shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

বাসব রায়ের চারটি কবিতা

Basob Roy
Basob Roy

চারটি কবিতা

বাসব রায়

বাসব রায়ের চারটি কবিতা

বিভক্তির মানচিত্র

এখন তুমি বহুধা বিভক্ত

অথচ আমরা জানি একমেবাদ্বিতীয়ম!

অখণ্ড হয়নি কোনোকিছুই

দ্বিধাগ্রস্ত আমরা শাখা-প্রশাখায় ভাগ হয়েছি

তুমি ইহকাল পরকাল সবকালেই নির্লিপ্ত৷

.

তোমাকে পাষাণরূপেই মানায় বেশ

দিশেহারা সময়ে নির্বোধ বিশ্বাসী আমরা তোমার পদতলে নিরাপত্তা খুঁজি—

.

গলদটা কোথায়!

আমাদের প্রার্থনা তো তোমারই শিখিয়ে দেয়া

নিরলস তোমাকে প্রাপ্তির প্রচেষ্টা আমাদের

তুমি অদৃশ্য বলে কিছুটা চাতুরি আমাদের আছে, যদিও সেটা যৎসামান্য—

তুমি সিরিয়াসলি নিয়ে নাও কখনো, আর বিপর্যয় এনে দাও নির্দ্বিধায়৷

.

আমাদের ইচ্ছাকৃত বাটপারিকে ধরে ফেলো যেভাবেই হোক

আমরা ভাবি অতোটা নজর নেই তোমার

তোমারও তো বয়েস হয়েছে—তাই না!

.

শান্তি বর্ষণের স্রষ্টা যদি তুমিই হও তাহলে

অশান্তির দায় আমাদের ওপর চাপাও কেনো!

আমাদেরও অনেক জিজ্ঞাসা আছে তোমার কাছে, জবাব দিতে হিমশিম খাবে তুমিও—

সবটাই অতো সহজ ভেবো না৷

.

আমরা আমাদের নিজেদেরই এখনো বিশ্বাস করতে পারিনি

আর তুমি ভাবছো তোমাকে নিয়েই পড়ে থাকব—অতোটা বোকা ভাবিও না কিন্তু!

বিভক্তির মানচিত্র থেকে সরে দাঁড়াও

ভক্তি যা-কিছু সব তোমারই জন্যে৷

.

জীবন জুয়াড়ি

আমরা আমাদের অস্তিত্বকে

ভাগ করি সন্তর্পণে

স্বকীয়তাকে বিসর্জন দিয়ে আত্মতৃপ্তি পাই

সুদূরপ্রসারী ঋণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি বুকে নিয়ে

নিজেকে বিলিয়ে দিই৷

.

নির্মোহের ভান করি

পরিষ্কার চোখকে অন্ধ করে ঘোলাপানিতে

হাতড়িয়ে বেড়াই

অর্জিত স্বাচ্ছন্দ্যকে কৌশলী বাতাবরণে ঢেকে অস্বীকার করি

বোকারা কাঁদে, আবার কষ্টও পায়৷

.

সহজাত প্রবৃত্তিগুলো একইরকম

একই স্বপ্ন

একটিই ভাষা

একই চেতনা—

আমরা শিশুর মতো ভাগ করে ফেলি

আবেগ নিয়ে খেলা আমাদের হাজার বছরের কৃষ্টি

তথাপি আমরা বিভক্ত সত্তাকে লালন করি৷

.

প্রকৃতিকেও সুবিধামতো নিজের করে ফেলেছি

হীনমন্যতার কাছে করেছি আত্মসমর্পণ

‘হ্যাঁ’ বলার একবার দরকার হলে

দশবার বলি

‘না’ বলার দরকার হলে পনেরবার বলি—

আমরা জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচবার পাঁয়তারা করি

প্রকৃতপক্ষে আমরাই জীবন-জুয়াড়ি৷

.

দ্বিধাহীন সত্তা

তোমার চোখে চোখ রেখে বুঝেছিলাম অনুভবের বারান্দায় একটু হলেও 

সাঁতার শিখেছি আমি

আবার অন্তরে অন্তর রেখে

স্পষ্ট উপলব্ধি করেছি কখনো

অস্পৃশ্য এ-ই আমি

পরিস্থিতির দ্যোতনায় ঝুলন্ত চাঁদে

তাই বুঝি মাঝে মাঝে গ্রহণ লাগে

কখনো ভোর হয়েও সকালের

দেখা মিলে না৷

.

