মশিউর নিশান
ছয়টি কবিতা
মশিউর নিশানের কবিতা
নিত্য জীবন
স্তম্ভিত হয়ে গেছে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, মন।
পিছু পিছু ধাওয়া করে, ফুরিয়ে যাওয়া একটি ভুল!
জীবনের মানে তুচ্ছ করে দিতে চায়, হতে চায় স্বৈরাচারী!
কি অদ্ভুত আবেদন, বিনীত তবু অগ্রহণীয়!
যন্ত্রণা শেষ সীমা ছাড়িয়ে আজ আছড়ে ফেলেছে আমাকে, তীব্র হতাশার বাহুডোরে।
অতি আদিম মুক্তির দাবিতে—
বিক্ষোভ করে মস্তিষ্কের অতিসূক্ষ্ম কোষগুলো একজোট হয়ে!
স্মৃতি কাতর আত্না, মাঝে মাঝে সস্তা আবেগের চারপাশে পরিক্রমণ করে।
বস্তুত, বয়স ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা অর্জন করে আর শুরু হয় নতুন যাত্রা!
মশিউর নিশানের কবিতা
বিন্দু
বিদঘুটে সময় মাঝে মাঝে আরো দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে।
বুঝে ওঠার আগেই দৌড়াতে থাকে ক্ষিপ্ত ভঙ্গিমায়!
ভেসে আসে বাতাসে খরস্রোতা নদীর অচেনা গর্জন,
নেই কোনো উন্মত্ততা, দীর্ঘশ্বাসের অবতারণা ঘটে নির্দ্বিধায়!
তরুণীর খোলা চুলের ভাঁজে ভাঁজে,
লুকিয়ে থাকা কষ্টের তরুলতা, অচিরেই বয়ে বেড়ায় এলোমেলো স্মৃতির কারুকাজ!
কথার ভিড়ে দুমড়ে যাওয়া কয়েকটি শব্দ, শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে দিকবিদিক ঘুরে বেড়ায়।
একটি বিন্দু হয়তো কখনো শেষ, হয়তো-বা কখনো নতুন আলো ঝলমলে পথের ইশারা!
মশিউর নিশানের কবিতা
কালো ডায়েরি
অস্বাভাবিক অন্ধকারে, আমি কালো ডায়েরি নিয়ে বসে আছি।
ডায়েরির প্রতিটা পাতায়, ছেলেবেলার স্মৃতি আর বড় বেলার প্রতিচ্ছবি কালো হয়ে বিরাজমান।
হাতুড়ির আঘাত যদি মাথার খুলির আশেপাশে না লাগতো,
তবে জানতামই না, ডায়েরির পাতাগুলো ধীরে ধীরে ধারণ করছে প্রবীণগাঁথা!
বিমর্ষের বিমূর্ত রেখা শোভা পায় ডায়েরির মার্জিনে।
মরা রক্তের মতো কালো কালিতে রচিত হচ্ছে,
ছোট ছোট স্তবক আর প্রশ্নচিহ্ন!
প্রতিটি অক্ষর বেঁকে গিয়েছে লেখার ভারে।
অনুজ্জ্বল পৃষ্ঠা নম্বর, মনে করিয়ে দেয়—ছেড়ে আসা সময় আর শেখায় গন্তব্যে যাবার কৌশল।
শুরু হয় নতুন যাত্রা, নতুন পাতায়!
তবে, থেকে যায় শেই পুরাতন কালি ও কলম।
লেখায় লেখায় ভরে ওঠে পৃষ্ঠা, চারদিকে কালোর ছড়াছড়ি, কালো কভারে ঢাকা—
চিরচেনা এই কালো ডায়েরি।
মশিউর নিশানের কবিতা
বৃদ্ধ
বৃদ্ধ হবার ইচ্ছে বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে!
চাঁদের মতো আলো ছড়াবে আমার সদ্য পাকা চুলগুলো!
নিঃশব্দে ঘণ্টা বাজাবে মৃত্যু।
নিঃসঙ্গ সন্ধ্যার মতো লালচে আভা ছড়াবে বারবার।
মুক্ত রাস্তায় বাধাহীন দেখিয়ে দেবে গন্তব্য।
তখন বাজি ফাটানোর শব্দ নাড়া দেবে স্মৃতির পাতায় বয়ে যাবে দমকা হাওয়া,
ঝাড়বাতি আলো ছড়াবে জীবনের ছোট্ট আঙিনায়।
নাচবে কুপির আলো, শুঁকবো কেরোসিনের পোড়া গন্ধ।
দিনশেষে পিপীলিকাদের ভিড়ে খুঁজবো নিজেকে!
