ছয়টি অনুভবের কবিতা
সুদীপ্ত বিশ্বাস
সুদীপ্ত বিশ্বাসের ছয়টি অনুভবের কবিতা
কালচিত্র
জীবনটা তো গেল প্রতীক্ষায়
অঢেল সময় নেই কারো, ঘণ্টা বাজে
কারা যেন ডাকে, আয় আয়…
পথের পাশে দাঁড়িয়ে আছি গাছ
সহস্র স্রোতের টানে আমায় ভাসিয়ে নিয়ে
তুমি কী নদী হবে না আজ?
নদী হও, হও নদী, বয়ে যাও
অজস্র ধারায়। দু’কূল ভাসিয়ে নদী
আমাকে পাগল করে দাও।
ভেসে যাওয়া? সেটাও সার্থক।
শ্মশান যাত্রীরা চলে গেলে, পাখি ডাকে—
গৃহস্থের খোকা হোক…
.
চুম্বন
চাঁদ নেই
তাই চুম্বনও নেই
দিন ফুরিয়ে এলো…
নামছে আঁধার এই বনে
সেই কালো হাতছানি আসবার আগে
যদি ফিরে আসে তবে
কথা নয়, কথা পরে হবে
ভরিয়ে ভরিয়ে দেব চুম্বনে চুম্বনে…
.
শূন্যতা
তুমি নেই।
থমথমে আকাশ
সারা ঘরে দাউদাউ জ্বলছে আগুন।
আমি পুড়ছি, পুড়ছি।
ফাঁকা ফাঁকা শূন্যতা… শূন্যতা
কান পাত যদি
চারিদিকে বহমান বিষাদের নদী।
আঁকাবাঁকা পাঁক, চোরাবালি স্রোত।
অন্ধকূপের অন্ধকারে
মুক্তি, মুক্তির খোঁজে
যতদূরে যাই,
তত মনে পড়ে।
তত মন পোড়ে…
.
ফেরা
ওই যে তীরের গাছ একা, খুব একা
তার ছায়া চুপি চুপি নদীর গভীরে গিয়ে শুত।
এই নদী জলে পাঁক
এই পাঁক টেনে ধরে
বিষাদের কালো কালো বুড়বুড়ি তুলে
হঠাৎ তলিয়ে দেয় দ্রুত, খুব দ্রুত।
জানি তুমি ফিরবে না
তবুও জানি না
কেন মনে হয় ফিরে আসতেও পারো
সেই লোভে অবেলায়
ফিরে ফিরে এসেছি আবারও…
.
দ্বৈরথ
প্রপঞ্চে চকোর-রূপে জ্যোৎস্না করি পান
আধেকলীন অতীতে ওড়ে চন্দ্রযান।
অনিকেত পথে পথে, গভীর প্রদেশে;
হঠাৎ দাঁড়াচ্ছ তুমি এক চিলতে হেসে।
তুলে আনছি পান্না-হীরে-মুক্তো কিছু কিছু
ইতিহাস জাপটে ধরে, ছাড়ে না তো পিছু।
ভূতকাল ভবিষ্যৎ পাশাপাশি হাঁটে
স্বপ্নবৎ বর্তমান সময়টা কাটে।
দুঃখ-সুখের লব্ধিতে, চক্রব্যূহ পথে
যুযুধান লড়ে চলি অসম দ্বৈরথে।
.
অনুরাগ
যে ফুল ঝরেই গেছে
কী হবে তাকে মনে রেখে?
নতুন কুঁড়ি ফুটুক
নতুন সূর্য উঠুক
নতুন ভোরের ছবি নাও এঁকে।
বয়ে চলুক নদী
সেই ঝরা ফুলের স্মৃতি
তবু্ও ফিরে ফিরে আসে যদি
যতই জ্বলুক আগুন দাউ দাউ
ঝরা ফুল বেঁচে থাকে
কোথাও-না-কোথাও…
…………………
পড়ুন
সুদীপ্ত বিশ্বাসের ছয়টি অনুভবের কবিতা
1 thought on “সুদীপ্ত বিশ্বাসের ছয়টি অনুভবের কবিতা”