
খুচরো কথা চারপাশে
শীত ভাবনা
সুনীল শর্মাচার্য
শীত ভাবনা
ভাবছিলাম এখন আর নির্দিষ্ট মাস ধরে ছয় ঋতুর দেখা মেলে না! গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত, স্বমহিমায় ঘোষণা করলেও, শরৎ-হেমন্ত-বসন্ত বড় লাজুক। ফাঁক বুঝে একটু দেখা দিয়েই মিলিয়ে যায়।
গ্রীষ্মের দাবদহে জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠলে, আমরা মেঘ-দূতের দিকে তাকিয়ে থাকি। ফুটিফাটা মাঠ অপেক্ষায় থাকে রজঃস্বলা হওয়ার। তারই মাঝে শীত এলে আমরা, মানে শীতকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করবার আয়োজনে যাদের খামতি নেই, খুশিতে ডগমগ হয়ে উঠি।
গায়ে তখন ওঠে নিত্যনতুন ডিজাইনের রকমারি গরম পোশাক। ভোজন সুখের ঔজ্জ্বল্য নিয়ে বড়দিন হাতছানি দেয়, পিকনিক স্পট, চিড়িয়াখানা, বনে বাদাড়ে, আরো কত-না খুশিতে ভেসে বেড়াবার মনোরম স্থান।
মফস্বল শহর ছাড়িয়ে গ্রামবাংলাতে আনন্দের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। নলেন গুড়, পিঠে-পুলিতে করে তোলে রসসিক্ত। কিন্তু শীতের এই আমেজে কতজনই-বা বিভোর হয়ে থাকতে পারে?
যাদের অন্ন জোটে না, ভাঙা ঘর থেকে যারা চাঁদের আলো দেখে, ফুটপাতে ফুটপাতে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে যারা শীতের কামড়ে কুঁকড়ে মরে, তাদের কথা কে ভাবে?
বন্যা, ভূমিকম্প, নানা রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগে পীড়িতদের জন্য ত্রাণ মেলে। অথচ শীত যাদের জীবন ছিনিয়ে নিচ্ছে, তারা থাকে ‘নিষ্ফলের হতাশের দলে।’ সেলসিয়াস নয়, শীতে কতজন মারা গেল, সেই খতিয়ান দেখিয়ে শীতের তীব্রতা বোঝানো হয়। কাজেই মরুক না!
‘স্যাঁতসেঁতে ভিজে ঘরে উত্তাপ আর আলো দিও
আর উত্তাপ দিও রাস্তার ধারে ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।’
—কবি সুকান্তের এই আর্তি সূর্যদেবের কাছে। মানুষের প্রতি তাঁর মতো সহানুভূতি যদি আমাদের থাকত, তবে বস্তিতে বস্তিতে, পথে পথে এমন মৃত্যু-মিছিল দেখা যেত না।
শীতের কুয়াশা মেখে যারা পৃথিবীকে ধিক্কার জানাতে জানাতে নিথর হয়ে যায়, জীবনানন্দ দাশের মতো তারাও কি প্রার্থনা করেছিল—
‘আমারে কুড়ায়ে নেবে মেঠো ইঁদুরের মতো মরণের ঘরে
হৃদয়ে ক্ষুদের গন্ধ লেপে আছে আকাঙ্ক্ষার—তবুও তো চোখের ওপরে
নীল মৃত্যু-উজাগর-বাঁকা চাঁদ,শূন্য মাঠ, শিশিরের ঘ্রাণ।’
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
গল্প
প্রবন্ধ
কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য
মুক্তগদ্য
খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে
ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন
22 thoughts on “শীত ভাবনা”