সরল প্রেম ধরেছে ঋজু পথ

গ্রহ আর নক্ষত্রের খোঁজে হন্যে অন্তর মহাকাশে দেখেছে বিশাল

শূন্য সমুদ্রের অতল—

আমিও তোমাকেই দেখতে চেয়েছি

একেবারে মুখোমুখি

একদম চোখাচোখিতে

যদিও বিশাল এক পাহাড়

উভয়ের মাঝখানে নিষ্ঠুর দাঁড়িয়ে৷

.

অচলায়তন ভেঙে নিঃশ্বাস চলুক

জীবনের পথ ধরে হেঁটে

উপলব্ধির চৌকাঠ পেরিয়ে হোক সে মহামিলন অগোচরেই

তবুও

দ্বিধাহীন এক সত্তা আসুক মরুময় প্রান্তরে৷

.

অনুভূতির দরজায়

মনে বেজেছিল সুখভরা পরিণতির কমদামি গান আর কবিতা

ভদ্রপল্লীর সর্বাপেক্ষা উঁচু দালান ঘরটার কার্নিসে আমার বসবাস

বর্ষার মেঘ ছুঁয়ে দেখেছি আমি

গ্রীষ্মের দাবদাহে ঘেমেছি কতবার

বৃষ্টিচোখে আধভেজা নিজেকে দেখেছি অনেকবার

.

শরত এলে নদীর ধারে কাশবনে রেখে এসেছি চোখ

স্মিত জলস্রোতে ফেলেছি অজানা দীর্ঘশ্বাস

সূর্যডোবার শান্ত বেলাশেষে বেলাভূমি পেরিয়ে হারিয়ে যেতাম অযথাই

আবার ফিরে আসা সেই ভদ্রপল্লীর চিলেকোঠার নিঃসঙ্গ কাঙ্ক্ষিত ঘরটায়

.

হেমন্তের ঝলমলে আলোয় নিজের শরীরটাকে হঠাৎ নতুন তরুণ মনে হতো

যদিও বার্ধক্য আসতে তখনো প্রায় পঁচিশ বসন্ত বাকি

নবান্নের গান শুনতাম

পাষাণ অন্তরেও কান্নার আওয়াজ পেয়েছি গোপনে একা একা

.

শীতের শিশিরে উষ্ণতা খুঁজি প্রকৃতির আলোতে

স্তূপাকৃত বইগুলোয় ধুলো জমা হয়েছে বারবার অলস পাঠ্যাভাস কারণ ছিল

ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার সোনারঙ মর্মে মর্মে মেখেছি

.

বসন্তের দুয়ারে অতিথি হয়ে শিমুল দুপুরের অপেক্ষা করেছি

বিমূর্ত বিরহী মালকোশে ডুবেছি, আবার ভেসেছি হয়তো কখনো কখনো

অনুভবের শক্ত সারিন্দায় অন্তঃক্ষরণ হয়েছিল বেহুঁশ শিবরঞ্জনী

.

আকাশ ছোঁয়ার ইচ্ছে ছিল বটে

শুধু নীল ছুঁয়েছি বার কয়েক

মেঘবালিকার আঁচলে পাতাঝরার বেদনায় আমিও নীল হয়ে যেতাম

বোবা ভাবনারা তখন লুকিয়ে লুকিয়ে বেছে নেয় আত্মহননের পথ—

.

বেকার জীবন কার্নিস লজিং মাস্টারের নিষ্প্রভ চোখে মহাপ্রলয়ের ইশারা ছিল

ছিল বিবাগীর যন্ত্রণা

বাউলের গেরুয়ার গন্ধ শুঁকেছি হাজারবার

ঈশ্বরে বিশ্বাস ছিল কিনা মনে নেই

কিন্তু মানুষকে বিশ্বাস করেছি

মানুষকে ভালোবেসেছি৷

.

একদিন উঁচু দালানের অস্তিত্ব মাখা ঘরের মেয়াদ হলো শেষ

জীবন থেকে বোধকরি ছুটি নেয়ার পালা তখন

ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে মাটিতে পা রেখেছিলাম

সবুজের ডগায় তখন মুক্ত শিশিরের খেলা

খুব কাছেই দেবীর বোধন উল্লাস ঢাকের প্রতিটি আওয়াজ কনে নয়, শুধু মনে বেজেছিল৷

.

About The Author

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...