shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

বঙ্গবন্ধু : দর্শনগত চর্চার সংক্ষিপ্ত ভূমিকা – ২য় পর্ব

Bangabandhu
Bangabandhu

বঙ্গবন্ধু : দর্শনগত চর্চার সংক্ষিপ্ত ভূমিকা – ২য় পর্ব

প্রদীপ মিত্র

বঙ্গবন্ধু : দর্শনগত চর্চার সংক্ষিপ্ত ভূমিকা – ২য় পর্ব

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকচক্র যত ষড়যন্ত্রের ব্যূহরচনা করেছে; বঙ্গবন্ধু ঠিক ততোধিক বলিষ্ঠতার সঙ্গে শোষিতের পক্ষে দাঁড়িয়ে শোষিতের হাতে হাত রেখে অপূর্ব দক্ষতায় শোষকের ব্যূহে প্রবেশ করেছেন অবলীলায়।

বলা যায়, দুর্দান্ত সাহসে, সততার প্রখরতায়, বিশ্বাসের প্রবলতরঙ্গে শোষিতের কণ্ঠহার হয়ে তিনি শোষকের ব্যূহচক্র নাশ করে বের হয়ে এসেছেন, বড়বেশি বীরের কায়দায়। এই যে শত্রুব্যূহ ভেদের আশ্চর্যরকম অনুভব আর অনুভূতির মননচর্চার মাত্রায় ছুটে এসেছেন বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের নেতৃত্ব আর তার গণমাধ্যম।

এমন সাহস স্বয়ং অর্জুনপুত্র অভিমন্যুর হয়নি। এমনকি এজিদ হাতে প্রাণহারানো মা ফাতেমার সন্তান ইমাম হোসেনও অমনভাবেই কারবালার প্রান্তরে হয়ে ওঠেন বিষাদসিন্ধুর রক্ততপ্তঅশ্রু। বঙ্গবন্ধুর শত্রুব্যূহভেদের ঘটনা আমাকে প্রবলভাবে নাড়ায় এবং জাগায়।

প্রত্ন সাহিত্যের পাঠ অনুযায়ী, একমাত্র হনুমান শত্রুব্যূহ ভেদ করতেন। এ জন্য হনুমান মহাবীর। আমরাও একবাক্যে ‘বঙ্গবন্ধু-মহাবীর’ সম্বোধনে কাব্য রচনা করি। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘আগরতলা যড়যন্ত্র মামলা’ আর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানের কারাগারের শত্রুব্যূহ ভেদের অদমিত সৌন্দর্যশক্তি প্রত্নসাহিত্যের অনুবর্তী বললেই মান্য করা যায়। এ সময়ে, আন্দোলন পরিচালনায় মহাকবি কালিদাসের ‘মেঘদূতম’ কাব্যের পঙক্তিও নৈকট্য পায়।

তাই বলব, মেঘদূতম কাব্য যেমন দর্শন, বঙ্গবন্ধুও তেমন দর্শন। শত্রুর কারাগারে আবদ্ধ অবস্থায় যেসব চিরকুট এবং বিভিন্ন মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক নির্দেশনা এবং কারাগারে আবদ্ধ অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গে যেসব আলোচনা তিনি করতেন, তাতে করে মহাকবি কালিদাসের মেঘদূতম কাব্যস্তর একলয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই আমার অতিক্ষুদ্র অনুভব।

অনুভব, বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম ও আন্দোলন রচনার সময়ে মহাকবি কালিদাসের ‘প্রিয়াবিরহী প্রাণের আর্তি’ জাগানো ‘মেঘদূতম’ কাব্যপাঠের অনুভূতি প্রবল হয়। মেঘদূতম, কাব্য সম্পর্কে পূর্ববর্তী অনেক বিদগ্ধজন অনেক কথাই প্রাসঙ্গিকভাবেই আলোচনা করেছেন।

কিন্তু কেন জানি, আমার ক্ষুদ্র পাঠের অনুভবের ভেতর বিরাট আকারে আলো ফেলেছে মেঘদূতম কাব্যের বার্তা প্রেরণের ‘সুমধুর ভাষ’—যা একজন দেশপ্রেমী রাষ্ট্রনেতার পক্ষে কর্মীপরিচালনার উত্তমবাহন হয়।

বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর কর্মীগণ ছিলেন, বিশ্বস্ত ব্যাঘ্রগতিসম্পন্ন ছুটে চলা মেঘস্বরূপ। এ মেঘদল বাঙলার আনাচে-কানাচে কখনো ধীরপদে, কখনো-বা দীর্ঘপদক্ষেপে বিরহকাতর প্রেমিকের আর্তি প্রেমবঞ্চিত বিরহীপ্রেমিকার কাছে নিয়ে গেছেন পরম দায় ও দায়িত্ববোধের ঔজ্জ্বল্যতায়; একটানা তেরোশত আটাত্তরের অগ্রহায়ণ সংক্রান্তি পর্যন্ত;—এই বাঙলার তিস্তা-ধুন-করতোয়া; ফুলজোড়-আত্রাই-মহানন্দা-ধলেশ্বরী-পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-সোমেশ্বরী-গোমতী-ইছামতি-মধুমতী; ডাকাতিয়া-ধরলা-সুরমা-বলেশ্বরের জলপান করে এবং প্রবল বেগে করেছে সৃষ্টির জলদান।

এ-সময়ের জন-জল-কলরবে জেগে ওঠা কর্মী-সমর্থক নেতৃবৃন্দ হলেন—মেঘদূতম কাব্যের ছুটে চলা গর্জনশীল মেঘের সৌন্দর্যশক্তির-মহিমা। একই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বঙ্গবন্ধুর কারাগারে অন্তরীণ কালটিকে অভিহিত করা যায়, ‘মহাবোধী সাধকের মহাসমাধি।’

এ অনুভব গ্রহণ করে, বাংলার আধ্যাত্ম সাধকদের সিদ্ধি-সাধনার সুসিদ্ধ অধ্যায় উজ্জ্বল করছি; প্রতিষ্ঠিত সত্যও সুপ্রতিষ্ঠিত করছি। আমার পাঠ, ভারতমুক্তির আন্দোলনের সময়ে, প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর তাঁর আধ্যাত্ম আন্দোলন বেগবান করতে গিয়ে বারবার বলেছেন : ‘ফরিদপুর যাব, ফরিদপুরকে পৃথিবীর মধ্যে উজ্জ্বল করে তুলব।’

প্রভু জগদ্বন্ধুর ঐ-কথা অক্ষরে অক্ষরে প্রস্ফুটিত হয়েছে এবং সত্য সত্যই ফরিদপুরের জন্মমাটি থেকেই বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর অভ্যুদয় হয়েছে। এ পর্যায়ে, ধারণা করতে নেই তো মানা, আমাদের সংবিধানে যে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ স্তম্ভটি সংযোজিত হয়েছে; তা বাংলার আধ্যাত্ম ও মানবতাবাদী সাধকদের উচ্চতর সাধনার নির্মল নির্যাস।

.

এবার কথা হলো, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক পদক্ষেপ কী সর্বস্তরে সন্দেহ মুক্ত ছিল। এ-কথার উত্তর একটাই, নৈব নৈব চ। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া সংগঠনও বঙ্গবন্ধুর অনেক কার্যক্রমকে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখতেন। সমাজদেহে সন্দেহ একটি রোগ।

আর এ রোগের শিকড় উৎপাটনের বিধান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নৌকাডুবি’ গ্রন্থের পাঠ থেকে লাভ করা যায় এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের উপর নিঃসংশয় আস্থা রাখা যায়। নৌকা ডুবি গ্রন্থের পাঠ : ‘সন্দেহ অনেকেই করিতে পারে কিন্তু সংগ্রহ করিতে পারে হাজারে একজন।’

রবীন্দ্রনাথ সংগ্রহ করার প্রচেষ্টার মধ্যে প্রতিভার সন্ধান পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সত্তার প্রতিভার গুণেই তাঁর স্বদেশের হৃদয় থেকে সংগ্রহ করেছিলেন মাথা তুলে দাঁড়াবার মতন অমিততেজী ছাত্র-শিক্ষক-কৃষক-শ্রমিক-তরুণ।

এটিই প্রতিভার অনন্যগুণ বলে অভিমত ব্যক্ত করেন বিদগ্ধজন। প্রতিভা একহাতে অনেক কিছুই অস্বীকার করে, পরিত্যাগ করে এবং শক্তহাতে প্রত্যাহার করে পাপ-তাপ-জঞ্জাল, আর অন্য হাতে গ্রহণ করে অপার আনন্দের অমল মূল্যবোধ রচনার অমৃত আধার।

এ পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর স্পষ্ট এবং পরিস্কার চিন্তা : ‘অযোগ্য নেতৃত্ব, নীতিহীন নেতা ও কাপুরুষ রাজনীতিবিদদের সাথে কোনো দিন একসাথে হয়ে দেশের কাজে নামতে নেই। তাতে দেশ সেবার চেয়ে দেশের ও জনগণের সর্বনাশই বেশি হয়।’ [বঙ্গবন্ধুর বাণী]

