shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

রবীন্দ্রনাথ এখন

Retail talk all around
How many problems I am in
খুচরো কথা চারপাশে

রবীন্দ্রনাথ এখন

সুনীল শর্মাচার্য

রবীন্দ্রনাথ এখন

মাঝে মাঝে ভাবি, রবীন্দ্রনাথের বহু খাঁটি অনুরাগী আমাদের দেশে রয়েছে, থাকবেও। কিন্তু মোট জনসংখ্যার তুলনায় তাঁরা কতটুকু? বেশির ভাগই স্রেফ হুজুগে। এই হুজুগেরা মুখ্যত পাঁচ রকম। একদল হলেন অন্ধভক্ত। এঁদের কাছে রবীন্দ্রনাথ শুধু পারিবারিক টাইটেলে নন, তেত্রিশ কোটির উপরে সত্যি-সত্যিই আরো একজন ঠাকুর।

তিনি যেন সমস্ত মানুষী প্রবৃত্তির অতীত, ঘুমনো বা ভাত খাওয়ার মতো প্রাকৃত নিয়মেরও বাইরে। রবীন্দ্রনাথকে পুজোর ছলে এঁরা ফুলের মালা ধূপের ধোঁয়ায় আসল মানুষটিকে ভুলতে বসেছেন।

আর এক দল রবীন্দ্রনাথকে খাতির করেন বটে, অথচ তাঁর লেখা পড়েন-টড়েন না। এঁদের কাছে রবীন্দ্রনাথ এক ধরনের ‘স্টেটাস সিম্বল’। আলমারির কাচের ওপারে সারি সারি দাঁড় করিয়ে রাখা ‘এক সেট’ লোক দেখাবার জিনিস।

মিল্টন সম্পর্কে বলা হয়, ‘মোর অ্যডমায়ার্ড দ্যান রেড’। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কেও এঁদের মনে ভাসা-ভাসা কিছু ধারণা প্রজন্ম-পরম্পরায় গড়ে উঠেছে। যেমন, তিনি মানবদরদী, উপনিষদের রসে নিষিক্ত, আর নোবেল প্রাইজ যখন পেয়েছিলেন তখন একটা বড় কবিই হবেন নির্ঘাৎ।

আবার এমন কিছু লোক পাবেন সংস্কৃতি জগতে, যাঁরা ভগবানেও আছেন জিরাফেও আছেন। তৃতীয় বিশ্বের নামী লেখক থেকে শুরু করে টেরাকোটা, আলি আকবর খাঁ, নুভেল ভাগ হয়ে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত সব ব্যাপারেই ‘মেড-ইজি-মার্কা’ বিরল জ্ঞানের অধিকারী।

সে জ্ঞান এঁদের হজম হয়নি, যদিও বক্তৃতায় আসর থেকে চায়ের টেবিল সর্বত্র কয়েকটা বাঁধাধরা ‘কোটেশন’ ঝেড়ে বাহাদুরি দেখান। তার পর যেসব পরিবারে ছেলেমেয়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে একবার ভর্তি হতে পারলেই বাপ-মা একলাফে ড্যাডি-মামিতে ‘প্রোমোশন’ পেয়ে যান, সেখানেও রবীন্দ্রজয়ন্তী কমসে কম ‘বচ্ছরকার দিন’।

সারা বছর রবীন্দ্রনাথকে ‘ড্যাম কেয়ার’—এদের বাইবেল হ্যারি পটার, তীর্থক্ষেত্র বলিউড, আদর্শ কোনো লম্ফবাগীশ সিনে-তারকা, জীবনের মোক্ষলাভ একটি মোটা মাইনের চাকরি এবং সেটা বিদেশে হলে মোক্ষলাভ।

এরা রবীন্দ্রনাথকে তাঁরই ভাষায় ‘সহ্য করে, স্বীকার করে না’। সবচেয়ে বিরক্তিকর সেইসব গায়ক-গায়িকা—কী বেশভূষা, কী গাইবার ভঙ্গিতে—যাঁদের দেখেশুনে মনে হয় একটাই অব্যতিক্রমী ছাঁচ থেকে বেরিয়ে এসেছেন।

স্বাভাবিকতা-বর্জিত চাপা গলা, বেঠিক উচ্চারণ, ভাবের বালাই নেই, মুদ্রাদোষে—বিড়ম্বিত যান্ত্রিক পরিবেশনা। এঁরা রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে মঞ্চে উঠে নিজেদেরই জাহির করেন, তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে শ্রাদ্ধ করেন তাঁর।

যে ‘জীবনশিল্পী’ আজীবন পূর্ণের সাধনা করে গেলেন, আজ তিনি কিনা ডজনখানেক কবিতা, গোটা পাঁচ-সাত গল্প আর গোটা পঁচিশেক গানে পর্যবসিত হয়েছেন। তা-ই ভাঙিয়ে চলছে আমাদের বোধহীন, সংস্কারহীন, লজ্জাহীন চর্বিতচর্বণ—বছরের পর বছর!

…………………

পড়ুন

কবিতা

সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা

সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ

লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

গল্প

উকিল ডাকাত : সুনীল শর্মাচার্য

এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প: সুনীল শর্মাচার্য

আঁধার বদলায় : সুনীল শর্মাচার্য

প্রবন্ধ

কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য

ধর্ম নিয়ে : সুনীল শর্মাচার্য

মুক্তগদ্য

খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য

কত রকম সমস্যার মধ্যে থাকি

শক্তি পূজোর চিরাচরিত

ভূতের গল্প

বেগুনে আগুন

পরকীয়া প্রেমের রোমান্স

মুসলমান বাঙালির নামকরণ নিয়ে

এখন লিটল ম্যাগাজিন

যদিও সংকট এখন

খাবারে রঙ

সংস্কার নিয়ে

খেজুর রসের রকমারি

‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে

মোবাইল সমাচার

ভালো কবিতা, মন্দ কবিতা

ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন

বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে

দাড়ি-গোঁফ নামচা

নস্যি নিয়ে দু-চার কথা

শীত ভাবনা

উশ্চারণ বিভ্রাট

কাঠঠোকরার খোঁজে নাসা

ভারতীয় ঘুষের কেত্তন

পায়রার সংসার

রবীন্দ্রনাথ এখন

About The Author

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...