shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

ভাবনা যত আনমনে

Retail talk all around
How many problems I am in
খুচরো কথা চারপাশে

ভাবনা যত আনমনে

সুনীল শর্মাচার্য

ভাবনা যত আনমনে

মহাভারত তা হলে

মহাভারত নিবিড়ভাবে পাঠ করে ইহাই বুঝিলাম, জারজ সন্তানদের এক কাহিনি এই মহাভারত, বললেই ল্যাঠা চুকে যেত; তা নয়, এটা প্রতিশোধের এক মর্মন্তুদ কাহিনি। শকুনি, ভীষ্ম, আর শ্রীকৃষ্ণ। এক একজনের এক এক লক্ষ্য হলেও, কার্যত, তা দাঁড়িয়েছে, কুরুবংশ ধ্বংসের কাহিনি। সকল উত্থানের পতন অবধারিত।

এটা কাহিনির মর্মমূল আলো করে থাকলেও, কাহিনিকারের ইশারা, বোধ হয়, অন্যদিকে। সেটা কোনদিকে? নারী বহুভোগ্যা বা নারী তার পছন্দের পুরুষের সঙ্গে সহবাস করার ইজাজত থাকলেও, তার রাশ ক্রমে আলগা হয়ে যাচ্ছিল না? যদি না যেত, তাহলে স্ত্রীকে জুয়া খেলায় বাজি রাখার দৃশ্য রচনা করা হতো না মহাভারতে?

আসলে, মহাভারতের গল্পগুলি আমাদের অন্যদিকে নিয়ে যায়। যেমন—কুন্তী ভোজরাজকন্যা। মানচিত্র অনুসারে, এই ভোজরাজ্যটি বিহারে। দুর্বাসা কর্তৃক কুমারী বয়সেই গর্ভবতী হলেন কুন্তী। তার সন্তান তিনি ভাসিয়ে দিলেন গঙ্গায়। তার পর তা ভাসতে ভাসতে হস্তিনাপুরে মানে দিল্লির কাছে গিয়ে পৌঁছল।

প্রশ্ন হলো, গঙ্গার জল কি উজানবাহী? স্বাভাবিক কারণেই, ভেসে যাওয়ার গল্পটি অতিকল্পিত। তাহলে কি ঘটেছিল আসলে?

দুর্বাসার তেজ সূর্যের মতো। দুর্বাসার আর এক নাম সূর্যও। তারই সন্তান ধারণ করেছিলেন কুন্তী, আর এই তথ্য গুপ্তচর মারফত পেয়েছিলেন ভীষ্মদেব। তিনিই তার লোক দিয়ে কুন্তীর সন্তানকে হস্তিনাপুর আনিয়েছিলেন। তার রথচালক, অধিরথের উপর ভার দিয়েছিলেন এই নবজাতকের পালনপোষণের। অধিরথপত্নী রাধা এই সন্তানকে পালন করেছিলেন বলে তার নাম রাখা হয় রাধেয়।

ভীষ্মদেব এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি পাণ্ডুর জন্য বউ হিসেবে আনলেন ঐ কুন্তীকেই! কেন? কেন তিনি এটা করলেন? পাণ্ডু নপুংসক ছিল, জেনেও, কেন তার বিয়ে দিলেন কুন্তীর সঙ্গে? কেন তিনি কুন্তীকে এগিয়ে দিলেন বিদুরের সঙ্গে সহবাস করতে?

বিদুরের আর এক নাম ধর্ম। কে না জানে, যুধিষ্ঠির ধর্মপুত্র! মানে বিদুরপুত্র! মহাভারত তাহলে কি ভীষ্মদেবেরও প্রতিহিংসার এক দর্পণ মাত্র?

.

