মেহেরপুর প্রতিনিধি : মেহেরপুরের গাংনী পৌর মেয়রকে ঘুষ দেওয়া ১৫ লাখ টাকা ফেরতের দাবিতে আবারো অমরণ অনশনে বসেছেন মৌমিতা খাতুন পলি ও তার মা। গত মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে গাংনী উপজেলা পরিষদ শহীদ মিনার চত্বরে অনশনে বসেন তারা। মৌমিতা খাতুন পলি গাংনী পৌর এলকার শিশিরপাড়া গ্রামের শাহাবুদ্দিন ওরফে বাহাদুরের ছেলে মোমিনের স্ত্রী।
মৌমিতা খাতুন পলি জানান, চাকরির দেওয়ার নামে ঘুষ নিয়ে সেই টাকা মেয়র ফেরত না-দেওয়ায় প্রথম দফা অনশন, তার পর সালিশ বৈঠক হলো। এর পরও কোনো কূল কিনারা না-পেয়ে আজ থেকে দ্বিতীয়বারের মতো অনশন শুরু করলাম।
আমার গর্ভে সন্তান। টাকা না-দেওয়ায় আমার স্বামী এখন আমাকে নিতে চাচ্ছে না। একমাত্র মৃত্যুই এর সমাধান। আমি আর উঠছি না। আমি ও আমার অনাগত সন্তান মারা গেলে আমাদের লাশ বাড়ি যাবে।
গত ২১ আগস্ট রাতে গাংনী থানা চত্বরে পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলামের উপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে ১৫ লাখ ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক, গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবাইদুর রহমান, সেকেন্ড অফিসার আহসান হাবিব, এস আই আব্দুল হান্নান, সাবেক এমপি মো. মকবুল হোসেনের একান্ত সহকারী সাহিদুজ্জামান শিপু, পৌর কাউন্সিলর মিজানুর রহমান, সাহিদুল ইসলাম, এনামুল হক, শ্রমিক নেতা মনিরুজ্জামান মনি, অভিযোগকারী মৌমিতা খাতুন পলি, তার মা-বাবাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় পলির স্বামীকে নিয়ে বসে টাকা লেনদেনের বিষয়টি সমাধান করবেন মেয়র। তবে মেয়র আশরাফুল ইসলাম পলির স্বামী মোমিনকে টাকা ফেরত দিয়েছেন দাবি করে বলেন, চাকরির জন্য নয়, জমি সংক্রান্ত বিষয়ে নেওয়া হয়েছিল। যখন নিয়োগ পরীক্ষা হয় তখন আমি মেয়রের দায়িত্বে ছিলাম না।
গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক বলেন, থানায় সালিশে মেয়র জানায় পলির স্বামী মোমিন তার ডায়েরিতে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা ফেরত নিয়েছেন।
অপরদিকে, মোমিন টাকা ফেরত নেননি বলে মোবাইল ফোনে দাবি করেন। পরে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যদি স্বাক্ষর ঠিক থাকে তাহলে মৌমিতা খাতুন পলি টাকা আর পাবে না। আর যদি স্বাক্ষর না-মেলে তাহলে তাকে ১৫ লাখ টাকা ফেরত দিবেন মেয়র।
পলির স্বামীর উপস্থিতিতে আবারো বৈঠক বসবে জানিয়ে সভা শেষ করা হয়। এর পর গত ২৮ আগস্ট পলির স্বামী মোমিন থানায় আসলেও মেয়র হাজির না-হওয়ায় বৈঠক করা যায়নি।
তবে পৌর কাউন্সিলর সাহিদুল ইসলাম বলেন, মেয়র চাকরির জন্য টাকা নিয়েছেন—যা পৌর পরিষদের অনেকেই জানেন।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম শাহনেওয়াজ বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবাইদুর রহমান বলেন, অনশনের বিষয়টি জেনেছি। আমরা স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ মেয়য়ের সঙ্গে বসেছিলাম। বিষয়টি অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এই বিষয়ে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া উপায় দেখছি না। তাদের নিরাপত্তায় শদীদ মিনার এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার (২ সেপ্টেম্বর ২০২০) মেয়র আশরাফুল জানান, চাকরির জন্য নিয়েছি প্রমাণ দিতে পারলে এখুনি মৌমিতাকে টাকা দিয়ে দেবো। একটি জমি কেনার জন্য আমার ফার্মে চাকরি করা মোমিন আমাকে ৮ লাখ ১০ হাজার দিয়েছিল। কিন্তু পরে জমি না-কেনায় অনেক আগেই সে টাকা ফেরত দিয়েছি। সেই মোমিন তার স্বামী কি-না জানি না। সামনে পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমার প্রতিপক্ষ এই মা-মেয়েকে রাজনৈতিকভাবে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
করোনায় দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ১০৮, শনাক্ত ৫৮৬৯ জন
করোনায় আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্ত, মৃত্যু ৮১
একদিনে করোনায় ৮৫ জনের মৃত্যু