এবার কথা হলো, সন্দেহ থেকে আসে দ্বন্দ্ব আর বিচ্ছেদ। দ্বন্দ্ব নিরসন করতে গেলেই সেখানে বিচ্ছেদ অনিবার্য রেখা হয়ে দেখা দেয়। ভারত ভাগ, অহেতুক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, উর্দু না বাংলা ভাষার আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, কাগমারী সম্মেলন, পাকিস্তানি শাসক চক্রের হাতে স্বদেশবাসীর আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়ন বৈষম্য উৎপাটনের যে দ্বন্দ্বের বিপুল স্তরগুলো আপনকার চিন্তার দ্বারা নিরসন করে অগ্রসর হয়েছেন তিনি। সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বস্থুতান্ত্রিক তত্ত্বের আলো উপলব্ধি করেছেন বঙ্গবন্ধু।

রবীন্দ্রনাথ বস্তুতান্ত্রিক তত্ত্বে বলেন : ‘যার আত্মার শক্তি এত প্রবল, যে জ্ঞান-অর্জনের জন্য সে প্রাণকে তুচ্ছ করে, যার কিছুতে ভয় নেই, সাংঘাতিক বাধাকে যে স্বীকার করে না, দুঃসহ কৃচ্ছসাধনে যাকে পরাভূত করতে পারে না—প্রাণপণ সাধনা এমন কিছুর জন্যে আর্থিক নয়, জীবিকার পক্ষে যা আবশ্যক নয়, বরঞ্চ বিপরীত—তাকে বলব বস্তুতান্ত্রিক।’

এসব আত্মক গুণ বঙ্গবন্ধুর ভেতর ছিল। বঙ্গবন্ধু বলেন : ‘যে মানুষ মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত, কেউ তাকে মারতে পারে না।’ জগতের পূর্বাপর ধর্ম-সমাজ এবং রাষ্ট্রবিপ্লবী সত্তার পাঠেও এমন মনোহর উচ্চারণ নির্মল বায়ুর মতন আমাদের সতত শুদ্ধ করে, ঋদ্ধ করে।

ব্রিট্রিশবিরোধী আন্দোলনসহ মহামতি ভ্লাদিমির লেনিন, মাও সেতুঙ, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, ভীমরাও রামজী আম্বেদকার প্রমুখের জীবনসাহিত্য-সংগ্রামী ইতিহাস তার সমুজ্জ্বল প্রমাণ।

বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক প্রজ্ঞার আলোকে বারবার অনুধাবন করেছেন, দ্বন্দ্ব নিরসন করতে গেলেই বিচ্ছেদ অনিবার্য় আকার ধারণ করবে, কখনো-বা তা অগ্নিময় হবে। এ প্রেক্ষিতেও বঙ্গবন্ধুর মননবোধ অনুধাবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গোরা’ গ্রন্থের পাঠ : ‘আপন যখন পর হয় তখন তাকে সম্পূর্ণ ত্যাগ করা ছাড়া অন্য গতি নাই।’

এই উচ্চারণ, সম্ভবত বঙ্গবন্ধু কবচ হিসেবে গ্রহণ করে মুক্তির পথে অগ্রসর হয়েছিলেন। এ মুহূর্তেও রবীন্দনাথের পাঠ পথ দেখায় : ‘বিচ্ছেদ যেখানে একান্ত প্রবল, সেখানে বিপ্লব না এসে পারে না—কি রাষ্ট্রতন্ত্রে, কি সমাজতন্ত্রে, কি ধর্মতন্ত্রে।’ [শান্তিনিকেতন : সামঞ্জস্য]

এ প্রেক্ষাপটেও দেখি বঙ্গবন্ধুর সম্পূরক প্রত্যয় : ‘আন্দোলন গাছের ফল নয়। আন্দোলন মুখ দিয়ে বললেই করা যায় না। আন্দেলনের জন্য জনমত সৃষ্টি করতে হয়। আন্দোলনের জন্য আদর্শ থাকতে হয়। আন্দেলনের জন্য নিঃস্বার্থ কর্মী থাকতে হয়। ত্যাগী মানুষ থাকা দরকার। সর্বোপরি জনগণের সংঘবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ সমর্থন থাকা দরকার।’ [বঙ্গবন্ধুর বাণী]

তাঁর বিপ্লবী চিন্তার স্তর আরো স্বচ্ছ [ও মিঞারা] : ‘গণ আন্দোলন ছাড়া, গণবিপ্লব হয় না।’ এভাবেই প্রখর দৃষ্টির আলো ফেলে ফেলে বাঙালি জাতির চিরকাঙ্ক্ষিত মুক্তির বিপ্লবীপথ রচনা, প্রতিষ্ঠা এবং পবিত্র করার ভূমি ও ভূমার গৌরব রচনা করেন বঙ্গবন্ধু।

.

