
নিহিত মর্মকথা
সুনীল শর্মাচার্য
নিহিত মর্মকথা
ঘরে বসে কেউ ভাবছে লকডাউনের
স্বপ্ন কিংবা যথাযথ ভবিত্যব্য
.
কেউ ভাবছে আগামী দিনে
চাকরি থাকবে কিনা? কেউ ভাবছে
ক্ষুধায় জোটাতে পারবে কিনা
এক মুঠো ভাত!
.
মাত্র একুশ দিন নয়, আরো কিছুদিন
তারপর হয়তো—
ভেঙে দেবে সমাজ কাঠামো
অর্থনীতি, কর্মসংস্থান…
.
২
বিশ্ব বলছে ‘চীনা ভাইরাস’
যা জন্ম চীনাদের হাতে :
.
এ এক মারণ অহঙ্কার,
এ এক বিভীষিকা, এ এক কালাপাহাড়—
ধ্বংস, ধ্বংস, মৃত্যু যার করুণ ইতিহাস!
.
প্রকৃতির কাছে মানুষ অসহায়!
.
৩
তুমি কি ভেবেছ কক্ষণো?—
একটা ক্ষুদ্র ভাইরাসও কি শক্তিশালী!
পৃথিবীর তামাম অহঙ্কারী কোটি কোটি মানুষ
কেমন মৃত্যু ভয়ে চুপসে, ঘরবন্দী…
.
বাইরে বৃক্ষলতা, পশুপাখি
তারাও সাহসী আজ…
.
বাতাস ঝিরিঝিরি বয়ে যায়
পৃথিবীর মায়ামমতা নিয়ে
পরম ব্রহ্ম-প্রাণ আইডাই…
.
বাঁচার মুক্তি খোঁজে পাখিদের উড়ানে
নীল আকাশ
ধ্বস্ত জীবন, ধ্বস্ত সমাজ,
শাসনযন্ত্র নয়-ছয়…
.
দূর থেকে রাতের নক্ষত্র হেসে ইশারা দেয়…
একা থাকা বড় ভালো—
তবু যেন ভালো নয়!
.
৪
এই মারীর সময়ে মাথা ঠাণ্ডা রাখি :
চুপচাপ থাকি।
আর খোলা চোখে বুঝে নিই সব—
.
টিভি খবরে যা ভুজুংভাজুং—
তাতে মাথা খারাপের অবস্থা!
কোন খবর যে সত্যি, আর কোন খবরটা ধাপ্পা!
.
যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের অনেক ক্ষমতা
দিনকে রাত, রাতকে দিন করে; কীসের ভরসা?
ভরসা একটাই নিজেকে দৃঢ় রাখো,
চোখ কান খোলা রাখো
.
চারদিকে ভীষণ তামাশা!
জীবন-মৃত্যু নিয়ে, মানুষকে নিয়ে দেখি বণিকের
.
ব্যবসা!
.
৫
চুপ করে থাকা যায় না। বাইরে বাড়ুক প্রলয়!
.
গাদাগাদি ভিড়ে যেতেই হয় : পেটের টানে, কাজ বাঁচাতে…
.
কাজ ছাড়া কেউ কি বাঁচে? হাতের কড়ি শূন্য…
.
মৃত্যুকে বুকে নিয়েই এই বাঁচা, এই যাত্রা, চলাচল
.
৬
চমকে উঠি :
বাতাসে মৃত্যুর ঘ্রাণ…!
.
চারদিকে
ছড়ি ঘোরায়
অব্যবস্থা…
.
বলে : নিজে
সাবধানে থাক!
.
আমার দায়
আমার কাঁধে,
তোমার দায়
তোমার কাঁধে!
.
সমাজ ভেঙে যায়…
.
সবার জন্য সবাই
কথাটা
অভিধান হারায়!
.
৭
স্পর্শহীন চলিফেরা
পথেঘাটে দেখা হলে
চোখে চোখে কথা
.
হাসিটা
মুখোশের আড়ালে
ঢাকা পড়ে—
.
দিনে দিনে
দূরত্ব বাড়ে
আচারে-ব্যবহারে
ঘরে ও বাইরে
.
