খুচরো কথা চারপাশে
ঈশ্বর আল্লা তেরে নাম
সুনীল শর্মাচার্য
ঈশ্বর আল্লা তেরে নাম
ঈশ্বর আল্লা তেরে নাম
ঈশ্বর আল্লা তেরে নাম/ সবকো অশান্তি দে ভগবান
ঐশী কলুষমুক্ত পৃথিবী দেখে যাবার কোনো সম্ভাবনা দেখি না! মানুষ যেন দিনে দিনে আরো ধর্মান্ধ হয়ে পড়ছে। ভাবি, এটা যদি আত্মোপলব্ধি হয়, তবে সেটা কি ‘আত্মা’বিহীন। আবার ভাবি, যেদিন ঈশ্বর থাকবেন না, জানি সেদিন জগৎ অস্তিত্বহীন।
ধর্ম যেন মানুষের খিদে হয়ে গেছে। ঈশ্বর বা আল্লাহ যেদিন থাকবে না, সেদিন রাজনীতি থাকবে। দোষ ঈশ্বর বা আল্লাহর নয়। দোষ মানুষের। অশান্তি সে নিজেই সৃষ্টি করে।
.
কবি মানুষকেই উন্মোচন করেন
জীবনের বোধ থেকেই কবির বোধ। মানুষের অন্তর্লোক এবং বহির্লোক নিয়ে জীবন। কবি সেই জীবনের দ্রষ্টা, রূপকার এবং ভাষ্যকার। তাই কবিতায় মানুষের কথা আসে, বর্ণনায় এবং ব্যঞ্জনায়, তার স্বপ্ন এবং দুঃস্বপ্ন, উল্লাস এবং যন্ত্রণা, সংকল্প এবং বিহ্বলতা নিয়ে। কবিতার পরতে পরতে কবি মানুষকেই উন্মোচন করেন, আবিষ্কার করেন।
.
সাহিত্য পুরস্কার নিয়ে
সাহিত্যে পুরস্কার নিয়ে ভাবলেই মন বিষিয়ে ওঠে। প্রকৃত সাহিত্য বিচার, প্রকৃত সাহিত্য সেবক কি পুরস্কারে ভূষিত হন? না, কখনোই না। তেলা মাথায় তেল দেবার প্রক্রিয়া আগাগোড়া। সেখানে রাজনীতি, সংঘ, দল, নেতৃত্ব, মিডিয়া ঘেষা, চাটুকারগণই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরস্কৃত হন।
দেশীয়, এশীয়, আন্তর্জাতিক পুরস্কারও এর বাইরে নয়। কোনো পুরস্কার না-পেয়েও বঙ্কিমচন্দ্র, জীবনানন্দ, টলস্টয়, শেক্সপিয়ার উজ্জ্বল।
পুরস্কার ব্যাপারটাই গোলমেলে। তাই পুরস্কৃত লেখক, বইও দেখি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জলো জলো!
.
লেখক হিসেবে আমি
একটা কথা খুব পরিস্কার করে আজ বলা দরকার বলে আমি মনে করি। আমি সুনীল শর্মাচার্য ওরফে সুনীল আচার্য ওরফে হৃদয় নূর ওরফে তন্দ্রা হক ওরফে ইসা সৈয়দ প্রায় তিরিশ বছর ধরে লেখালেখি করি এবং একদম নিজে যেভাবে ভাবি সেভাবেই লিখি।
জনপ্রিয়তার ধার যেমন ধারি না, তেমনি কে কি ভাবলেন তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমাকে কেউ টেকেন ফর গ্রান্টেড ভাবলে সেটা তাঁদের ভাবনা। আমার নয়। আমার লেখা ভবিষ্যতে কোনো পত্রিকায় ছাপা না-হলেও, আমার কিৎস্যু যায় আসে না। একজনও পাঠক না পেলেও না।
আমি লিখি আমার নিজের লিখতে ইচ্ছে হয় বলে এবং আমি কোনো লেখক বা কবিদের সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত নই। হতেও চাই না। আমি সম্পূর্ণ একাই থাকতে চাই। একা, একদম একা। এটাই আমার শেষ কথা।
কোনো মঞ্চেরও আমি কেউ নই। আমি এসবের থোড়াই কেয়ার করি এবং এটাই আমার শেষ কথা।
.
‘দেশ’ পত্রিকা নিয়ে
দেশ পত্রিকায় সত্যিই এখন তেমন ভালো কবিতা ছাপা হয় না। আশির দশক থেকে এই কাগজটির মান এত হ্রাসমান যে, গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে বহু আগেই। বরং আশ্চর্য হতে হয়, এই জন্য যে, তরুণ কবিরা এখনো এই কাগজটিকে গুরুত্ব দিয়ে লেখা পাঠাচ্ছেন। দেশের অহঙ্কার যেন নিজের বিষ্ঠার গন্ধে নিজেই মুগ্ধ!
