করোনায় দেশে একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের নতুন রেকর্ড হয়েছে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১১৫২৫ জন। চলমান মহামারিতে এই প্রথম একদিনে শনাক্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াল। এ-সময় আরো ১৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে—যা করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
আজ মঙ্গলবার (৬ জুলাই ২০২১) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯ লাখ ৬৬ হাজার ৪০৬ জন; মৃত্যু হয়েছে ১৫৩৯২ জনের এবং সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৪৩৩ জন। এ-সময় ৩৬৬৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়; শনাক্তের হার ৩১.৪৬ শতাংশ।
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাপ্তাহিক রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪০টিই সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ায় গত ২২ জুন থেকে ঢাকাকে সারাদেশ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তারই অংশ হিসেবে ঢাকার আশপাশের চারটি জেলাসহ মোট সাতটি জেলায় জরুরি সেবা ছাড়া সব ধরনের চলাচল ও কার্যক্রম ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
এর পরও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ২৮ জুন থেকে সারাদেশে সব গণপরিবহন ও মার্কেট–শপিং মল বন্ধ রাখা হয়েছে। আর গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে সর্বাত্মক লকডাউন, বন্ধ থাকবে সব সরকারি–বেসরকারি অফিসও। সর্বাত্মক লকডাউন ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডানুযায়ী, কোনো দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কি-না, তা বোঝার অন্যতম নির্দেশক হলো রোগী শনাক্তের হার। কোনো দেশে টানা অন্তত দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার পর ক্রমেই মহামারি আকারে সংক্রমণ বিশ্বের প্রায় সব দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
গত বছরের (২০২০) ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম শনাক্তের খবর জানানো হয়। এর ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ করোনায় দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে সরকার।
করোনা পরিস্থিতিতে আরো নির্দেশনা
- যে কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ থাকলে কাছের পরীক্ষাকেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষা করাবেন। যত পরীক্ষা করা হবে, ততই করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
- তাই সামান্য জ্বর বা কাশিকে অবহেলা করবেন না। তা ছাড়া কোনো কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও, নমুনা পরীক্ষা করাবেন।
- আপনার সুরক্ষা আপনার হাতে। সঠিকভাবে মাস্ক পরুন। সব বিধি মেনে চলুন। সবাই সচেতন না-হলে যে কেউ যে কোনো সময় আক্রান্ত হতে পারেন।
- বিশেষ করে, রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করুন। নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন। পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন। জনসমাগম এড়িয়ে চলুন, সাবান-পানি দিয়ে বারবার হাত ধোয়ার নিয়ম মানুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম, ভালো টিভি নাটক, সিনেমা দেখে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখুন। প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। মহামারির সময় পর্যাপ্ত ঘুম গুরুত্বপূর্ণ।
- যে কোনো দুর্যোগে শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাদের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হোন।
- নারীর প্রয়োজনের প্রতি বিশেষ অগ্রাধিকার দিন। মানসিকভবে উজ্জীবিত রাখার পথ নিজেকে খুঁজে নিতে হবে।
- মায়ের দুধে করোনা ছড়ায় না, সে-কারণে শিশুকে বুকের দুধ পান করান। দুধ পান করানোর সময় মায়েরা মুখে মাস্ক পড়ুন।
—শুভ নিজস্ব প্রতিবেদক
…………………
পড়ুন
করোনার উপসর্গ দেখা দিলে কোথায় যাবেন
করোনায় জরুরি সাহায্য পেতে ফোন নম্বর
করোনা থেকে সুস্থতার পর যেসব উপসর্গ থেকে সতর্ক থাকবেন এবং করণীয়
প্রয়োজনে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
করোনায় আরো ১৭৮ জনের মৃত্যু
টানা ২০ দিন পর দৈনিক মৃত্যু দুইশ’র নিচে ১৯৭ জন
করোনায় আরো ২১৫ জনের মৃত্যু