
এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প
সুনীল শর্মাচার্য
এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প
ওসি মদনবাবুর যেমন রঙ, তেমনি স্বাস্থ্য।
যাকে বলে—যেমন হাঁড়ি, তেমনি সরা। কলাগাছের মতো মসৃণ হাত পা। সব গোছগাছ সেরে এটাচিটা পাশে রেখে, লকাপের চাবিটা পকেটে পুরে গ্যাঁট হয়ে বসলেন চেয়ারে।
মদনবাবুর বয়স তিরিশ। সমাজবিরোধীদের যম। কিছু কাঁটা ঝোপ সাফ করার দূরন্ত প্রতিজ্ঞা তার মনে। চাইবাসা থেকে সদ্য এসেছেন। চার্জ নিয়েই কয়েক ঘণ্টা মশার কামড় খেয়ে কানামুন্নাকে ধরে লকআপে ভরেছেন। আরাম করে সিগারেট ধরিয়ে বয়স্ক সিপাই করিমকে জিজ্ঞাসা করলেন, এতদিন শয়তানটাকে ধরা হয়নি কেন?
ধরে তো কোনো ফায়দা নেই স্যার!
ছোটবাবু অযাচিত উপদেশ দিয়ে গেলেন, কাজটা ভালো করলেন না স্যার!
ছোটবাবু বের হতেই, ফোন এসে গেল—কড়া কণ্ঠস্বর : মুন্নাকে ছেড়ে দিন।
সে সমাজবিরোধী!
এ যুগে সমাজবিরোধী নয় কে? ছেড়ে দিন।
তার বিরুদ্ধে কয়েক ডজন নারী ধর্ষণের কেস।
ও মশায়, নারী তো ধর্ষণের জন্যেই। এ জগতে নারী ধর্ষণ করেনি কে?ছেড়ে দিন…
লাইন কাট, আবার সিগারেটে টান দিলেন। ধোঁয়া মুখের ভেতর, আবার ফোন—রীতিমতো কৈফিয়ৎ অপর প্রান্তে, আপনি কি বৌকে বিধবা করতে চান!
এই জন্যেই এখনো বিয়ে করিনি।
আপনার কি নিজের প্রাণের ভয় নেই?
প্রাণের ভয় নিয়ে পুলিশের চাকরি করা যায় না।
বাজে কথা ছেড়ে মুন্নাকে ছাড়ুন।
সে খুনি, মধুগোপালকে খুন করেছে। আমি তাকে ছাড়তে পারি না।
ফোনের ভেতর তীব্র চিৎকার—মধুগোপালকে খুন করে ঠিক করেছে। মধুগোপাল বেঁচে থাকলে
আমাদের পার্টি abolished হয়ে যেত মশায়, ছেড়ে দিন।
ফোন কেটে দিলেন।
সিগারেটটা তো আপনা-আপনি পুড়ছে, প্রায় বারো আনা শেষ, টুকরোটা আবার ঠোঁটে ঠেকালেন;
ছোটবাবু এসে উপদেশ দিলেন—
কেন ঝামেলা বাড়াচ্ছেন স্যার, ছেড়ে দিন! দেশের কি হাল দেখছেন তো…!
আপনার মতো পুলিশের জন্যেই দেশের আজ এই হাল!
মুন্নাকে, ছাড়তেই হবে স্যার!
আমি যাকে লকআপে ভরি, তাকে আর বেরোতে দিই না, ছোটবাবু!
আচ্ছা দেখা যাবে।
আবার ফোন। এবার ধমকাধমকি নয়, এবার ধন্যবাদ—স্যার, আপনি নিঃসন্দেহে বাপের বেটা। আমরা পাওয়ারে এলেই…
ফোন কেটে দিলেন। গা এলিয়ে দিলেন। ধোঁয়া উঠছে। সিগারেটের আর সাদা অংশ নেই। আবার ফোন। এবার গালাগালি বা ধন্যবাদ নয়।
সরকারি নির্দেশ :
আপনাকে সুন্দরবন বদলি করা হলো। চার্জ বুঝিয়ে দিন এখনই।
এটাচি হাতে উঠে দাঁড়ালেন মদনবাবু। চাবিটা ছোটবাবুর হাতে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন থানা ছেড়ে।
ছোটবাবু তালা খুলে অবাক—মুন্না উঠছে না, পড়ে আছে মেঝেতে!
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
গল্প
এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প: সুনীল শর্মাচার্য
প্রবন্ধ
কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য
মুক্তগদ্য
খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে
ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন
18 thoughts on “এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প”