পরকীয়া নিয়ে

পরকীয়া নিয়ে ভাবছিলাম। পরকীয়া আসলে বাংলায় বৈষ্ণব কবিদের অবদান। রামায়ণ বা মহাভারতে, পরকীয়া খুব একটা দেখা যায় না। বরং ধর্ষণ আছে। তুলসীর ধর্ষণ করেছিলেন স্বয়ং বিষ্ণু, যাকে ঈশ্বর বলে বর্ণনা করা হয়েছে পুরাণে।

রামায়ণে অহল্যা ও ইন্দ্রের সঙ্গমদৃশ্য দেখি। এটাকে কাহিনিকার ধর্ষণ বলে চালাতে চাইলেও, তা ধর্ষণ নয়। ধর্ষণে নারী ও পুরুষ সহমত হয়ে সঙ্গম করে না, কিন্তু অহল্যা, এই কাহিনিতে, ইন্দ্রকে তার স্বামী ভেবে মিলিত হয়েছেন এবং পূর্ণ তৃপ্তিও পেয়েছেন।

একে কি করে ধর্ষণ বলা হবে? বরং, পরকীয়ার লক্ষণ, সামান্য হলেও এখানে রয়েছে। অহল্যার স্বামী কুটিরে এসে, অহল্যার সঙ্গে মিলিত হতে চাইলে অহল্যা অবাক হয়েছিলেন, এই ভেবে, দশ মিনিট আগে সঙ্গম করে গৌতমরূপী ইন্দ্র চলে গেলেন!

রতিচিহ্ন তার শরীরের সর্বত্র। আবার তিনি মিলিত হবেন? এখানেই কাহিনিকার আসল ঘটনা আড়াল করেছেন। তপস্যা থেকে এসেই কোনো ঋষি প্রথমেই কি স্ত্রীসঙ্গম করবেন? কাজ থেকে ফিরেই কোনো পুরুষ বউ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিছানায়? হাতমুখও ধোয় না!

তলিয়ে দেখলে, দেখবেন, গৌতমমুনি ধরে ফেলেছিলেন স্ত্রীর ব্যভিচারিতা। ফলে, অভিশাপ! না কি খুন? অহল্যার পাথর হওয়া তো সেদিকেই ইশারা করে। পরকীয়ার লক্ষণ আছে, তবু একে পরকীয়া বলা যাবে না। পরকীয়ার কনসেপ্ট তখন ছিল না। এটা বৈষ্ণব কবিদেরই কনসেপ্ট!

.

গোমাংস বনাম হিন্দুরা

খাদ্যখানা, পোশাক দিয়ে কি ধর্ম বিচার হয়? কক্ষণো না! প্রকৃতির জল-হাওয়া, ভূমি-চরিত্রে যে যে খাবার সহজে পাওয়া যায়, বা যে যে খাবার সহজে প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করতে পারে, সেই সেই খাবারে মানুষ অভ্যস্ত হয়। প্রকৃতির শিক্ষা এটা। তবু ধর্মগুরুরা বিধান দিয়ে ধর্ম থেকে ধর্ম, মানুষ থেকে মানুষকে আলাদা করে!

এবার ধরা যাক, গোমাংস বর্তমান হিন্দুরা খায় না। নাম শুনলেও নাকি পাপ! অথচ দেখছি—ভবভূতি তার উত্তররামচরিত নাটকের একটি পর্বে লিখেছেন, শ্রীরামচন্দ্রের কুলগুরু বশিষ্ট মনি বাল্মিকীর বাড়িতে বেড়াতে আসবেন। তাঁকে আপ্যায়ন করার জন্য বাল্মিকী নধরকান্তি গরু কেটেছেন। উপযুক্ত মসলা সহকারে সেই গরুর মাংস রান্না করছেন।

ভবভূতির আরেকটি বিখ্যাত নাটকের নাম মহাবীরচরিত। সেখানে একটি পর্বে লিখেছেন, বশিষ্ট মনির বাড়িতে বিশ্বামিত্র, জনক, জামদগ্ন্যসহ বেশ কয়েকজন বিখ্যাত মনি-ঋষি বেড়াতে এসেছেন। তাদের আপ্যায়নের জন্য একটি গরু কাটা হয়েছে।

এইসব অতিথিকে রান্নাঘরে ডেকে নিয়ে বশিষ্ট দেখাচ্ছেন, গরুর মাংস রান্না হচ্ছে গাওয়া ঘি দিয়ে। একটু পরেই ঠাকুরকে ভোগ দিয়ে তাঁদেরকে খেতে বসিয়ে দেওয়া হবে।

আবার মনুসংহিতায় (৫/১৮) বলা হয়েছে—গোমাংসসহ সমস্ত প্রকারের মাংসই খাওয়া যেতে পারে। কারণ একই ব্রহ্মা খাদ্য ও খাদক, সবই সৃষ্টি করেছেন। ভয় দেখিয়েছেন, যজ্ঞ করার সময় ব্রাহ্মণরা ভালো ভালো মাংস না-খেলে পরবর্তী একুশ জন্মে যজ্ঞে বলির পশু হয়ে জন্মাতে হবে(৫/৩৫)।

পাণিনিও (৩/৪/৭৩) ‘গোঘ্ন’ শব্দটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিলেন, বাড়িতে রাজা, ব্রাহ্মণ, গুরুদেব, পুরোহিত, অথবা গুরুগৃহ থেকে পুত্র সন্তান ঘরে ফিরে এলে আনন্দের প্রকাশ হিসাবে ষণ্ড অথবা বন্ধ্যা গরু কেটে মাংস রান্না করা হতো। শতপথ (৩/৪/১২) এবং ঐতরেয় ব্রাম্মণেও (১/৩/৪) একই কথা ব্যক্ত করা হয়েছে।

আপস্তম্ব ধর্মসূত্র (১/৩/১০) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অতিথি আপ্যায়নে, পিতৃশ্রাদ্ধে এবং বিবাহের অনুষ্ঠান উপলক্ষে গরু কেটে মাংস রান্না করে খাওয়াতে হবে; (১৫/১৪/২৯) বলা হয়েছে, ‘গরু এবং ষাঁড় পবিত্র বলেই এদের খাওয়া যায়।’

আপস্তম্ব (২/৭/১৬-২৬) এবং পরাশর গৃহ্যসূত্র (৩/১০/৪১-৪৯) মতে শ্রাদ্ধে অতিথিদের গরু বা ষাঁড় কেটে মাংস রান্না করে খাওয়াতে হবে।

বশিষ্ঠ-সূত্রে (১১/৩৪) আবার বলা হয়েছে, এরকম অনুষ্ঠানে কোনো সদ ব্রাহ্মণ অতিথি মাংস খেতে অস্বীকার করলে অনন্তকাল ধরে নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে।

খাদির (৪/২/১৭) ও গোভিল সূত্র (৪/৭/২৭/৫৪) অনুযায়ী নতুন গৃহ নির্মাণ করার সময় গৃহস্বামীকে বাস্তুদেবতার কাছে একটি কালো গাভী বলি দিতে হবে।

ঋগবেদ (১০/৮৫/১৩-১৪) বলা হয়েছে—মাঘ মাসে বিবাহ অনুষ্ঠানে ষাঁড় কেটে রান্না করা হতো। দেবরাজ ইন্দ্র গরুর মাংস ভোজনে খুবই পটু ছিলেন।

মহাভারতের বনপর্বে দেখা যাচ্ছে, সেকালে গরু রলি দিতেন বিশিষ্ট ব্রাহ্মণগণ। একবার অগস্ত মুনি রাজা নহুশের বাড়ি বেড়াতে এসেছেন। তার জন্য গরুর মাংস রান্না হয়নি। অগস্ত মুনি বেজায় খেপে গেলেন রাজা নহুশের উপর। বললেন, গরুর বলি দাও।

রাজা রাজি হলেন না। একজন ব্রাহ্মণ তখন গরু বলি দিতে উদ্যত হলেন। রাজা তাকে বলি দিতে নিষেধ করলেন। সেটা দেখে অগস্ত মুনি রেগে রাজাকে মহা-অভিশাপ দিলেন। অভিশাপ দিয়ে তাকে স্বর্গ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন।

