মুহূর্তের কবিতা
সুনীল শর্মাচার্য
মুহূর্তের কবিতা
১
ফাঁকা ঘরে বসে আছি বিশ্ব আর আমি
কত স্মৃতির রঙে মিলেমিশে বাদামি।
.
এইভাবে কেটে যায় দিনসমূহের
কত কথা, কত স্মৃতি মনে পড়ে ঢের;
.
কত মানুষ দেখি মুগ্ধ বিস্ময়ে আমি
দেখে দেখে ভুলে যাই সব মাতলামি;
.
রাতের নক্ষত্র আকাশে তাকিয়ে থাকি
আমার জন্মের আগে ধরা ছিল নাকি?
.
২
তুমি আমি পৃথিবীর বুকে এক যাত্রী
আলো আলো দিন আসে কী মধুর রাত্রি
.
বনফুল ফুটে আছে কুসুমকলিকা
আগামী জননী দেখি সরলা বালিকা
.
ভাবনা অলীক নয়, তুমি জানো কী এ
ঘরও ভরিয়ে দেবে ভালোবাসা দিয়ে
.
ভাবনা নয়, আশাও ফুল হয়ে ফোটে
শ্রীমতী শ্রীমান মিলে ঘর গড়ে ওঠে!
.
৩
এই পুরুষ মহিলা, মানুষের সারি
এইভাবে ঘরবাড়ি ভাবি যতো পারি।
.
দিগন্তে চেয়ে দেখি আকাশও নীলাভ
তোমার কথা ভেবে তোমার কাছে যাব।
.
মাঠে মাঠে হাঁটি, দেখি কুমারের জল
চোখের জলে কান্না ঝরে স্বচ্ছ তরল।
.
ঘরে ঘরে নারী পুরুষে মিলনে শিশু
পুরাতন মিশে গিয়ে নিত্য জিজীবিষু!
.
৪
যা দেখি, যা ভাবি, সবই তো হয় ভব্য
লেনদেন যা কিছু, প্রাপ্যে মোক্ষটা লভ্য!
.
মানুষের ব্যবহারে প্রকাশ অ-দেব
কিংবা দেব, অ-মানুষ ও মোসাহেব—
.
মশামাছি মেরে তাই হয়েছি যে সভ্য!
.
সাদা আর কালো তবু বাঁচে, আশা রহ
মধু বিষে ভরা জীবনের ঘড়া, দহ…
.
মুখে হাত দিয়ে এই কথা ভাবি মনে
প্রভাত আসছে জানি সূর্যের কিরণে
.
বাঁচা মরা দৈব, আহা প্রতিক্ষণে নব্য!
.
৫
আজ মনে হয় আমার যা কিছু দৈব
ক্ষমতা যা ছিল তাও সীমিত নৈবেদ্য!
.
তবু কাকে মনে মনে বলি : বলে যাও
কী এমন সুস্বাদু রাত্রি, জ্যোৎস্না তাও—
.
কী এমন আকাশ ও সাগর অজর
কত সহজে প্রেমে হতে চাও অমর!
.
পৃথিবীতে আছি যেন তুমি আর আমি
দেখি দিন, দেখি রাত, দেখি মধুযামি!
.
মনের কথা বলি : আনন্দের বাতাসে
সন্দেহ হয়! কখনো-বা সন্দেহ আসে…
.
কোনোদিন কি পরস্পর ভালোবাসিনি?
সুখে দুখে কোনোদিন কাঁদিনি, হাসিনি?
.
৬
ঘরে পাশে নানা কথা শোনা যায় যেই—
আমি তো তখনি বুঝি কথা বলে কেউ…
.
কথা কয়, কোনো কথা বোঝা তো গেল না
শুধু আমি শুনি, জানি তুমি শুনছ না!
.
পাশের ঘরের কোণে ব্যস্ত রমণীটি
শত্রু-মিত্র চিনতে কেটেছে শতাব্দীটি!
.
৭
মনে গেঁথে আছে কথা দেবদেবীদের
চিরকাল জন্মগতভাবে পাই টের।
.
