যাস, ধারাবাহিক—পর্ব ৯
নিলেশ ও ছোট্ট ভূত
আফরোজা অদিতি
পরদিন সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে গাড়ি ছাড়ে। এবার সঙ্গে অভীক। মাইক্রোবাস চলছে। জানালার পাশে বসেছে নিলেশ পাশে অভীক। অভীক এক মনে বাইরে তাকিয়ে আছে। ওর মনের মধ্যে নানান রকম চিন্তা।
অভীক ঢাকায় গেলে ওর বাসা চিনতে পারবে তো? ওর বাবা-মাকে চিনতে পারবে। নানান রকম দোটানায় চলছে ওর মনের ওঠানামা।
মাইক্রোবাস ছুটে চলেছে। রাস্তার দু’পাশে সবুজ গাছ-গাছালি সরে সরে যাচ্ছে, এসি মাইক্রো! মাইক্রোবাসের জানালাতে ঝিরিঝিরি বাতাস লাগছে। গাড়িতে এসি আছে তাই জানালা খোলা যাচ্ছে না।
নিলেশ মাকে বলে, ‘মা একটুক্ষণ জানালা খুলে দেই।’ মা রাজি নয়। ‘বাবার অসুবিধা হবে। তোমার বাবা গরম সহ্য করতে পারেন না, রাস্তার ধুলাতে এলার্জি আছে।’
নিলেশ ভুলেই গিয়েছিল বাবার অসুবিধার কথা। মাকে বলল, ‘সরি মা।’ ওরা কাঁচের ভেতর দিয়েই দেখতে দেখতে গেল। দেখলো কতো পাখি, কোনটা গাছে, কোনটা বিদ্যুতের তারে বসে আছে, দেখতে ভালো লাগছে। শাপলা দেখলো, দেখলো কচুরিপানা, ভালো লাগলো নিলেশের। ওর প্রকৃতি দেখতে ভালো লাগে সবসময়। প্রকৃতির সঙ্গে মিলে যেতে ইচ্ছে করে ওর!
নিলেশের সঙ্গে যাওয়ার ইচ্ছাতে মাইক্রোতে যাওয়া ডিংডং-এর; ডিংডং তো ইচ্ছা করলে উড়ে যেতেই পারে। আর উড়ে গেলে এই গাড়ির আগেই পৌঁছুতে পারবে।
ডিংডং অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে এখন বসার একটুখানি জায়গা খুঁজছে। এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখতে দেখতে পেয়েও গেল একটুখানি জায়গা, নিলেশ আর অভীকের মাঝখানে সিটের উপরে। ও গিয়ে দুজনের মাঝখানে বসে ঝুলিয়ে দিলো পা।
গ্রাম থেকে অনেক দূরের পথ ঢাকা। প্রকৃতি দেখতে দেখতে এলো নিলেশ। ওর খুব ভালো লাগছে এই পথ চলা। ডিংডং কথা বলছে, কিন্তু কথা বলতে পারছে না নিলেশ। কথা বললে ছেঁকে ধরবে সকলে। ডং-এর কথা বলতে পারবে না, তাই হুঁ হাঁ করে যাচ্ছে। কখনো-বা মাথা ঝাঁকিয়ে যাচ্ছে কখনো হাতের ইশারা।
এর মধ্যে ওরা থামলো রাস্তায় হাত-মুখ ধোয়া, খাবার আর ফ্রেস হওয়ার জন্য। ডিংডং বলল, ‘খিদে পেয়েছে।’ ও তো কলা ছাড়া কিছু খেতে চায় না, পারেও না। আজ নিলেশ বেমালুম ভুলে গেছে কলার কথা, আনেনি।
গাড়ি থেকে নেমে কলার খোঁজ করলো, কিন্তু কোথাও পেলো না কলা। পাশে ডংকেও খুঁজে পেলো না। চারদিকে খুঁজছে নিলেশ। এক সময় দেখে কলা খাচ্ছে ডং। কোথায় কলা পেলো, জিজ্ঞেস করলেও জবাব দিলো না ডং। নিলেশ বুঝতে পারলো রাগ হয়েছে ওর।
তবুও নিলেশ বলল, ‘আমার ভুল হয়েছে ডং, ঠিক আছে রাগ করো না, কয়টা কলা নিয়েছ, টাকা রেখে এসো।’ ডং-এর হাতে চারটে কলাম দাম দিয়ে বলল নিলেশ।
ওখান থেকে আবার রওয়ানা হলো ওদের গাড়ি। ঢাকাতে ঢুকতেই ঢুকে গেল যানজটের মধ্যে, এই গাড়ির মধ্যে অকারণ বসে থাকতে ভালো লাগে না নিলেশের। নিলেশের মায়েরও রাগ হয়, বিরক্তি লাগে। কিন্তু কিছুই করার থাকে না।
যানজট তো আছে, এর পরে আছে অ্যাকসিডেন্টের ভয়। কতো মানুষ যে মারা যাচ্ছে এই গাড়ি চাপা পড়ে, গাড়ির ধাক্কায়, গাড়ি উল্টে। মা খুব ভয় পায় হাইওয়ের গাড়ি যাত্রাতে। তবুও যেতে হয় মাঝেমধ্যে!