সবকিছু হৃদয়হীন
মনে হয়
অদৃশ্য তাস খেলে
মহাজন…
.
তোমার আমার
সবকিছু
কেড়ে নেয়।
.
৮
করোনা, ডেঙ্গু
এক সাথে তাড়া করে
কলকাতা
দিশেহারা
.
তিলোত্তমা
গাঁজার কল্কেয়
ধোঁয়া ওড়ে…
.
পথেঘাটে যানজট
থিকথিকে ভিড়
জঞ্জালে বস্তিপাড়া…
.
কলকাতা
দিশেহারা
তবু তাকে নিয়ে
কত ছল…
.
কথার তুবড়ি ফোটে
উন্নয়ন কেঁদে ওঠে
রকমসকম দেখে
.
ফুটপাতে উলঙ্গ শিশু
চোখের জল মোছে
তামাশায়…
.
৯
এখন সমস্ত দলের লক্ষ্যই ক্ষমতা দখল
আদর্শ ঠিক না-হলে সবকিছুই অধিগ্রহণ;
বণিকতন্ত্র বা ধনতন্ত্র তাদের স্বার্থে এ দেশে
নেতার জন্ম হয়, আবার আন্দোলন গড়ে ওঠে
তারপর জনগণ বলির পাঁঠা, দিনগুনে যায়…
.
দলে দলে হিংসা বাড়ে, কি বীভৎস পরিণতি
আদর্শ নেই, দেশ সেবায় মধ্যযুগের গতিপ্রকৃতি
আশাহত মানুষ প্রতারিত এ দেশে, প্রতিনিয়তি…
.
পূজ্যপাদ, বিদগ্ধকুল আছেন যারা দেশে দেশে
তারাও দলদাস, কেবল ভুলভাল কথা বলে…
.
যস্মিন দেশে যদাচার, এক ধারা, নিয়মে চলে!
.
১০
চৌর্যবৃত্তি বড় বৃত্তি ভূ-ভারতে আজ!
তার চিত্র দেখি সর্বত্র গাছপালায়…
নেতাগণ সৎ পথে চলেন। সত্য কথা বলেন।
তারা মহান চোর চরণদাসের পথ অনুসরণ করেন।
তারা চুরি করেন আর নিজেদের নির্দোষ ভাবেন।
.
পা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত তারা সাচ্চা চোর।
কবুল করতে লজ্জা নেই যে, তারা মিথ্যা বলেন না!
চৌষট্টি কলার সেরা কলা চৌর্যবৃত্তি তারা করেন এবং
নিজেদের একজন কলাকার ভাবেন!
.
তারা চুরি করেন অভাবে নয়, অভ্যাসে। কিছুটা
লোভে…
চুরিও তো একটা ধর্ম। ধৃ-ধাতু থেকে এসেছে তারা
জানেন!
তাই ধর্মকে ধরে তারা বাঁচেন আর বাড়েন…
তারা তো মানেন : মহজন গতসঃ পন্থা
.
রাজনীতিও একটা কাজ। যার রন্ধে রন্ধে চলে এই ধারা…
কাজ কাজই হয়। কাজের ভালোমন্দ নেই—
স্বধর্মে মরণং শ্রেয় তা তারা জানেন স্বজ্ঞানে!
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য
গল্প
এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প: সুনীল শর্মাচার্য
আঁধার বদলায় : সুনীল শর্মাচার্য
প্রবন্ধ
কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য
মুক্তগদ্য
খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে
ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন
বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে
ভারতে চীনা দ্রব্য বয়কট : বিষয়টা হাল্কা ভাবলেও, সমস্যাটা কঠিন এবং আমরা
রাজনীতি বোঝো, অর্থনীতি বোঝো! বনাম ভারতের যুবসমাজ
ভারতে শুধু অমর্ত্য সেন নয়, বাঙালি সংস্কৃতি আক্রান্ত
ভারতের CAA NRC নিয়ে দু’চার কথা
ভারতের এবারের বাজেট আসলে অশ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধু কর্পোরেট কা
26 thoughts on “নিহিত মর্মকথা”