বাংলাদেশের স্পিন বোলিংয়ের পথিকৃৎ রাম চাঁদ গোয়ালা আজ শুক্রবার (১৯ জুন ২০২০) সকালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে।
বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৯ বছর বয়সে। বিদায় স্পিন জাদুকর রাম চাঁদ গোয়ালা।
ব্রেক থ্রু দরকার? নাকি প্রতিপক্ষকে চেপে ধরতে হবে? অধিনায়কের মাথায় চিন্তার ভাঁজ, ড্রেসিংরুম করছে ছঁটফট, সমর্থকদের উদ্বেগ!
ষাটের থেকে আশির দশকে এমন অস্থিরতায় একজন ছিলেন জাদুকর রাম চাঁদ গোয়ালা। যিনি ২২ গজে আসতেন, জয় করতেন, প্রতিপক্ষকে দুমড়েমুচড়ে দিতেন।
বল হাতে জাদুকরী কারুকার্যে দুশ্চিন্তার ভাঁজ সরিয়ে তৃপ্তির হাসি ফোটানো সেই জাদুকরের নাম রাম চাঁদ গোয়ালা।
খেলোয়াড়ি জীবনে অনেক রথী-মহারথী ব্যাটসম্যানকে ঘূর্ণি জাদুতে খাবি খাওয়ানো বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিন বোলিংয়ের পথিকৃৎ রাম চাঁদ গোয়ালা।
বাঁহাতি স্পিনার থেকে এক সময়ে তিনি পুরাদস্তুর চায়নাম্যান।
বল হাতে আর্মার, গুগলি করার পাশাপাশি নিজের উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে উইকেট থেকে বাড়তি বাউন্স আদায় করে নিতে পারদর্শী ছিলেন। তাতেই কাবু প্রতিপক্ষ।
সাফল্যের ভাণ্ডার
রাম চাঁদ গোয়ালার সাফল্যের ভাণ্ডার টইটুম্বুর। সেই ভাণ্ডারে আছে একই ওভারে ডি সিলভা ও আর্জুনা রানাতুঙ্গার উইকেট।
দেশের প্রথম বাঁহাতি স্পিনার ধুমকেতু হয়ে এসে ধ্রুবতারার জায়গা দখল করেছিলেন। রঙিন করেছেন ক্রিকেট ক্যানভাস।
জীবনের ক্যানভাস
ক্রিকেটের ক্যানভাস রঙিন করতে করতে জীবনের ক্যানভাস নিয়ে চিন্তা করা হয়নি তার। অর্থকড়ি করেননি। সাত পাকে বাঁধা পড়েননি।
ক্রিকেট ছাড়ার পর কোচিং নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন।
গত বছর দ্বিতীয় স্ট্রোকের পর থেকে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এর তিন বছর আগে আরো একবার স্ট্রোক করেছিলেন। বয়সের ভারে নুহ্য হয়ে হাঁটা-চলা করতে পারছিলেন না।
এ বছরের শুরুতে চোখে অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন। সাত দিন আগে চোখ উঠেছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বুকের ব্যথাটাও বেড়েছিল।
ডাক্তার বলেছিলেন হার্ট বড় হয়েছিল। সবশেষে আজ সকাল সাতটায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এ কিংবদন্তি।
শুরুর কথা
শুরুতে তিনি ছিলেন পেসার। লম্বা হওয়ার কারণে পেস বোলিংও ছিল আঁটশাঁট। কিন্তু কোচের পরামর্শে স্পিন করা শুরু করেন।
তিনি বলেন, আমার ক্লাবের নাম ছিল পন্ডিতপাড়া ক্লাব। ওখানে আমাদের স্যার ছিলেন ফখরুদ্দীন। উনি আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন স্পিনার হওয়ার।
বললেন, স্পিনার হলে আমার ভালো করার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। উনার অনুপ্রেরণাতেই আমার স্পিনার হিসেবে শুরু।
সাথে নিজের শক্তির জায়গা নিয়েও বলেছিলেন, আমার শক্তিশালী দিক ছিল- লেগ ব্রেক করতে করতে হঠাৎ আর্মার মেরে দিতাম। এটা ব্যাটসম্যানরা বুঝতে পারত না। এটা দিয়ে অনেক উইকেট পেয়েছি।
ব্যাটসম্যানদের সামনের দিকে আনা… বল ফিঙ্গারিং করে ওদেরকে টেনে আনার কাজটা আমার বোলিংয়ে আরেকটা বড় দিক। আমার আর্মার খেলতে পারত না বড় বড় ব্যাটসম্যানরাও।
ঢাকা লিগে ফেরা
ঢাকা লিগে তার প্রথম ক্লাব ছিল ভিক্টোরিয়া। সেটা ১৯৬২ সালে। পাঁচ বছর খেলার পর বাবার মৃত্যুর কারণে ময়মনসিংহে ফিরে যান।
এর পর আবার ঢাকা লিগে যোগ দেন পাঁচ বছর পর। টাউন ক্লাবে নাম লিখানোর পরের মৌসুমে তাকে দলে নেয় মোহামেডান।
আবাহনীতে শেখ কামালের ডাক
মতিঝিল পাড়ার ক্লাবটিতে তিন-চার বছর খেলার পর ১৯৭৮ সালে আবাহনীতে যোগ দেন। এর পর ১৫ বছর কাটিয়ে দেন আবাহনীর জার্সিতে। হয়ে যান আবাহনীর গোয়ালা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছেলে শেখ কামাল তাকে আবাহনীতে খেলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ১৯৭৪ সালে। কিন্তু রাম চাঁদ গোয়ালা সেবার আবাহনীতে যোগ দেননি।
তাই তো আফসোস ছিল তার, শেখ কামাল আমাকে আবাহনীতে যোগ দিতে দেখে যেতে পারেনি।
স্পিন জাদুকর রাম চাঁদ গোয়ালার পণ্ডিতপাড়া ক্লাবে ফেরা
১৯৯৩ সালে আবাহনী ছেড়ে নিজের পণ্ডিতপাড়া ক্লাবে ফিরে আসেন গোয়ালা। সেখানে তিন বছর খেলার পর অবসরে যান।
এর পর নিজের ক্লাবে কোচিং করানো শুরু করেন। গোয়ালার চোখে বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার ছিলেন সাকিব আল হাসান। আর সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
টি-টোয়েন্টিতে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় বাংলাদেশের
মাহমুদউল্লাহর বিদায়ী টেস্টে বাংলাদেশের বড় জয়
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ে নতুন ইতিহাস বাংলাদেশের