দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের উপর হামলার ঘটনায় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে। এ ছাড়া ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
হাকিমপুর থানার ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ ওসি জানান, র্যাব, পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি ও পুলিশের বেশকিছু ইউনিট রাতভর অভিযান চালিয়ে আজ ভোরে (শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০) জেলার হিলির কালিগঞ্জ এলাকা থেকে আসাদুল হক (৩৫) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। তার বাড়ি ঘোড়াঘাট উপজেলার সাগরপুর এলাকায়। বাবার নাম আমজাদ হোসেন।
ওসি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাকিমপুর, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট থানা এবং র্যাব রংপুর-১৩-এর একটি দল যৌথভাবে অভিযযান চালিয়ে শুক্রবার (আজ) ভোর ৪টা ৫০মিনিটের দিকে হিলির কালিগঞ্জ এলাকা থেকে আসাদুলকে গ্রেফতার করে। তাকে রংপুরে র্যাব-১৩-এর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া জাহাঙ্গীর (৪২) নামে আরো একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাড়ি ঘোড়াঘাটের রাণীগঞ্জ এলাকায় বলেও জানান ওসি।
এদিকে, ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম জানান, ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে ঢুকে তাঁকে ও তাঁর বাবার ওপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর ২০২০) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘোড়াঘাট থানায় এ সংক্রান্ত এজাহার দায়ের করেন ইউএনওর ভাই মো. শেখ ফরিদ উদ্দিন। এজাহারে অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (২ সেপ্টেম্বর ২০২০) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে দুর্বৃত্তরা ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসে ইউএনওর সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর দিয়ে বাসায় ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে শুরু করে। এ-সময় চিৎকারে তাঁর সঙ্গে থাকা বাবা ওমর আলী ছুটে এসে মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা তাঁকেও কুপিয়ে জখম করে। পরে অন্য কোয়ার্টারের বাসিন্দারা বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশে খবর দেন।
এই হামলা কে বা কারা কেন চালিয়েছে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা স্থানীয় পুলিশ কিংবা প্রশাসন দিতে পারেনি।
তাঁদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুরে পাঠানো হয়। ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে রংপুর ডক্টরস ক্লিনিকে আইসিইউতে ও তাঁর বাবাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গুরুতর আহত ওয়াহিদা খানমকে পরে বৃহস্পতিবার বিকালে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে ঢাকার এনে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ছয় সদস্যবিশিষ্ট চিকিৎসক দলের প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ইউএনও ওয়াহিদার মাথার জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। অস্ত্রোপচার শেষে তাকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
ঘোড়াঘাট থানার ওসি আমিরুল ইসলাম জানান, ইউএনওর ভাই শেখ ফরিদ বৃহস্পতিবার রাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে একটি মামলা করেছেন। এই ঘটনায় থানা পুলিশ ছাড়াও র্যাব, ডিবি ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে জানিয়ে ওসি বলেন, কয়েকজনকে আটক করে থানার বাইরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে কাউকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
তাদের পরিচয় না জানিয়ে ওসি বলেন, গ্রেপ্তারের পর থানায় আনা হলে তাদের নাম জানা যাবে।
ওয়াহিদার উপর হামলার সময় তার বাবা ওমর আলী সেই বাসায় ছিলেন। নওগাঁ থেকে তিনি মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। হামলায় তিনিও আহত হন। তাকে ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ওয়াহিদার স্বামী মেজবাহুল হোসেন রংপুরের পীরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি ছিলেন তাঁর কর্মস্থলে।
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
করোনায় দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ১০৮, শনাক্ত ৫৮৬৯ জন
করোনায় আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্ত, মৃত্যু ৮১
একদিনে করোনায় ৮৫ জনের মৃত্যু