গ্রন্থে গ্রন্থে জানি এইসব লেখা আছে
পাতা তুলে পাতা খুঁজি পঞ্জিকার কাছে।
.
হিন্দু মতে দশভুজা, আরো কত জন
এদের এড়িয়ে দেখি বেঁচে থাকে মন।
.
এই বিশ্ব দীর্ঘকাল টিকে থাকে যা যা
স্বার্থসহ ভালো থাকা কত কত কিচ্ছা।
.
ভেবে দেখি তা তা গল্প ঈশ্বর ভাবনা
ইন্দ্র, সরস্বতী, লক্ষ্মী অজস্র কল্পনা…
.
সেহেতু কখনো আমি পূজাই করিনি
তবু মনে হয় কারো কাছে আজো ঋণী!
.
আমার হাত-পা আছে সত্য বলে মানি
প্রকৃতি সহজ সত্য আরো বেশি জানি!
.
৮
রোগভোগ চিন্তা নিয়ে আমি ভালো আছি
মিথ্যে বলে সত্য ঢাকি, এইভাবে বাঁচি।
.
অর্থের অভাব আছে বর্তমানে মোটে
অন্ধ হয়ে থাকি চুপ, দেখি একচোটে।
.
নারী ভেবে ফুল দেখি, তারা আজ জবা
পাতা নেড়ে গাছগুলো দিয়েছে বাহবা!
.
৯
তুমি যেন বইখানি পড়ি আর পড়ি
পাতা উল্টে দেখি, পড়ি, কত চিন্তা ধরি।
.
কতকিছু আছে দ্যাখ এই ধরণীতে
তুমি আমি খুশি থাকি এক ঘরণীতে!
.
শেষমেষ বুঝি সব এক চিন্তাকার
গড়ে ওঠে, গড়ে তোলে সেই রূপকার!
.
১০
তোমার কথাটা মনে এলো যে হঠাৎ
ভাবতে ভাবতে দেখি ভাবনারা কাৎ!
.
হেঁটে হেঁটে আসছি এই একুশ সালে
বুকে ব্যাধি, মনে ব্যাধি করোনার কাল!
.
এর মধ্যে বিপদ-আপদ ওঠা বসা
কপালে কি আছে লেখা, অদৃশ্য ভরসা!
.
আমাকে বয়ে আনছে তো একুশ সালে
মৃত্যু ভয়াবহ ভয়, মুখে হাত গালে!
.
১১
বিছানায় বসে আছি হাতে দিয়ে হাত
করোনা কারণ অতি দিন শেষে রাত
.
রোগটা ভীষণ যত নয়তো সরল
পৃথিবী যন্ত্রণা দেয় সহজ গরল
.
আকাশে বাতাসে শুধু কান্না ভেসে আসে
শ্মশান কবরে লাশ থরে থরে আসে…
.
ভাবি জন্মমৃত্যু যদি কালের সহায়
কে কার সান্ত্বনা দেবে শোকার্ত সবাই!
.
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য
প্রয়াণগাথা : সুনীল শর্মাচার্য
মুক্তপদ্য
ইচিং বিচিং পদ্য : সুনীল শর্মাচার্য
গল্প
এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প : সুনীল শর্মাচার্য
আঁধার বদলায় : সুনীল শর্মাচার্য
প্রবন্ধ
কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য
মতামত
মুক্তগদ্য
খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে
ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন
বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে
ভারতে চীনা দ্রব্য বয়কট : বিষয়টা হাল্কা ভাবলেও, সমস্যাটা কঠিন এবং আমরা
রাজনীতি বোঝো, অর্থনীতি বোঝো! বনাম ভারতের যুবসমাজ
ভারতে শুধু অমর্ত্য সেন নয়, বাঙালি সংস্কৃতি আক্রান্ত
ভারতের CAA NRC নিয়ে দু’চার কথা
ভারতের এবারের বাজেট আসলে অশ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধু কর্পোরেট কা
ইন্ডিয়া ইউনাইটেড বনাম সেলিব্রিটিদের শানে-নজুল
করোনা, ভারতীয় জনগণ ও তার সমস্যা
8 thoughts on “মুহূর্তের কবিতা”