সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা
পাতা দোলে
পাতার স্বভাব নিয়ে আছি
ও কী অধরাই থেকে যাবে?
তবু নানাভাবে স্তব করি—
ছুঁয়ে যাও, একবার ছুঁয়ে
.
পাতার রঙ ও বেরঙের
মধ্যে ছিল আশা, মাতোয়ারা,
হাজার স্বপ্ন উড়িয়ে দিই—
শূন্যে,আকাশে, যদি কখনো
হাত ভরে মন্ত্র নিয়ে আসে
.
গাছে পাতা নড়ে নৃত্যচালে
শরীর দোলে, হৃদয় কাঁপে,
কার স্পর্শ পেতে বারেবারে?
নাগালের বাইরে কে আসে—
শিরশির শব্দ তুলে কাঁপে,
মিথ্যে আমাকে উতলা করে—
.
পাতা দোলে, শূন্যে পাতা দোলে
.
রাত্রি
কাজের শেষে ঘরে ফিরলে
চাঁদ-কপালে আকাশ
দরজা খুলে দেয়
.
হৃদয় কাঁপানো আর্তি নিয়ে
রাত ভাত বেড়ে দেয়
বাতাস করে
বিছানা সাজায়
.
অন্ধকারে ঢেকেছে আকাশ
রাত….. রাত….. রাত…
.
আশার ঘুমে রাত্রি করি পার
নিয়মবাঁধা জীবন পারাপার…
.
অতীত
কেউ চলে গেলে দূর অন্তরালে
কখনো খাঁ খাঁ শূন্যতায়
প্রান্তরের অতীত
তার কত কিছু বলার ছিল।
ঝলমল করে ওঠে।
.
অতীত ছড়ানো তোমার চারপাশে, মাঝে মাঝে
চমকে উঠে ভাবো
কত কিছু হারিয়ে গেছে
দৃশ্যের ভিতরে কত স্বাভাবিক—
তবু শোনো
.
কিছু ফিসফিস, কিছু মর্মর, ঝাউ দোলে
অথবা দোলে না আদৌ
পড়ে থাকে বেলাভূমি
সেও যেন অতীত।
যুগে যুগে এমন।
.
ঠিক এমনই কত কিছু। কত ঘূর্ণি, কত মুখ
কখনো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে
ভুলে যায়। অন্তরালে চলে যায়—
কেউ ভাবে অতীত, কেউ দেখে হু হু ঝাউ,
শূন্য বেলাভূমি!
.
সুপ্রভাত
আশঙ্কা শুধু আশঙ্কা যে তোমার
প্রতিনিয়ত দেখো সত্যের পরাজয়,
মৃত্যু দেখে কেঁপে ওঠে তোমার হৃদয়,
খুনে রাঙা দেশে বহে ভয়ের জোয়ার!
.
কোথাও কোথাও পুড়ছে ঘর দুয়ার
শান্তি সুনীতি হয়ে গেছে আজ শেষ,
সবার মনে এখন বৈরাগীর বেশ—
সারা দেশ খুঁড়ে যাচ্ছে উন্মত্ত শুয়ার!
.
কার হাতে তুমি রাখবে তোমার হাত
ঝগড়া-বিবাদে ঘর-বাড়ি তো শ্মশান,
কান পেতে শোন প্রেত-আত্মার গান—
সূর্যও লজ্জায় আনছে না সু-প্রভাত!
.
উৎসব
‘এই সভ্যতা ক্ষমতার দ্বারা চালিত,
এতে মমতার স্থান অল্প।’—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
.
১
শস্যের ভেতরে থাকে ভূতের রাজা
.
তার হাতে বাজে প্রতিদ অপমান…
তার মুখে বাজে প্রতিশ্রুতির গান
.
মানুষ পশুরা তাকে দেয় মান
স্বার্থান্বেষীরা তাকে দেয় মান
.
২
ধর্ষণের পর ধর্ষক চলে গেল
.
রিক্ত মরুভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে
সভ্যতার ছলনা
.
সেই ছলনা গায়ে মেখে নেচে ওঠে আনন্দনগরী
সেই ছলনা গায়ে মেখে কেঁদে ওঠে নগরনন্দিনী
.
৩
রে বণিক সভ্যতা, অর্থকে ভেবেছ বন্ধু
মানুষকে নয়!
.
ধ্বংসের বিশ্বরূপ দেখাও শুধু
আর নয়, মুক্তি দাও
.
মুক্তি চাই আমাদের
কথা ও বোধের মহিমা নিয়ে
.
বেঁচে থাক পৃথিবী,
আমাদের উৎসব
.
ছবি
অস্পষ্ট হচ্ছে আর রহস্য ফুটছে আস্তে আস্তে:
সেই হাওয়া নেই, সেই ফাঁক নেই, দান দিতে হয়
সাবধানে; অন্যথায় ঘর ছেড়ে যায়,আলো ছেড়ে
যায়, জলও। খোলা মাঠে দীর্ঘতর দিন, দীর্ঘতর
রাত, তুমি শিশু হয়ে ফিরে যাও মাতৃক্রোড়ে, আজ
সেই আপন ফাঁকও কেবলই হারাও, প্রতি রাত্রে
ঘুমে শিরায় শিরায় খুবলে যায় বাঁধা সব ছক,
‘ধীরে উতল রজনী ধীরে’ কানে কানে বলে যায়।
প্রতিটি সকালে এরই প্রতিধ্বনি শোনো দশ দিকে
দশাননে, অতএব দিনের ভিতরে দিন শেষ
রাতের ভিতরে রাত। অপড়া বা পড়া, যাই হোক
তুমি বোঝো দৃশ্যে ছবি খুব স্পষ্ট, এতটুকু
রহস্য কোথাও নেই, যদিও রহস্য আস্তে আস্তে
ফোটে, ছবি স্পষ্টতর হয় একটু একটু করে।
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য
প্রয়াণগাথা : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের বারোটি কবিতা
বন্ধু-বান্ধবীর জন্য একগুচ্ছ কবিতা
মুক্তপদ্য
ইচিং বিচিং পদ্য : সুনীল শর্মাচার্য
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
সুনীল শর্মাচার্যের দশটি কবিতা
নাসিমা খাতুনের কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা