shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

ভারতের এবারের বাজেট আসলে অশ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধু কর্পোরেট কা

Retail talk all around
How many problems I am in
খুচরো কথা চারপাশে

ভারতের এবারের বাজেট আসলে অশ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধু কর্পোরেট কা

সুনীল শর্মাচার্য

ভারতের এবারের বাজেট আসলে অশ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধু কর্পোরেট কা

বর্তমানে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি নিম্নমুখী। ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন কর্মসংস্থান। পেট্রোল, ডিজেল থেকে নিত্য ব্যবহার্য খাদ্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। এমন পরিস্থিতিতে এই প্রথমবার সংসদে কাগজবিহীন বাজেট হলো।

‘শতাব্দীর সেরা বাজেট!’—এরকমই প্রতিশ্রুতি ছিল অর্থমন্ত্রীর। সন্দেহ নেই, সময়টা অন্যরকম। অর্থনীতি ঘোর সঙ্কটে। তার জন্য বিশ্বজোড়া অতিমারীকেই দায়ী করলেন অর্থমন্ত্রী।

তবু এই রোগশোক আর অনর্থের কালে মানুষ তো চায় কিছু শুশ্রূষা। চাইছিল কল্যাণকর বাজেট। কিন্তু তা হলো না! এবারের বাজেট অর্শ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধুই কর্পোরেট কা!

বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ ছিল, মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দিন। তাতে শুধু গরিব মানুষের দিন গুজরানের সুবিধেই হবে না, কেনাকাটা অর্থাৎ চাহিদা বাড়বে, অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। না, এবারের বাজেটেও সে পথে হাঁটেননি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।

রাজকোষের সংস্থানের জন্য তাঁর নিদান, নানা কায়দায় রাষ্ট্রের বিষয়-আশয় বিক্রি। বাজেটে তার নির্মম ফিরিস্তি। আর যা করতে হচ্ছে, তা হলো বাজার থেকে ধার নেওয়া। আর্থিক ঘাটতি যে বেড়ে গেছে বিপুল।

কৃষি পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য সেস চাপানো হলো পেট্রোল, ডিজেলের ওপর, সেই সঙ্গে আরো কিছু পণ্যের আমদানি শুল্কের ওপর। আয়করে কিছু সুরাহার আশায় ছিলেন বেতনভোগী সৎ করদাতারা। তাতেও খরচ করার পথ খুলতো, বা সঞ্চয়ের মাধ্যমে বাজারে টাকা ঢুকতে পারত, আখেরে অর্থনীতির লাভই হতো।

কিন্তু বাজেটে বিন্দুমাত্র নতুন ছাড় মেলেনি। আয়কর কাঠামো অপরিবর্তিত। আর্থিক সুরাহা না-হলেও, একটি স্বস্তির খবর—পেনশন ও সুদ ছাড়া আয় নেই এমন প্রবীণদের তাঁদের আয়করের রিটার্ন জমা দিতে হবে না; কিন্তু সে-ও জীবন প্রায় কাটিয়ে, বয়স ৭৫ বছর হলে তবে।

নির্মলার পরিহাস! বস্তুত কোনো ক্ষেত্রেই, সাধারণ মানুষের কাছে সরাসরি সুবিধে পোঁছে দেওয়ার নতুন কোনো ঘোষণা নেই এবং এই নির্দয়তার সঙ্গেই মিশে গেছে কিছুটা নির্লজ্জতা। ৪ রাজ্যের ভোটের রাজনীতি উচ্চকিত হয়ে উঠেছে কেন্দ্রের বাজেটে। অদূরে বিধানসভার ভোট পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, কেরলা ও তামিলনাড়ুতে।

এবার বাজেট ভাষণে নির্মলা বিশেষভাবে উল্লেখ করলেন এই চার রাজ্যের কথা। এই চার রাজ্যের জাতীয় সড়ক প্রকল্পে খরচ হবে ২.২৭ লক্ষ কোটি টাকা। তামিলনাড়ুর প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ১.০৩ লক্ষ কোটি, কেরলার জন্য ৬৫ হাজার কোটি, আসামের জন্য ৩৪ হাজার কোটি।

সবচেয়ে কম অবশ্য বাংলার জন্য—২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে কলকাতা-শিলিগুড়ির মধ্যে ৬৭৫ কিমি সড়কপথের জন্য। পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের চা-শ্রমিকদের কল্যাণে ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথাও ঘোষণা করলেন নির্মলা।

রাষ্ট্রের সম্পদ বিক্রির ওপর যথাসাধ্য জোর দেওয়া হয়েছে বাজেটে। উদ্যোগটা নতুন নয়। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি চলতি অর্থবর্ষে। আগের বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২.১ লক্ষ কোটি টাকা তোলা, এবার তা কমিয়ে আনা হয়েছে ১.৭৫ লক্ষ কোটিতে। আশঙ্কা, মন্দ সময়ে জলের দরেই বিকোবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি।

অর্থমন্ত্রী জানান, ২০২১-২২ অর্থবর্ষের মধ্যেই বিক্রি সেরে ফেলা হবে আইডিবিআই ব্যাংক, বিপিসিএল, শিপিং কর্পোরেশন, নীলাচল ইস্পাত নিগম লিমিটেড, পবন হংস, এয়ার ইন্ডিয়া ইত্যাদি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার।

এ ছাড়া দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এবং একটি সাধারণ বিমা সংস্থার বেসরকারিকরণ হবে। কোন ব্যাংক? কোন বিমা সংস্থা? নাম বলা হয়নি। লাভজনক এলআইসি-কে নিয়ে যাওয়া হবে শেয়ার বাজারে, অর্থাৎ বেসরকারিকরণের শুরু।

এর পাশাপাশি বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির সীমা ৪৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৪ শতাংশ করে দেওয়া হবে। ৭টি বন্দরে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির(পিপিপি) প্রস্তাবও পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী।

২০২১-২২ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ হচ্ছে এমন এক সময়ে, যখন সরকারকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে কৃষক আন্দোলনের। প্রত্যাশিতভাবেই অর্থমন্ত্রী দাবি করেন, মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর কৃষক কল্যাণে বরাদ্দ অনেকগুণ বেড়েছে, কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচের দেড়গুণ মূল্য নিশ্চিত করা হয়েছে, ইত্যাদি।

ন্যূনতম সহায়ক মূল্য চালু থাকবে। কৃষিঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ১৬.৫ লক্ষ কোটি করা হবে। এসবের পাশাপাশি চাপানো হয়েছে কৃষি পরিকাঠামো উন্নয়ন সেস। এই পেট্রোলের ওপর লিটার পিছু ২.৫ টাকা ও ডিজেলের ওপর লিটারে ৪ টাকা হারে এই সেস চাপবে।

বাজেটে বলা হয়েছে, ক্রেতাদের ওপর এর জন্য কোপ পড়বে না। কারণ মূল উৎপাদন কর এবং বিশেষ অতিরিক্ত উৎপাদন কর কমিয়ে এই সেস বসানো হচ্ছে। কিন্তু, প্রশ্ন হলো : আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তেলের দাম যখন কমাতে হবে, তখন কী হবে?

সেসের অঙ্ক তো বদলাবে না। তখনো কি শুল্কের হার আরো কমিয়ে দাম ঠিক করা হবে? এমনিতেই দেশে জ্বালানির ওপর শুল্কের হার বেশি। তেল অগ্নিমূল্য। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও, এদেশে শুল্ক চাপিয়ে দাম কমা আটকে দিচ্ছে সরকার।

এই সময় সদ্য অর্থমন্ত্রককে শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছিল পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক। তখনই শুল্ক কমিয়ে নিয়ে আনা হলো সেস। রাজ্যগুলি কিন্তু সেসের ভাগ একেবারেই পায় না। এই সেস বসানো হয়েছে

বেশ কিছু পণ্যের আমদানি করে—সোনা ও রূপো (২.৫ শতাংশ), অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় (১০০ শতাংশ), আপেল (৩৫ শতাংশ), কয়লা (১.৫ শতাংশ), সার (৫ শতাংশ), তুলোর (৫ শতাংশ) উপরেও।

জানানো হয়েছে, এসব ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক আগে বাদ দেওয়া হবে। তার পর সেস যোগ করা হবে, যেন ক্রেতাদের অসুবিধা না হয়।

করোনা-কালের বাজেট। স্বাভাবিক ভাবেই স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বেড়েছে। ২.২ লক্ষ কোটি টাকা খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে, আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। এর মধ্যে টিকা বাবদ বরাদ্দ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ‘আত্মনির্ভর স্বাস্থ্য যোজনা’য় ৬৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথা জানিয়েছেন নির্মলা, তবে আগামী ৬ বছরের জন্য।