অন্ন যখন হিসেবের ঊর্ধ্বে,
তখন নিজেকে জড়িয়ে থাকবে অপেক্ষার প্রহর,
ক্ষুধার্ত কোটরে যাবে চিরযৌবন প্রাণ!
মশিউর নিশানের কবিতা
নিরুদ্দেশ যাত্রা
অন্তহীন পথে লক্ষ্য স্থির করেছি,
নিরুদ্দেশ খুঁজে বেড়ায় বাঁচার—
ঔষধ।
আগের মতোই পাখিরা ওড়ে, গান গায়—
অচেনা ভাষায় সুরে সুরে।
নদীতে এখনো পানির নিচে বালির
আস্তরণ পুরাতন রীতি বয়ে নিয়ে যায়।
এখনো দুঃখগুলো জীবনজুড়ে—
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে—ঝরা পাতার মতো।
হৃদয়ের হিম গলে, চোখের নদীতে—
বারবার আনে বন্যা।
এখনো, দ্রুত পায়ে প্রেম আসে, ভালোবাসে,
শেষে চলে যায় মুখ ঘুড়িয়ে, হতাশায় ঘটে প্রেমের সমাধি।
আকাশের পাপড়িগুলো স্ববেগে উড়ে যায়,
জলহীন শুষ্ক তুলোর মতো!
জলের অভাব রয়ে যায়, ক্ষরা এসে ছবি আঁকে মাঠের বুক চিড়ে।
তবু নাগালের বাইরে একা আমি,
হেঁটে চলি পাবার আশায়, লক্ষ্য জয়ের সুখ।
মশিউর নিশানের কবিতা
নিরুপায় নিরুপমা
নিরুপায় নিরুপমা, এই সূর্যরঙিন দিনে আমি বেশ নিরুপায়!
স্বচ্ছ আলো এসেও, খুঁজে পায়নি আমার দুয়ার।
আমি বেঁচে আছি ঘরের কোণে ময়লার বেশে!
আমাকে উগ্লে দিচ্ছে মৃত্যু!
পলিথিন যেমন একঘরে, মাটির মিশ্র উদরে—
হয় না নিঃশেষ,
আমিও তেমনি একজন!
চারপাশে শুধু অজ্ঞাতনামা, অভিশপ্ত প্রেতাত্মা!
মানুষ! সে তো বড় অদ্ভুত, সৃষ্টির সেরা!
যার স্পর্শে আরো প্রাণের সঞ্চারণ ঘটে।
যারা প্রেমময়, প্রকৃতির মতো স্নিগ্ধ!
আর প্রেতাত্মারা, হা হা হা!
এদের অনেক ঘর, অনেক শক্তি, অনেক রূপ!
এরা তো মিশে গেছে বিশ্বের সাথে—
এই বিশ্ব হলো মাটি, আর আমি হলাম পলিথিন!
নিজেকে মেলাতে পারি না ওদের সাথে।
লাখোবার চাইলেও না!
নিরুপায় নিরুপমা, এই বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় আমি বেশ নিরুপায়!
একদিকে, আমি স্বপ্নকে ভিজতে দেখেছি অবিরাম!
চুপসে গেছে লাল বৃষ্টিতে!
অন্যদিকে, গলা ভেজানোর জন্য যেমন কাক পায় না পানি,
আমিও তেমনি তৃষ্ণার্ত!
আজ চোখের পানিতে মেটায় তৃষ্ণার কিয়দংশ!
সে নোনাজলও ফুরিয়ে এসেছে!
এই জলে এখনো শুকনো মাটি সিক্ত হয়,
এখনো সতেজতায় পূর্ণতা পায় আবেগ!
ওদের জল নোনতা না।
আসলে প্রেতাত্মারা তো কাঁদেই না, ওরা কাঁদায়।
আমি স্তব্ধতার ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়েছি।
উত্তর এসেছে—তাদের স্তব্ধতা শেষ,
প্রেতাত্মারা নিয়েছে কিনে।
তাই আজ, আমি নিরুপায় নিরুপমা, খুব বেশি নিরুপায়!
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
সুনীল শর্মাচার্যের দশটি কবিতা
নাসিমা খাতুনের কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা