বাংলা ভাষা ও একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা
সুদীপ্ত বিশ্বাস
বাংলা ভাষা ও একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা
বাংলা ভাষা
‘ক’-এর পিঠে ‘ত’ লাফিয়ে যেই হয়েছে যুক্ত
চেষ্টা করেও ‘ক’ তবু্ও পারলো হতে মুক্ত?
‘দ’ চাপতেই ‘ব’-এর ঘাড়ে তৈরি হলো শব্দ
‘দ’ বললো ‘ব’ ব্যাটাকে বেশ করেছি জব্দ।
‘ষ’-এর পিঠে ‘ট’ চাপতেই ‘ষ’-এর পেল তেষ্টা
মুক্তি পেতে ‘ষ’ তবুও করল অনেক চেষ্টা।
এরপরে সে একলা বসে যেই লিখেছে ‘ষণ্ডা’
‘ণ’-এর ঘাড়ে পা দিয়ে ‘ড’ খেল মিঠাই-মণ্ডা।
‘ল’-এর পিঠে ‘ল’-ই লাফালে মল্ল লড়ে লড়াই
নিজের পিঠে নিজেই চেপে ‘ড’-এর বড্ড বড়াই।
‘দ’ লাফিয়ে ‘ন’ ব্যাটাকে যেই করেছে বন্দি
সেই থেকে ‘ন’ আঁটছে শুধু একলা থাকার ফন্দি।
তারপরে ‘ন’ একলা বসে লিখতে গেল ‘নন্দ’
তবুও তাকে ছাড়ল না ‘দ’, কপাল এতো মন্দ।
‘ত’ চাপতেই ‘স’-এর ঘাড়ে বাজার হলো সস্তা
অল্প দামে বাজার করে ভরলো সবাই বস্তা।
‘ঙ’ উঠে ‘গ’-এর পিঠে দেখিয়ে দিলো রঙ্গ
এসব নিয়েই বাংলা ভাষা—এসব নিয়েই বঙ্গ!
.
একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা
.
প্রেম
প্রেম মানে তো অন্ধ, জেনেও থমকে থাকি প্রেমে!
এসব কথা ক’জন বলো বোঝে?
অনেক পুড়ে অনেক জ্বলে অনেক ক্ষয়ে ক্ষয়ে
প্রেমিক তবু বিষাদ নদী খোঁজে!
আকাশ থেকে নামলে ঘোড়া কিংবা তারাখসা
হাতছানি দেয় মৃত্যুপুরীর নদী
শীতল বিষে মৃত্যু নামে, প্রেমিক তবু ভাবে,
‘আমার পাশে থাকতে তুমি যদি!’
দুঃখ, হ্যাঁগো দুঃখ পেয়েও তুঁষের আঁচে পুড়ে
সমস্ত রাত অভিমানে ভিজে,
বিষাদরঙা নদীর পাড়ে একলা বসে থাকে
যায় না ফেরত নিজের কাছে নিজে!
.
২
প্রেম মানে তো অন্ধকারে হঠাৎ জ্বলা আলো,
অনেকখানি কষ্ট শেষে একটুখানি সুখ;
প্রেম মানে তো মন খারাপের পাতার ওড়াউড়ি
বিষাদরঙা নদীর পাড়ে কান্না ভেজা বুক।
.
প্রেম মানে তো ডুকরে কাঁদা, ভিড়ের মাঝে একা
মানুষ তবু আটকে পড়ে প্রেমের বাহুডোরে
অথৈজলে সাঁতার কেটে মুক্তো খুঁজে আনে
বাঁচার মানে খুঁজে পাওয়া ভালোবাসার ভোরে।
.
প্রেম মানে তো পাতাল ফুঁড়ে কষ্ট তুলে আনা
সুখ সাগরে ভাসতে গিয়ে অশ্রুধারা ঝরে
গভীর রাতে বালিশ ভেজে, দু’চোখ ভাসে জলে
ভুলতে গেলেও যায় কী ভোলা? বড্ড মনে পড়ে।
.
যাও পাখি
প্রেম মানে তো ‘অন্ধ’, জেনেও থমকে থাকি প্রেমে!
আমার পাশে থাকতে তুমি যদি;
একলা একা পথ চলেছি নিতান্ত নির্জনে—
সঙ্গী শুধু বিষাদরঙা নদী।
.