অর্থমন্ত্রীর দাবি, পরিকাঠামোর দিকটিতেও বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে বাজেটে। বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে একটি জাতীয় পরিকাঠামো পাইপলাইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে ৭,৪০০ প্রকল্পকে। ২০ হাজার কোটি টাকার মূলধন নিয়ে পরিকাঠামো ক্ষেত্রের বিকাশে অর্থ জোগানোর জন্য তৈরি করা হবে একটি জাতীয় ব্যাংক।

আগামী অর্থবর্ষে সরকারের প্রস্তাবিত খরচের পরিমাণ ৩৪.৮৩ লক্ষ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্থনীতির হাল ফেরাতে সরকার মূলধনী ব্যয় বাড়িয়ে ৫.৫৪ লক্ষ কোটি টাকা করবে, বলা হয়েছে বাজেটে। কিন্তু কোথা থেকে আসবে এই টাকা?

চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে জিডিপি-র ৯.৫ শতাংশ। গত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা

ছিল ৩.৫ শতাংশ। আগামী অর্থবর্ষে এই ঘাটতি ৬.৮ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

সরকারকে চলতি অর্থবর্ষের জন্য আরো ৮০,০০০ কোটি টাকা বাজার থেকে ধার করতে হবে, জানান অর্থমন্ত্রী। আগামী অর্থবর্ষে নিতে হবে ১২ লক্ষ কোটি টাকা।

নির্মলার আশা, আর্থিক ঘাটতি ৪.৫ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসা যাবে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে। ঘাটতির কৈফিয়ত তৈরি আছে। অতিমারী। কিন্তু এর বোঝা সবটাই আমজনতার ঘাড়ে চাপিয়ে রাখল মোদি সরকার।

সম্পদ ওপরে জমে থাকে, অভাব নেমে আসে নিচে! আর এর জন্যই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এই বাজেট ভেকধারী সরকারের ফেকধারী বাজেট।

…………………

পড়ুন

কবিতা

সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা

সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ

লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

গল্প

উকিল ডাকাত : সুনীল শর্মাচার্য

এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প: সুনীল শর্মাচার্য

আঁধার বদলায় : সুনীল শর্মাচার্য

প্রবন্ধ

কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য

ধর্ম নিয়ে : সুনীল শর্মাচার্য

মুক্তগদ্য

খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য

কত রকম সমস্যার মধ্যে থাকি

শক্তি পূজোর চিরাচরিত

ভূতের গল্প

বেগুনে আগুন

পরকীয়া প্রেমের রোমান্স

মুসলমান বাঙালির নামকরণ নিয়ে

এখন লিটল ম্যাগাজিন

যদিও সংকট এখন

খাবারে রঙ

সংস্কার নিয়ে

খেজুর রসের রকমারি

‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে

মোবাইল সমাচার

ভালো কবিতা, মন্দ কবিতা

ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন

বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে

দাড়ি-গোঁফ নামচা

নস্যি নিয়ে দু-চার কথা

শীত ভাবনা

উশ্চারণ বিভ্রাট

কাঠঠোকরার খোঁজে নাসা

ভারতীয় ঘুষের কেত্তন

পায়রার সংসার

রবীন্দ্রনাথ এখন

কামতাপুরি ভাষা নিয়ে

আত্মসংকট থেকে

মিসেস আইয়ার

ফিরবে না, সে ফিরবে না

২০২১-শের কাছে প্রার্থনা

ভারতে চীনা দ্রব্য বয়কট : বিষয়টা হাল্কা ভাবলেও, সমস্যাটা কঠিন এবং আমরা

রাজনীতি বোঝো, অর্থনীতি বোঝো! বনাম ভারতের যুবসমাজ

কবিতায় ‘আমি’

ভারতে শুধু অমর্ত্য সেন নয়, বাঙালি সংস্কৃতি আক্রান্ত

ধুতি হারালো তার কৌলীন্য

ভারতের CAA NRC নিয়ে দু’চার কথা

পৌষ পার্বণ নিয়ে

প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে

শ্রী শ্রী হক কথা

বর্তমান ভারত

ভারতের এবারের বাজেট আসলে অশ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধু কর্পোরেট কা

About The Author

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...