আমাদের আশেপাশের অনেক লোক এখনো সাহিত্য মানেই দেশ পত্রিকা বোঝে! সেখানে গল্প-কবিতা ছাপা হলে নিজেকে হনু ভাবে এবং হাঁক-ডাক দেয়! ভাবি, দেশ পত্রিকা বন্ধ হলে বাংলা সাহিত্য বেঁচে যেত!
.
পৃথিবীর অধিকাংশ রচনা
শুঁয়োপোকা থেকে প্রজাপতির জন্ম পেতে যে সাধনা দরকার, তাকে মূককীট বলা হয়। প্রাণী বিজ্ঞানের এই সংজ্ঞা জানার পর থেকে পৃথিবীর অধিকাংশ রচনা মিথ্যে মনে হয়!
.
বেঁচে থাকা মানেই
I will drink life to the less. বেঁচে থাকা মানেই জীবন উপভোগ করা। খাবারের শেষ পর্যন্ত শেষ বিন্দুকে গ্রহণ করা।
পণ্ডিত রবিশঙ্কর অক্সিজেন নল লাগিয়ে শেষ কনসার্ট করেছেন। আমরা অনেকে মৃত্যুর অনেক আগেই মরে যাই।…
জীবনকে মদিরা ভেবে শেষ পর্যন্ত চেটেপুটে দেখতে হবে।
.
সারা পৃথিবীতে আজ
সারা পৃথিবীতে আজ অস্ত্রের দামামা। বেচার লোকের থেকে কেনার লোক বেশি। আপনার চৌকাঠ পেরুলেই দুষমন। হলফ করে বলছি, তারা আপনার জানাজা আর দাফন দেখতে চায়। আমার জন্য যন্ত্রের হরিনাম আর বদ্ধ চিতার তাপ। কেউ না, কেউ না, কেউ কাউকে ভালোবাসে না।
ইরান, ইরাক, সিরিয়া, সৌদি, লেবানন, মিশর, প্যালেস্টাইন, লিবিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত; ওদিকে মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল আর কত বলব, সবাই ভুগছে হিংসা লোভ ঈর্ষা আর পরশ্রীকাতরতার দগদগে চর্মরোগে। নিস্তার শুধু মাটির তলায়।
আমরা গাছপালার ওষুধও ভুলেছি। আমাদের অনেক বিপ্লবী বন্ধুও কিন্তু এ্যালোপ্যাথি ছাড়া অন্যসব কিছুতেই অবান্তর অবাস্তব মনে করেন। এটাও কিন্তু মাল্টিমিডিয়া এবং তাদের মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর অমোচনীয় নির্দেশ। অস্বীকার করতে পারি না।
সুতরাং বাঁচতে গেলে পালিয়ে হবে না। ফেসবুক করতে হবে। লড়াই জাহির রাখতে হবে। নিজের বাঁচার স্বার্থে।
.
আর্যগণ বহিরাগত
আর্যগণ কোথাকার লোক? কীভাবে ভারতীয়? এই তর্কে, কিংবা উৎস সন্ধানে ব্রতী হই।
দেখছি, ঋগ্বেদের দশম অধ্যায়ে লেখা আছে যে ‘আমরা (বৈদিক ব্রাহ্মণ) উত্তর মেরুর লোক, যখন আর্য এবং অনার্যদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল।’
বালগঙ্গাধর তিলক (ব্রাহ্মণ) রচিত গ্রন্থে ‘The Arctic Home At The Vedas’ লিখেছেন ‘আমরা বহিরাগত।’
জওহরলাল নেহেরু (বাবরের বংশধররা আবার কাশ্মীরি পণ্ডিত হয়ে ওঠেন) তাঁর ‘Discovery of India’ বইতে লিখেছেন যে, ‘আমরা মধ্য এশিয়ার মানুষ, এই জিনিসটি কখনো অস্বীকার করা যাবে না।’ এরকম প্রায় ৩০টি পত্র তিনি ইন্দিরাকে লিখেছিলেন, যখন ইন্দিরা গান্ধী হোস্টেলে পড়তেন।
‘বলগা থেকে গঙ্গায়’—রাহুল সংস্কৃতায়ণ (কেদারনাথের পাণ্ডে ব্রাহ্মণ) লিখেছেন যে, ‘আমরা বাইরের লোক’ এবং কীভাবে বলগা থেকে গঙ্গা উপকূলে (ভারত) আসতে হবে সেই নির্দেশিকাও দিয়েছিলেন।
বিনয়াক সাভারকর (ব্রাহ্মণরা) ‘সহা শোনরি পানে’ নামক মারাঠি বইতে লিখেছিলেন যে, ‘আমরা ভারতের বাইরের মানুষ।’
