বারোটি কবিতা
সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের বারোটি কবিতা
তবু কেউই
সব কথা কি শেষ হয়ে গেল?
সব আশা, সব স্বপ্ন কি মুছে গেল?
.
দিন গড়িয়ে রাত এলো
রাত গড়িয়ে দিন এলো…
.
তবু কেউই জাগলো না!
.
এক রকম থাকে না
তোমার জেতার দিন শেষ
এবার আমাদের জেতার পালা…
.
এই ভাবেই আসে দিন
.
কোনো কিছু একরকম থাকে না!
.
শাশ্বত
একটা একটা করে খসে পড়ে পাতা…
.
এইভাবে গাছও কী একা?
.
ঋতু পরিবর্তন জানি,
হাওয়ার পরিবর্তন জানি,
.
এক রূপ, এক রঙ—চিরদিন থাকে না!
.
যন্ত্রণা
প্রতিদিন জানালা খুলে দেখি
একটা ভোর
একটা সন্ধ্যা
.
দেখতে দেখতে
আটান্ন বসন্ত পার…
.
নিজের কাছে
আমার কাছে
ফিরিয়ে আনে মন
ফিরিয়ে আনে যন্ত্রণা…
.
যন্ত্রণা কখনো কখনো
আমার কাছে
ঋণী মনে হয়…
.
ছেড়ে যাবে
এই সবকিছু ছেড়ে দাও
এই সবকিছু ছেড়ে দেখো
কি থাকে হাতে
আশেপাশে…
.
দেখতে দেখতে
সবকিছু
একদিন আমাকে
ছেড়ে যাবে!
.
একজন কবির কাছে
একজন কবির কাছে সাদা কাগজ তার যুদ্ধক্ষেত্র।
পেন হাতিয়ার। যুদ্ধ, নিজের মন ও চিন্তার সঙ্গে।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিটি মুহূর্ত!
.
চোখ কান খোলা রেখে মগজের সংঘর্ষে
তার বিস্ফোরণ!
.
বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে সমস্ত শরীর।
নিজেই ধ্বংস হয়ে, নিজেই সৃষ্টি হয়ে
সাদা কাগজে রোপণ করে শব্দ…
.
শব্দ প্রাণ পেয়ে অক্ষরে অক্ষরে ঝলসে ওঠে
.
তার পেন, তার বিজয়ের তরবারি!
.
কি জানি
কুটকাচালি করি :
যত দোষ নন্দ ঘোষ
চিরকাল দেখি!
.
আমার চারপাশে
বন্ধুরা—
মজা পেয়ে দেয় হাততালি!
.
দুঃখ-শোক দেখি :
পরচর্চা করি—
এটাই সংস্কার
বর্তমান রীতি!
.
কি জানি—
সবাই বিজ্ঞ…
বিবেকের ঘরে চাবি!
.
ক্রমশ বধির
ক্রমশ বধির হয়ে যাচ্ছি :
চারপাশে নিস্পন্দ হাওয়া
কারো তাপ-উত্তাপ নেই;
সময়টা বড় উজবুক!
.
হঠাৎ ঘুম ভেঙে কারা
প্রতিবাদ লিপি সই করে
খবরের কাগজে বিবৃতি দেয় :
তারপর ভুস্…
.
দেখে উসখুস; আমারও
কিছুই করার নেই;
মুরোদ আঁকিবুকি লিখি :
অপদার্থ শব্দপাখি
উড়ে যায়; ধরতে গিয়ে
বেসামাল আমি!
.
নির্নিমেষ লৌকিকতা
আমাকে পেয়েছে…
.
অন্ধকারে ডুবছে দেশ
ঘুম ভেঙে যায় মানুষের কান্নায়
চারদিকে ভয়াবহ পরিবেশ
মানুষ মারছে মানুষকে
ধর্ম, সম্প্রদায়, ঘৃণা, বাড়ায় উদ্বেগ
.
এ কোন ভারতবর্ষ?
এ কোন জন্মভূমি?
হিংসার আগুনে পুড়ে যায় মানবতা
হাহাকারে ডুবছে দেশ
.
অন্ধকার চারদিকে
চারিদিকে মানুষের কান্না,
চারদিকে মানুষের হাহাকার
অসহনীয়…
.
পথে যেতে যেতে
পথে যেতে যেতে
কখনো তোমার সঙ্গে
ঠোকাঠুকি হতে পারে
তাতে বিদ্যুৎ চমকাবে না
কিন্তু হৃদয় বজ্রাহত হতে পারে
.
পৃথিবীতে এমন অনেক কিছু আছে
যা পরস্পর ধাক্কা লাগলে
বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে পারে
কিন্তু তোমার আমার
কোনো প্রতিক্রিয়া নেই
.
চলমান প্লেটের ওপর
যেমন পৃথিবী ঘুরছে
তেমন তুমি ও আমি—
তাতে কখনো কখনো
বিদ্যুৎ চমকালেও
বজ্র-স্পর্শ নেই…
.
অথবা আছে
.
শাসনের ভার
বাজারে গেলে বুঝি কোথায় আগুন ধরেছে
এ আগুনে পুড়ে যায় মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, হা-ভাতে গরিব
জীবন যন্ত্রণার গল্প প্রতিদিন লিখি, ছিঁড়ি, ছুঁড়ে দিই দূরে…
.
বাজারে বাজারে রাজনীতির স্রোত, পাড় ভাঙে নদী, সমাজ
আমাদের পড়শিদের মধ্যে সম্পর্কের ভাঙন, দল,
উপদল
সন্দেহ আর ঘৃণা নিয়ে পাশাপাশি হাঁটি; স্বার্থ খুঁজি…
.
আমাদেরও দিন আসে, যদি সুযোগ পাই এক হাত!
.
বাজারে রাজনীতি, বাজারে স্বেচ্ছাচার, মূল্য নিয়ে লাভের কারবার—
আমাদের রক্ত চুষে নিতে যত আইন, শাসনের ভার…
.
অযোধ্যা পাহাড়ে
অনামিকা, হৃদয় অযোধ্যা পাহাড়ে যাবে—
সঙ্গে নেবে দুজনের শুকনো খাবার, জল
সঙ্গে নেবে কয়েক বোতল মদ, আর কিছু উত্তেজক বটিকা
আর নেশাবর্ধক মহুয়া হিসাবে নেবে কামসূত্র
.
অযোধ্যা পাহাড়ে তারা করবে পলাশ উৎসব
বুনো শুয়োর না মেরে তারা করবে শিকার পরব
মহুয়া মাদলে ভেসে যাবে তাদের মানবজনম
বনবাংলোর একটা ঘরে একখাটে থাকবে অনামিকা, হৃদয়!
.
রাত বাড়লে মানবধর্ম জাগবে স্বাভাবিক নিয়মে
একটি বাঘ আর একটি হরিণীর খেলায়
অথবা একটি বাঘিনী আর একটি হরিণের
বন-বিহার…
.
সাক্ষী থাকবে বনবাংলোর কেয়ার টেকার!
…………………
পড়ুন
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য
5 thoughts on “সুনীল শর্মাচার্যের বারোটি কবিতা”