shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

আফরোজা অদিতির পাঁচটি কবিতা

Five poems by Afroza Aditi

Five poems by Afroza Aditi

Five poems by Afroza Aditi

আফরোজা অদিতিপাঁচটি কবিতা

.

তোমার আকাশ

নীল আকাশটা চিরে দিয়েছে কারো ধারাল ঠোঁট।

নীলের টুকরো ছড়িয়ে পড়ছে দুঃখের আকরে

প্রকৃতির বুকে।

.

সাগর মাতাল। ডুবিয়ে দিয়েছে জেলে নৌকা।

মাঝি ছেঁকে তুলতে পারছে না সুখের শুভ্রমুক্তো।

লন্ডভন্ড জাল।

.

ফুলগুলো মলিন। মুমূর্ষ। কাছে নেই ভ্রমর।

থেমে আছে দিকভ্রান্ত কালের জয়রথ।

.

পথ হারিয়েছ কী মেঘ নিষ্ঠুর কঙ্করে?

.

মেঘ ঘুরে দাঁড়াও। জোটবদ্ধ হও। গর্জে ওঠ

সঘন বিদ্যুতে। নীলাভ আঁচলে নীলিম করো

তোমার আকাশ।

আফরোজা অদিতির কবিতা

ভালোবাসার দ্বারে

দুপুর যে তাঁর গোপন ব্যথায় ভরা

চোখ দুটোতে শুধুই জলের খেলা

শালুকদুপুর আর কখনো

হয় না যে তাঁর দেখা!

.

লালচে বিকেল দিনের খেয়া বেয়ে

থমকে দাঁড়ায় তাঁর পাশটি ঘেঁষে

লক্ষ্মীপেঁচার পলকবিহীন চোখ

বুকের কোলে দুঃখ বয়ে আনে

.

রাতের বেলা হৃৎকমলের বনে

বাদল হাওয়া ছড়ায় গহনমেঘে

কদমফুলের বৃষ্টিভেজা মুখ

হঠাৎ করেই চঞ্চলা হয় যে

.

অনেক আগেই গিয়েছে চলে প্রিয়

হৃদয়খানি কাঙাল এখন ভোরে

ভিখেরি হয়ে অর্ঘ্যপাত্র হাতে 

দাঁড়িয়েছে আজ অরিষ্ট সেই

ভালোবাসার দ্বারে।

আফরোজা অদিতির কবিতা

আফ্রোদিতি

আচমকা টেলিফোন

ভেসে এলো ভেজা দিনের

মতো কথা—‘সুপ্রভাত

আফ্রোদিতি, আছো কেমন হয়ে

অন্তরীণ

ভলোবাসার লাল ইটের বাড়িতে’

কবিতার শব্দে সাজিয়ে শব্দগুলি

ছড়িয়ে দিয়ে বুকের ভেতর

নদী হলো সে।

.

দ্বিতীয়বার শুনতে পেলাম তাঁকে

‘আছো কেমন আফ্রোদিতি’—তাঁর

সুন্দরী প্রতিযোগিতার

সুন্দরীদের মতো বিন্যস্ত কথার

ফুলঝুরিতে হেসে উঠলাম কাঁচভাঙা

শব্দের হাসি।

.

এর পর সে 

‘তোমার হাসিতে হাটখোলা বুকে

সাগরের উত্তাল যন্ত্রণায় দেখতে ইচ্ছে

করছে তোমাকেই, তুমিই অবারিত

আকাশ আমার’—বলেই রেখে দিলো

টেলিফোন।

আফরোজা অদিতির কবিতা

বাজিতপুরী

বিপদসীমার ওপরে নদী,

ভাঙন ঠেকান গেল না আর!

ঈশ্বরের ওপর দোষ চাপিয়ে ওরা হলো

শহরমুখী।

.

বাসের ছাদে পোটলা-পুটলি সঙ্গে ওরাও।

ওদের সঙ্গে হাড্ডিসার চার আর তালিমারা

বাজিতপুরিতে একা! উঠতি বয়সের ঘুড়ির

চোখে-মুখে চিকচিকে ভেজা বালির মতো

স্বপ্নসম্ভার!

.

বাসের ছাদ থেকেই

ঘুড়িটাকে খামচে নিয়ে গেল কয়েকটা

নখরি চিল, অজানা শহর, এর-তার

হাতে-পায়ে ধরা, হলো না কিছুই!

.

কোথাও ছায়া নেই, কোথাও ওড়ে না ঘুড়ি!

বাবার মাথায় হাত, মায়ের করুণ চোখে বর্ষা

শহরে উজ্জ্বল আলো, কিন্তু ওদের কালো কপাল

হয় না উজ্জ্বল।

.

একসময় নখরি চিলগুলো

লোফালুফি ওড়াউড়ি খেলাখেলি শেষে

উড়িয়ে দিলো ঘুড়িটাকে, ঘুড়িটা গোত্তা খেয়ে

পড়ল ফেলে রাখা আবর্জনাস্তুপে।

মাস খানেক পর পচা-গলা বাজিতপুরি

দেহের কঙ্কাল; বেওয়ারিস!

.

ঈশ্বর অসহায়! শত ডাকাডাকি!

লক্ষ দোষারোপ কিছুই তো নেই তাঁর হাতে!

আফরোজা অদিতির কবিতা

একটি পুরনো গল্প

লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে শেয়ার বাজার

মনের ভেতর আকুপাঁকু সুখবর্ষা হবে বেজায়—

সোনালী বর্ষা!

.

গ্রামে গিয়ে ভাগ বাটোয়ারার জমি-জমা

বিক্রির অর্থ লগ্নি করে শেয়ার বাজারে

অজান্তেই জিম্মি করলো নিজেকে!

.

সোনালী স্বপ্নে বিভোর চোখ দেখতে পেল না

ঈশ্বরের হাসি!

.

একদিন দুম করে বয়ে গেল উল্টো হাওয়া…

ধস নেমেছে বাজারে

মিটিং মিছিল অনশন কিছুতেই কিছু হলো না

.

ছেলে-মেয়ে স্ত্রীর না-খেয়ে থাকার জোয়ার

একদিন দশতলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে

বাধ্য করল তাঁকে।

.

অসহায় ঈশ্বর 

ভিজে চোখে অন্তরালেই রয়ে গেলেন তিনি!

About The Author

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...