ইকবাল ‘কাশ্মীরি পণ্ডিত’ যিনি ‘সারে জাহান সে আচ্ছা’ গানটি লিখেছিলেন, তিনিও স্বীকার করেছেন যে, ‘আমরা বাইরে থেকে এসেছি।’
রাজা রামমোহন রায় ইংল্যান্ডে গিয়ে তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন যে, ‘আজ আমি আমার পৈতৃক দেশে ফিরে এসেছি।’
১৮৯৪ সালে মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধীর (বৈশ্য) দ্বারা দক্ষিণ আফ্রিকার আইনসভায় লেখা একটি চিঠি অনুসারে, ‘আমি ইন্ডিয়ান হওয়ার সাথে সাথে ইউরেশিয়ানও, তাই আমাদের জাত একই, তাই শাসকের কাছ থেকে ভালো ব্যবহারের প্রত্যাশা রাখছি।’
তারপর আরো জানতে নিচের বইগুলোর পাতা উল্টাই :
১. মনুস্মৃতি বইয়ের শ্লোক নং ২৬।
২. লালা লাজপত রায় রচিত ‘ভারতবর্ষ কা ইতিহাস’ বইয়ের ২১-২২ পৃষ্ঠা।
৩. পণ্ডিত শ্যামবিহারী মিশ্র এবং সুখদেব বিহারী মিশ্র রচিত ‘ভারতবর্ষ কা ইতিহাস’, পর্ব ১, পৃষ্ঠা ৪২-৪৩।
৪. পণ্ডিত জনার্দন ভট্ট (M.A.) দ্বারা লিখিত মাধুরী মাসিক—‘ভারতীয় প্রত্নতত্ত্বের নতুন আবিষ্কার ১৯২৫’ পৃষ্ঠা ২৪ এবং ২৯।
৫. ‘হিন্দি ভাষার উৎস’—আচার্য মহাভীর দ্বিবেদী।
৬. ‘হিন্দুত্ব’—লক্ষ্মীনারায়ণ গারদে, পৃষ্ঠা ৪-৯ এবং ২৯।
৭. ‘আর্যদের আদিম নিবাস’—পণ্ডিত জগন্নাথ পাঞ্চোলি
৮. ১৬ এবং ২৯তম ভারতীয় হিন্দু সম্মেলনে রামানন্দ চ্যাটার্জীর বক্তৃতা।
৯. ‘কাকা কালেলকর’ রিপোর্ট।
১০. ‘ধর্ম শার্সচা ইতিহাস’—প. বি. কানোকরনা।
১১. ‘হিন্দু সভ্যতা’—রাধাকৃষ্ণ মুখার্জি, পৃষ্ঠা ৭, ৫৯ এবং ৬১।
১২. ‘বলগা থেকে গঙ্গা’—রাহুল সংস্কৃতায়ণ।
১৩. ‘চিতপাবন’—এন. জি. চফেকার, পৃষ্ঠা ১৯৫।
১৪. ‘কোঙ্কানস্থ চিতপাভানের গ্রীক উৎস’—প্রতাপ জোশী।
—এইসব পড়ে পড়ে বুঝি, আর্যরা বহিরাগত এবং ভারত বহিরাগত দ্বারা শাসিত হচ্ছে চিরকাল। আদি অনার্য ভারতীয়রা সেখানে কোথায়? সবই হ-য-ব-র-ল ইতিহাস—যা আমরা পড়ি, জানি!
…………………
পড়ুন
মুক্তগদ্য
খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে
ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন
বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে
ভারতে চীনা দ্রব্য বয়কট : বিষয়টা হাল্কা ভাবলেও, সমস্যাটা কঠিন এবং আমরা
রাজনীতি বোঝো, অর্থনীতি বোঝো! বনাম ভারতের যুবসমাজ
ভারতে শুধু অমর্ত্য সেন নয়, বাঙালি সংস্কৃতি আক্রান্ত
ভারতের CAA NRC নিয়ে দু’চার কথা
ভারতের এবারের বাজেট আসলে অশ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধু কর্পোরেট কা
ইন্ডিয়া ইউনাইটেড বনাম সেলিব্রিটিদের শানে-নজুল
করোনা, ভারতীয় জনগণ ও তার সমস্যা
ধরি মাছ না ছুঁই পানি, ফেসবুক, কবিতা ও অন্যান্য
আমরা প্রত্যেকেই আজ ফ্যাসিস্ট এবং প.বঙ্গের বাঙালিরা
ফেসবুক, কবি, বুনো ফুল এবং আমিও পলিটিক্যাল
নিত্য নতুন বাঁশ, লিটল ম্যাগাজিন ও অন্যান্য
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য
প্রয়াণগাথা : সুনীল শর্মাচার্য
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
শিব্রাম বলেছিলেন, কিছু বাস্তব সত্য
বিসর্জন
বয়স বাড়ে কখন, নোটবই ও অন্যান্য