সবজি চাষে শ্রমিকদের কাজের অভাব হয় না, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে। শীত আসতে এখনো অনেক দেরি। তবে চাহিদাপূরণে আগাম শীতকালের সবজি চাষাবাদ শুরু করছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে সবজির চারা প্রস্তুত হয়ে গেছে। চলছে পরিচর্যা ও রোপন করার জমি তৈরির কাজ।
চারা রোপন করতে মাঠে জৈব সার প্রয়োগ করছেন চাষিরা। আগামী কিছু দিনের মধ্যেই ফুলকপি, বাঁধা কপির চারা রোপন করবেন তারা। রোপনের ৬০ দিনের মধ্যে শীতের বাজারে আসবে চাষিদের উৎপাদিত ফুলকপি ও বাঁধা কপি।
এরই মধ্যে লাউ, ঝিঙ্গা, মুলা বাজারে উঠতে শুরু করেছে। শিম, টমেটো, বেগুন কিছু দিনের মধ্যেই বাজারে উঠবে বলেও জানান চাষিরা।
বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করে নিজেদের ভাগ্যেরও পরিবর্তন করেছেন অনেকে। অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে সারা বছর কাজ থাকে না। কিন্তু দেশের উত্তরাঞ্চলে সারা বছরই সবজি চাষাবাদ হওয়ার কারণে কৃষি শ্রমিকদের কাজের অভাব হয় না।
বেশি ফলনের জন্য আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের সবসময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফলন ও মূল্য ভালো থাকায় সবজিতে কৃষকরা বেশ মুনাফা পাচ্ছেন।
সবজি এলাকাখ্যাত লালমনিরহাটের কমলাবাড়ীর চড়িতাবাড়ী গ্রামের কৃষক রমজান আলী বলেন, ফুলকপি চাষের জন্য জৈব সার দিয়ে আমার এক একর জমি প্রস্তুত করেছি। সবজির বীজ বপন করেছি কিছুদিন আগে। বৃষ্টি ও রোদ থেকে বাঁচাতে চারা বীজের বেডের ওপর পলিথিনের ছাউনি দিতে হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে আমার জমির ফুলকপি বাজারে পাঠানোর লক্ষ্য রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বিভিন্ন জাতের সবজির চাষাবাদ করছি। গত বছর এক একর জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করে খরচ বাদে ৮০ হাজার টাকা লাভ করেছি। চলমান বাজার ও আবহাওয়া ভালো থাকলে, একই জমি থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে আশা রাখছি।
একই গ্রামের চাষি আলাল উদ্দিন বলেন, মাত্র তিন হাজার টাকা খরচ করে ১১ শতাংশ জমিতে লাউ চাষ করছি। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই লাউ বাজারে বিক্রি করা যাবে। বর্তমানে প্রতি পিস লাউ ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ বিক্রি করা যাবে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। আর লাউ শেষ হলে বরবটির চারা একই মাচায় বড় হবে। একই খরচে দুই ফসল চাষ করা।
আলাল উদ্দিন বলেন, শাক-সবজির মধ্যে লাউ, শিম, বরবটি, পটল, করলা, শসা প্রভৃতি চাষাবাদে মাচা তৈরিতে বেশি খরচ হয়। তাই একই মাচায় একাধিক ফসল ঘরে তুলতে পারলে লাভবান হন চাষিরা।
এ অঞ্চলের বেশকিছু ভূমিহীন চাষি রয়েছেন। যারা জমি বর্গা বা ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন। এসব সবজি ক্ষেতে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরিতে শ্রম বিক্রি করে চলে অনেক কৃষি শ্রমিকের সংসার।
দেখা যায়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে সারা বছর কাজ থাকে না। কিন্তু এ অঞ্চলে সারা বছরই সবজি চাষাবাদ হওয়ার কারণে কৃষি শ্রমিকদের কাজের অভাব হয় না।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলীনুর রহমান বলেন, লালমনিরহাট জেলার সব থেকে বেশি সবজি চাষাবাদ হয় কমলাবাড়ী ইউনিয়নে। বেশি ফলনের জন্য আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের সব সময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ফলন ও মূল্য ভালো থাকায় সবজিতে কৃষকরা বেশ মুনাফা পাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারো চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলে আশা রাখি।
—ডেস্ক শুভ কৃষি
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
করোনায় দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ১০৮, শনাক্ত ৫৮৬৯ জন
করোনায় আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্ত, মৃত্যু ৮১
একদিনে করোনায় ৮৫ জনের মৃত্যু