যানজট ঠেলেঠুলে রাত নয়টার দিকে বাড়ি পৌঁছালো ওরা। আজ তো আর অভীকের বাড়ি খোঁজা যাবে না। ডিংডং বলল যাবে, কিন্তু বারণ করলো নিলেশ। ডিংডং রাতের গভীরে গিয়ে খুঁজে আসলো। বাসাবো থানার কাছে বাড়ি। অভীকের মন পড়ে ফেলেছে ডং। ওর মনের অজানা সবকিছু জেনে নিয়েছে ও।
অভীকের বাড়িতে গিয়ে দেখলো অভীকের মা কাঁদছে। আর ওর বোন মাকে স্বান্ত্বনা দিচ্ছে। অভীকের মায়ের কান্নায় ডিংডং-এর নিজের মায়ের কথা মনে পড়ে গেল ।
ওর মা যে খুব নরম মনের ভূত। ওকে না-পেয়ে খুব কাঁদছে হয়তো মা! হয়তো কেন? মা কাঁদছেই তা জানে ডিংডং। পৃথিবীতে এসে মানুষের সঙ্গে থাকলে যে আর ওদের সঙ্গে থাকা যাবে না—এই শাসন, এই বারণ ভাঙতে হবে। ইচ্ছে তো হতেই পারে ওদের, শুধু কী মানুষের ক্ষতি করা, মানুষের মধ্য থেকে মানুষের জন্য ভালো কাজও তো করা যায়।
‘মানুষের ভালো করতে হবে’ এই কথা মা-বাবা আর সকল ভূতকে বুঝিয়ে বলতে হবে। কিন্তু নিলেশকে ছেড়ে তো যেতে ইচ্ছা করে না ওর। আর নিলেশকে কী নেওয়া যাবে ওদের ওখানে। আর নেওয়া গেলেও কি নিলেশ যেতে চাইবে। চাইবে না। আর চাইলেও তো ওর মা-বাবা, বাড়ির অন্য আত্মীয়-স্বজন তো যেতে দিবে না। যাক ঐ চিন্তা পরে করা যাবে। ডিংডং বাসা চিনে নিলেশের কাছে ফিরে এলো। নিলেশ ঘুমিয়ে আছে, না-হলে তো চিন্তা করতো।
পরদিন নিলেশ, নিলেশের চাচ্চু, অভীক বাসাবোর দিকে রওয়ানা হলো। সঙ্গে তো ডং আছেই। নিলেশকে আগেই সব বলে রেখেছিল ডিংডং। পথ চিনতে অসুবিধা হয়নি। তা ছাড়া থানার কাছকাছি এসে সব চিনতে পেরেছিল অভীক। ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে, ওর মায়ের কাছে সব ঘটনা বলে বাড়ি ফিরে এলো ওরা।
সবকিছু জানার জন্য নিলেশের মা-বাবা অপেক্ষা করছে। ওরা বাসায় ফিরে এলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন বাসার সবাই। নিলেশও ভাবলো এবারের ফাঁড়াটা অল্পের ওপর দিয়েই গিয়েছে তাই রক্ষা; না-হলে মায়ের কষ্ট দেখে আরো কষ্ট পেতে হতো নিলেশকে।
(চলবে)
…………………
পড়ুন
কবিতা
গল্প
শিশুতোষ উপন্যাস
নিলেশ ও ছোট্ট ভূত : পর্ব ১, পর্ব ২, পর্ব ৩, পর্ব ৪, পর্ব ৫, পর্ব ৬, পর্ব ৭, পর্ব ৮, পর্ব ৯
মুক্তগদ্য
ভ্রমণ
অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা – ২য় পর্ব
দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি
দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি – ২য় পর্ব
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
ইষ্টিমিষ্টি ছড়া
সুনীল শর্মাচার্যের ভারতীয় হালচাল
ছোট ছেলে বড় ছেলে