দি নিওটিয়া ইউনিভার্সিটির মেরিন ডিপার্টমেন্টের এক ঝাঁক প্রাক্তন এবং বর্তমান ছাত্র ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় আয়োজন করেছিলেন ত্রাণ এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা শিবিরের। ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াবার ব্রত নিয়ে এঁরা পৌঁছে গিয়েছিলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সুন্দরবনের মৌসুনি দ্বীপের বাঘডাঙা অঞ্চলে।
কলকাতা থেকে বাসে মাত্র সাড়ে তিন-চার ঘণ্টার রাস্তা। সমুদ্র লাগোয়া অত্যন্ত মনোরম সি-বিচ। ফলে একরাত দু’দিনের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এই মৌসুনি দ্বীপটি। সেটি এখন কার্যত তছনছ হয়ে গেছে। প্রশাসনের হিসেবেই নদী ও সমুদ্র মিলিয়ে ১২ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। গোটা দ্বীপটাই কার্যত জলের তলায়।
এই খবর পেয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েন নিওটিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন ছাত্র দেবজিৎ দেবনাথ, রূপান্তর সেন, কৃতী আজাদ, রণজিৎ সেন, মাসুদ রানা, মহাম্মদ আরিফ খান, নীলোৎপল, ইন্দ্রনীল দাস এবং শুভঙ্কর সিংহ।
যোগ দেন বর্তমান পড়ুয়ারাও। গত ২৮ জুন একুশ রকম সামগ্রীর এক-একটি ঢাউস ব্যাগের শুধু আড়াইশটি ত্রাণই নয়, সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন বেশ কিছু চিকিৎসক এবং পর্যাপ্ত ওষুধপত্রও। খোলা হয়েছিল ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প।
ওখানকার স্থানীয় বাসিন্দা হাননান মোল্লা ইয়াসের পূর্বাভাস পেয়েই চলে গিয়েছিলেন এক আত্মীয়ের বাড়ি। ঝড়ের পরে ফিরে এসে দেখেন, তাঁর বাড়িটার আর কোনো অস্তিত্বই নেই।
ফলে আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণ শিবিরে। সেই ত্রাণ শিবিরে বসেই তিনি বললেন, ‘গোটা বাড়িটাই জলের তোড়ে ভেসে গেছে। জিনিসপত্র কিছুই পাইনি। জানি না এর পর কী হবে।’
ঝড় আছড়ে পড়ার আগে বাড়ির যাবতীয় থালা-বাসন জিনিসপত্র ঘরের মেঝেয় অনেকটা মাটি খুঁড়ে পুঁতে রেখে গিয়েছিলেন আমিনা খাতুন। ঝড়ের পরে ফিরে এসে দেখেন, শুধু জল আর জল। কোথায় তাঁর বাড়ি ছিল, কোথায় তিনি পুঁতে রেখে গিয়েছিলেন যাবতীয় জিনিসপত্র, সেটাই আর খুঁজে পাননি। বাসনপত্র তো দূরের কথা।
এ দিন দরজার সামনে দাঁড়িয়েই মুজিবর রহমান বললেন, ‘ঝড়ের সময় ঘরেই ছিলাম। জল আসার আগে শেষ মুহূর্তে কোনো রকমে বেরিয়ে আসি। চোখের সামনে দেখলাম, খড়কুটোর মতো ভেসে গেল বাড়িটা। বাথরুমটা ইটের বলে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।’ তাঁর স্ত্রী রোশনি বিবি বললেন, ‘শাড়ি, গামছা, রান্নার জিনিস, সবই ভেসে গেছে। ঝড়ের পর থেকে এক কাপড়ে আছি।’
হাঁটতে হাঁটতে দেখা গেল মাটির যে ক’টা বাড়ি ছিল, সবই প্রায় ভেসে গেছে। ইটের বাড়িগুলি ভাঙাচোরা অবস্থায় কোনো রকমে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নোনা জলে প্লাবিত হয়েছে কৃষি জমি, মাছের পুকুর। প্রায় বারোশ’ পান বরজ ভেঙে পড়েছে। অসংখ্য গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি জলের গভীরে তলিয়ে গেছে।
প্রায় নব্বইটি ফিশারির মাছ-চিংড়ি ভেসে গেছে। ভেসে গেছে মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার ডিঙি নৌকাগুলিও। পর্যটকদের জন্য সমুদ্রের ধার বরাবর যে ৫২টি কটেজ ছিল। সে সবও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
চারিদিকে একবার চোখ বোলালেই বোঝা যায়, ইয়াসের জেরে গোটা দ্বীপটাই একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বিদ্যুতের ব্যবস্থাও মুখ থুবড়ে পড়েছে।
সেই দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় আড়াইশ’টি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় চাল, ডাল, তেল, সুজি, সোয়াবিন, মুড়ি, মশলাপাতি, বিস্কুট, সাবানের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়াও মশারি এবং টর্চও। মেয়েদের জন্য দেওয়া হয়েছিল সেনিটারি প্যাড।
অন্যতম উদ্যোক্তা রূপান্তর সেন জানালেন, যতদিন না সবকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে, ততদিন আমাদের এই কর্মযজ্ঞ চালু থাকবে।
—সিদ্ধার্থ সিংহ, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
…………………
আমন্ত্রণ
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
বাগদাদে করোনা হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে ৮২ জনের মৃত্যু
কবি শঙ্খ ঘোষের জীবনাবসান
গোকুল মেধ বা বেহুলার বাসরঘর