মহৎ প্রত্ন-সাহিত্যের পাঠে বাঙ্ময় হয়ে আছে সুদর্শনচক্র। শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী নারায়ণ। তিনি শ্রীবিষ্ণু নামে সৃজিত এবং পূজিত। মাতৃদগ্ধ লাঞ্ছনামোচক গরুড় তার বাহন। দেশমাতৃকার মুক্তির তরে যারা প্রাণ-উৎসর্গ করেন, তারাই তো হতে পারেন শ্রীবিষ্ণুবাহন বিনতানন্দন গরুড়।

শ্রীবিষ্ণুর যথা ইচ্ছা গমনে, গরুড়ের উদ্যেম আমাকে চমকায় যেমন, চমকান বঙ্গবন্ধুর অমিততেজী পার্ষদবৃন্দ। এবার গরুড়ের পৃষ্ঠশোভিত দেবতা বিষ্ণুর হাতে যে সুদর্শনচক্র দেখি, এই সুদর্শনচক্রের ব্যবহার মহাভারত কাব্যে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণ উত্তোলন করেছিলেন, শ্রীচৈতন্য যুগেও সুদর্শনচক্র উত্তোলিত হয়েছিল। [চৈতন্যচরিতামৃত]

এর পরে আমাদের কালে, অনুভব করি, একই সুদর্শনচক্র (সাতই মার্চ, ১৯৭১) উত্তোলন করতে বাধ্য হলেন, পাকিস্তানের গণমানুষের নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুদর্শন চক্রের মতো তর্জনী উঁচানো শঙ্খনির্ঘোষ ধ্বনি : ‘এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম…। জয় বাংলা’—এই বার অমন মুহূর্ত থেকেই বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ল সুদর্শন চক্রের অপূর্ব দিব্যজ্যোতি রূপ।…

কে রোধে তার শক্তি? সুদর্শনচক্র উত্তোলন ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার মধ্যে বিপ্লবী অভ্যুদয় দেখলে, দেবতা এবং প্রত্নসাহিত্যের বিশ্বজনীন মহৎজ্ঞানের আভা অর্জন করা যায়। বঙ্গবন্ধুর হাতে বড়বেশি প্রস্ফুটিত এবং সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে; শ্রী চৈতন্যদেবের একটি শঙ্খনির্ঘোষ বাণী : ‘পৃথিবীতে আছে যত নগরাদি গ্রাম—সর্বত্র প্রচার করহ মোর নাম।’

পঙক্তির্গত ‘মোর’ শব্দে বৈষ্ণবগণ চৈতন্যদেবকেই বোঝেন; এর সর্ববিস্তারিক অভ্যুদয়িকশক্তি অনুধাবনের ভয়ঙ্কর সীমাবদ্ধতায় সংকীর্ণ অনেকেই। আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে মর্মে মর্মে অনুধাবন করি, ঐ বাণীবন্ধের ভেতর স্বাদেশিক চেতনার অসীমদীপ্তি।

আবার এও তো অনুভব করা যায়, এক রাষ্ট্রবিপ্লবীর প্রতি আরেক রাষ্ট্রবিপ্লবীর বিশ্বজনীন নির্দেশ। আমি প্রত্যয়ের সঙ্গে আরো পাঠ করি, জাতির পিতা প্রণীত পররাষ্ট্রনীতি আর বিশ্বচেতনার সঙ্গে বাংলাদেশের সংযুক্তি এবং ঋদ্ধসম্প্রীতি : ‘সকলের প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়।’ একই সঙ্গে শ্রীচৈতন্যদেবের কণ্ঠনিসৃত বাক্যটি উৎপাদন তত্ত্বের দিক থেকেও এক উন্নত রফতানিমুখীন জাতির প্রজ্ঞাপূর্ণ নয়নও হয়।

অতএব, রবীন্দ্রনাথের পাঠ অনুসরণ করে রবীন্দ্রনাথের বাক্যেই আমার অনুভবগত অতিদৈন্য অর্ঘ্য, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনে : ‘যার [বঙ্গবন্ধু] মধ্যে সমস্ত দ্বন্দ্বের অবসান হয়ে আছে তিনিই চরম সত্য। তিনিই [বঙ্গবন্ধু] বিশুদ্ধতম জ্যোতি, তিনিই নির্মলতম অন্ধকার।’ [শান্তিনিকেতন : প্রেম]

এ হলো আমার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত দর্শনগত চর্চার সংক্ষিপ্ত ভূমিকা।

(শেষ)

…………………

পড়ুন

কবিতা

ও ভাই : প্রদীপ মিত্র

প্রদীপ মিত্রের দুটি কবিতা

প্রদীপ মিত্রের হাওয়ার ঢেউ

মতামত

বঙ্গবন্ধু : দর্শনগত চর্চার সংক্ষিপ্ত ভূমিকা

বঙ্গবন্ধু : দর্শনগত চর্চার সংক্ষিপ্ত ভূমিকা – ২য় পর্ব

About The Author

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...