shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

ঐতিহাসিক রামসাগর দিঘি

Ramsagar Dighi

Ramsagar Dighi

Ramsagar Dighi

বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তম জেলা দিনাজপুর। দিনাজপুর জেলার নাম শুনলেই ভ্রমণ-পিপাসু মানুষদের মনে পড়ে রামসাগরের কথা। নামে সাগর হলেও, এটি মানুষের সৃষ্টি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দিঘি—ঐতিহাসিক রামসাগর দিঘি

শহরের কোলাহল ছেড়ে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চাইলে রামসাগর হবে আপনার জন্য উপযুক্ত পর্যটন কেন্দ্র।

মাঝখানে বিশাল বড় স্বচ্ছ পানির পুকুর। চারদিকে সবুজে ঢাকা বন এবং লাল মাঠির উঁচু নিচু ঢিলা।সব মিলে তৈরি করেছে এক প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য।

গাছগাছালিতে ঘেরা এই দিঘিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে রামসাগর জাতীয় উদ্যান।

অবস্থান ও পরিচিতি

দিনাজপুর শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে আউলিয়াপুর ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে রামসাগর দিঘিটি অবস্থিত। এর আয়তন ৪,৩৭,৪৯২ বর্গমিটার।দিঘিটির দৈর্ঘ্য ১,০৩১ মিটার ও প্রস্থ ৩৬৪ মিটার।

দিঘিটি নির্মাণের  সময় পশ্চিম দিকের মাঝখানে প্রায় ৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের বেলে পাথরের একটি সিঁড়ি নির্মাণ  করা হয়েছিল। যার কিছু অংশ এখনো অবশিষ্ট আছে।

দিঘিটির পাড়ে আম, জাম, কাঁঠাল, সেগুন, আমলকী, হরতকী, দেবদারু, জারুল, কাঞ্চন, বটসহ ১৫২ রকমের গাছ দাঁড়িয়ে আছে।

পর্যটকদের জন্য রামসাগর দিঘির পশ্চিম পাশে রয়েছে একটি সুন্দর দোতলা ডাকবাংলো। ডাকবাংলোর পাশেই রয়েছে একটি মিনি চিড়িয়াখানা।

যার প্রবেশদ্বারটি বনলতায় বেষ্টিত—যা চিড়িয়াখানার সৌন্দর্য্যে এনে দিয়েছে এক প্রাকৃতিক মুগ্ধতা। চিড়িয়াখানায় রয়েছে—হরিণ, বানর, অজগর, পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণী।

চিড়িয়াখানা থেকে একটু সামনে এগুলেই দেখা যাবে শিশুদের বিনোদনের জন্য শিশুপার্ক। চলাচলের জন্য দি্ঘিকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা রাস্তা। রাস্তার পাশ দিয়ে লাগানো আছে বিভিন্ন ফুলগাছ।

রামসাগর গ্রন্থাগার

২০১০ সালের ১০ অক্টোবর (১০-১০-২০১০) আট শতাধিক বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে রামসাগর গ্রন্থাগার নামে একটি লাইব্রেরি—যা বইপ্রেমি ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে এনে দিবে এক অন্যরকম অনুভূতি।

বই পড়তে পড়তে আপনারা হারিয়ে যেতে পারবেন প্রকৃতির মাঝে ।

পিকনিক স্পট

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শক এখানে ঘুরত আসে। রয়েছে সাতটি পিকনিক স্পট। আপনি যদি হুমায়ুন আহমেদের চরিত্র হিমুর মতো বনে গিয়ে জোৎস্না দেখতে চান, তাহলে রামসাগর হবে আপনার সেই ইচ্ছে পূরণের অপরিমেয় জায়গা।

রামসাগরের ইতিহাস

এত সুন্দর জায়গা সম্পর্কে জানার পর কার না এই জায়গার ইতিহাস জানতে ইচ্ছে করে? এবার চলুন জেনে আসি রামসাগরের ইতিহাস।

লোকমুখে প্রচলিত পলাশী যুদ্ধের প্রাক্কালে ১৭৫৭ সালে শুকনো মৌসুমে অনাবৃষ্টি আর খড়ায় খাল-বিল শুকিয়ে গেলে তীব্র পানির কষ্ট শুরু হয়।

পানির কষ্ট দূর করার জন্য সে-সময়  রাজা প্রাণনাথ একটি দিঘি খনন করেন। মাত্র ১৫ দিনে হাজার হাজার শ্রমিক মিলে এটি খনন করেছিল।

কিন্তু দেখা দিলো অন্য এক বিপদ। দিঘিতে পানির দেখা মিলল না। রাজা স্বপ্ন দেখলেন যুবরাজ রামনাথকে সেই দিঘির মাঝখানে বলি দিলেই তবে পানি উঠবে।

রাজা যুবরাজকে স্বপ্নের কথা জানালে, যুবরাজ প্রজাদের কথা ভেবে রাজি হয়ে যান।দিঘির মাঝখানে নির্মাণ করা হলো মন্দির।

যুবরাজ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যেতেই দিঘিতে পানি উঠতে শুরু করল।কানায় কানায় পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেল দিঘি।

যুবরাজ রামনাথ হারিয়ে গেলেন পানির গভীরে।সেই থেকে যুবরাজের নামানুসারে দিঘির নাম করা হলো রামসাগর।

গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত

রামসাগর বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতি বছর শীতকালে বিভিন্ন অতিথি পাখির আগমনে রামসাগরের সৌন্দর্য্য আরো বেড়ে যায়।

মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে এখানে বারুণি মেলা বসে। বর্তমানে রামসাগর দিঘিটি পর্যটন বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

১৯৯৫ সালে রামসাগরকে আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণা করা হয়।

১৯৬০ সালে রামসাগরকে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে নেয়া হয়।

অবশেষে ২০০১ সালে রামসাগরের চারদিকে গড়ে ওঠা বনকে রামসাগর জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বিমান, ট্রেন ও বাসযোগে দিনাজপুরে আসা যায়।

বিমান : নভোএয়ার, ইউএস বাংলা আর বাংলাদেশ বিমানে ঢাকা থেকে সৈয়দপুরের বিমান ভাড়া ২,০০০ টাকা থেকে ৩,০০০ টাকার মধ্যে।

সৈয়দপুর থেকে দিনাজপুরে আসার মাইক্রোবাস বিমান সংস্থা থেকেই রাখা থাকে। ভাড়া জন প্রতি ৩০০ টাকা।

ট্রেন : কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে একতা, দ্রুতযান ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেস নামের তিনটি ট্রেন ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৫০০ টাকা থেকে ১৫০০ এর মধ্যে।

বাস : গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে দিনাজপুরগামী শ্যামলী, হানিফ, নাবিল, বাবলু, এস আর প্রভৃতি পরিবহন কোচ চলাচল করে।

ভাড়া জনপ্রতি ৬০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে।

থাকা-খাওয়া

দিনাজপুরে দৈনিক ৫০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে হোটেল কক্ষ পাওয়া যাবে। রেস্তোরাঁতে খাওয়ার খরচ অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক কম।

তাহলে আর দেরি কেন! সময় করে একদিন বেরিয়ে পড়ুন সদলবলে। দেখে আসুন সাগর নয়—রামসাগর।

—ফারহানা রহমান, দিনাজপুর সরকারি কলেজ, পদার্থবিজ্ঞান  বিভাগ, দিনাজপুর

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...