উদাস বাউল যায় পালিয়ে দূরের থেকে দূরে
চেনা শহর, গাছপালা সব ছেড়ে,
বুকের ভেতর লুকিয়ে রেখে দগদগে সব ক্ষত
আলোর রঙে নিশান জ্বেলে ফেরে।
.
ফেরা মানেই স্মৃতির পাতায় ভিড়ের মাঝে একা
অশ্রুফোঁটা, দুঃখ মেখে থাকি
বদ্ধ বাতাস আটকে ধরে, কষ্ট বয়ে আনে…
মুক্ত আকাশ—যা উড়ে যা পাখি…
.
বাক্যহারা
রাতদুপুরে আসছে উড়ে একটা দুটো স্বপ্ন পাখি
হারানো সেই সোনালি দিন, এখন একে কোথায় রাখি!
আবছা আলোয় চমকে দেখি সেই যে তুমি মেঘের মেয়ে
কলসি নিয়ে দুপুরবেলা একটু দুলে ফিরছ নেয়ে
হালকা রঙা কলকা শাড়ি, দুলছে বেণী ইচ্ছে মতো
স্তব্ধ চোখে থমকে থাকি, আরে এটাই সেই ছবি তো!
সেই যে যেটা হারিয়ে গেছে একটুখানি অসাবধানে
আজ পুরোটা রাখব ধরে, আজকে লিখে রাখব প্রাণে।
গভীর রাতে আবছা আলো, হতেও পারে চোখের ভুল
বলো না তুমি সত্যি করে, তুমি কি সেই টগরফুল?
যাচ্ছে খুলে স্মৃতির পাতা, ডাগর চোখে দেখছি খালি
অরফিউস ও ইউরিডিসি, বুদ্ধদেব ও আম্রপালি…
স্বর্গ বুঝি আসল নেমে আবছা আলো ঘরের কোণে
না-বলা কথা অনেক ছিল পড়ছে না যে কিছুই মনে।
হঠাৎ দেখি কাঁদছ তুমি, তোমার চোখে অশ্রুধারা
তোমার মুখে আমার ছায়া আনন্দেতে বাক্যহারা।
.
বৃষ্টি এলে
বৃষ্টি এলে বুকের ভেতর গোলাপ কুঁড়ি ফোটে
বৃষ্টি এলে মনটা বড় উদাস হয়ে ওঠে।
বৃষ্টি এলে শিউলিতলায়, ছাতিমগাছের ডালে
মনটা বড় কেমন করে বৃষ্টি-ঝরা কালে।
এখন তুমি অনেকদূরে না জানি কোনখানে,
ভিজছো কিংবা গুনগুনিয়ে সুর তুলেছো গানে।
তোমার গানের সেই সুরই আজ বৃষ্টি হয়ে এসে
টাপুরটুপুর পড়ছে ঝরে মেঘকে ভালোবেসে।
মেঘ বিরহী, কান্নাটা তার বৃষ্টি হয়ে ঝরে
তোমার বুঝি মেঘ দেখলেই আমায় মনে পড়ে?
.
অভিলাষ
তুমি যখন নদী হলে
আমার চোখে আলো
সাঁতরে ভাঙি উথালপাথাল ঢেউ
অনভ্যস্ত গহীন গাঙে
আনাড়ি এই মাঝি
তুমিই জানো, আর কি জানে কেউ?
ঠিক সে সময় ঝাপুরঝুপুর
বৃষ্টি যদি নামে
আকাশজুড়ে গলতে থাকে মেঘ
সুখ সাঁতারে শ্রান্ত আমি
ঘুমিয়ে যদি পড়ি
জানবে আমার কেটেছে উদ্বেগ।
ঘুম ঘুম ঘুম ঘুমের দেশে
স্বপ্নমাখা চোখে
দু’হাত দিয়ে জাপটে ধরি নদী
বাঁচতে রাজি অযুত বছর
আলোকবর্ষ পারে
ভালোবাসা, তোমায় পাই গো যদি।
সহজ তুমি সহজ হয়েই
থেকো আমার পাশে
গ্রীষ্ম দিনে, দারুণ মরুঝড়ে
বুকের পাশে নরম ওমের
পালক হয়ে থেকো
শীতের রাতে বরফ যদি পড়ে।
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুদীপ্ত বিশ্বাসের ছয়টি অনুভবের কবিতা
বাংলা ভাষা ও একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা
শিশুতোষ ছড়া–কবিতা
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
সুনীল শর্মাচার্যের দশটি কবিতা
নাসিমা খাতুনের কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা