
খুচরো কথা চারপাশে
ভালো কবিতা, মন্দ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্য
ভালো কবিতা, মন্দ কবিতা
ভালো কবিতা কোনটি? ভাবছিলাম। বড় জটিল প্রশ্ন! আমার এক কবিবন্ধু ‘ভালো কবিতা’র সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বললেন, ‘ভালো কবিতা হলো সেটা—যা পড়তে গেলে শেষ না করে ছাড়া যায় না—যা বারবার পড়তে ইচ্ছে করবে। কিছু কিছু লাইন মনের মধ্যে গেঁথে যাবে। নতুন করে সেই কবিতার কাছে ফিরে আসতে মন চাইবে।’
এই কথা শুনে ভাবি, সত্যি কি ভালো কবিতা, মন্দ কবিতা বলে কিছু হয়? এই ভালো লাগার ব্যাপারটা তো বড়ই গোলমেলে। একজনের যেটা ভালো লাগলো, অন্যজনের সেটা ভালো না-ও লাগতে পারে।
আর উপমা, চিত্রকল্প, শব্দ চয়ন ইত্যাদি থাকলেই সেটা কবিতা হয়ে উঠবে, এমনটা কি সত্যি বলা যায়? জীবনানন্দ দাশ এক সময় বলেছিলেন, ‘উপমাই কবিত্ব’।
আবার পরবর্তীকালে তিনি নিজেই এমন অনেক ভালো কবিতা লিখেছেন—যেগুলোতে একটিও উপমা
ছিল না। তাহলে?
ইদানীং কত অদ্ভুত অদ্ভুত গল্প শুনি, বিখ্যাত অমুক কবি কিংবা তমুক কবি কবিতা রচনায় কত কি বলেন, কিন্তু ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ বলে কিছু হয়? বহুল পঠিত কবিতা, জনপ্রিয় কবিতা আছে—সেগুলিই কী শ্রেষ্ঠ কবিতা? জানি না!
আমার কবিতা ভালো না মন্দ সেটা সংবেদনশীল পাঠক আত্মস্থ করে ঠিক করবে। ভাবীকালের পাঠক একজন কবিকে খুঁজে নেয়।
সমকালে বেশ খ্যাতি পেয়ে প্রথম সারিতে উঠে আসা কবিও অচিরেই হারিয়ে যান। অনেক দৃষ্টান্ত আছে। আবার উল্টোটাও আছে। সমকাল তাঁর খোঁজই পায়নি, কিংবা তিনি পাত্তাই পাননি, কিন্তু ভাবীকাল তাঁকে সাফল্যের সার্টিফিকেট দিয়েছে এবং দিচ্ছে।
তাই অকপটে মনের ভাবকে লিখে যাওয়াই একজন সৎ-কবির আসল ধর্ম। সেসব লেখা কবিতা হলো কিনা—তা নিয়ে কবি অরুণেশ ঘোষ খুব সুন্দর করে বলেছেন, ‘না-কবিতা, প্রতি-কবিতা ও অ-কবিতা… সবকিছুই শেষ পর্যন্ত কবিতা।… একজন কবি যদি নিজেই ভাবে, সে প্রতি-কবিতা বা অ-কবিতা লিখছে, সে যদি নিজেই ভাবে, সে বিদ্রোহী বা প্রথাবিরোধী, প্রতিবাদী বা বিপ্লবী, তাহলে আমাদের সন্দেহ হয়। দু’ধরনের লোক প্রথমেই কপালে লেবেল এঁটে নেয়। এক, অক্ষম যারা আর যারা ভক্ত, যাদের কিছু মতলব রয়েছে। বস্তুত, কবি লেখে। সে নিজেকে লিখতে বাধ্য হয় ভেতরের আত্মতাড়নায়।’
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
গল্প
প্রবন্ধ
কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য
মুক্তগদ্য
খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য
31 thoughts on “ভালো কবিতা, মন্দ কবিতা”