উপরের তথ্যগুলো লিখেছেন শ্রী অশোক মুখোপাধ্যায় মহাশয়।

সত্যি তো, কে কী খাবেন—সেটা ধার্য করে দেওয়ার অধিকার অন্য কারো নেই। যার যা খেতে ইচ্ছে করে তিনি সেটা খাবেন। আর যার ইচ্ছে করে না—সেটা তিনি খাবেন না।

কেউ গরু খাবেন। কেউ গরু খাবেন না। কেউ শুকর খাবেন। কেউ শুকর খাবেন না। এর মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই। কাউকে জোর-জবরদস্তি করে খাওয়ানো অন্যায়। আবার পছন্দের খাওয়া থেকে বিরত রাখতে জোর করাটাও সমান অন্যায়।

যদিও পুরাণে গরু ও শুকর—এই দুই পশুই হিন্দুদের দেবতা। মাছও অন্যতম দেবতা বটে!

…………………

পড়ুন

কবিতা

সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা

সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ

লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য

গল্প

উকিল ডাকাত : সুনীল শর্মাচার্য

এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প: সুনীল শর্মাচার্য

আঁধার বদলায় : সুনীল শর্মাচার্য

প্রবন্ধ

কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য

ধর্ম নিয়ে : সুনীল শর্মাচার্য

মতামত

ভারতীয় বাঙালি ও ভাষাদিবস

মুক্তগদ্য

খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য

কত রকম সমস্যার মধ্যে থাকি

শক্তি পূজোর চিরাচরিত

ভূতের গল্প

বেগুনে আগুন

পরকীয়া প্রেমের রোমান্স

মুসলমান বাঙালির নামকরণ নিয়ে

এখন লিটল ম্যাগাজিন

যদিও সংকট এখন

খাবারে রঙ

সংস্কার নিয়ে

খেজুর রসের রকমারি

‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে

মোবাইল সমাচার

ভালো কবিতা, মন্দ কবিতা

ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন

বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে

দাড়ি-গোঁফ নামচা

নস্যি নিয়ে দু-চার কথা

শীত ভাবনা

উশ্চারণ বিভ্রাট

কাঠঠোকরার খোঁজে নাসা

ভারতীয় ঘুষের কেত্তন

পায়রার সংসার

রবীন্দ্রনাথ এখন

কামতাপুরি ভাষা নিয়ে

আত্মসংকট থেকে

মিসেস আইয়ার

ফিরবে না, সে ফিরবে না

২০২১-শের কাছে প্রার্থনা

ভারতে চীনা দ্রব্য বয়কট : বিষয়টা হাল্কা ভাবলেও, সমস্যাটা কঠিন এবং আমরা

রাজনীতি বোঝো, অর্থনীতি বোঝো! বনাম ভারতের যুবসমাজ

কবিতায় ‘আমি’

ভারতে শুধু অমর্ত্য সেন নয়, বাঙালি সংস্কৃতি আক্রান্ত

ধুতি হারালো তার কৌলীন্য

ভারতের CAA NRC নিয়ে দু’চার কথা

পৌষ পার্বণ নিয়ে

প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে

শ্রী শ্রী হক কথা

বর্তমান ভারত

ভারতের এবারের বাজেট আসলে অশ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধু কর্পোরেট কা

ইন্ডিয়া ইউনাইটেড বনাম সেলিব্রিটিদের শানে-নজুল

ডায়েরির ছেঁড়া পাতা

অহল্যার প্রতি

উদ্ভট মানুষের চিৎপাত চিন্তা

তাহারা অদ্ভুত লোক

পৌর্বাপর্য চিন্তা-ভাবনা

নিহিত কথামালা

অবিভাজ্য আগুন

পাথরের মতো মৌন জিজ্ঞাসা

ভাবনা যত আনমনে

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...