বন্ধু-বান্ধবীর জন্য একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্য
বন্ধু-বান্ধবীর জন্য একগুচ্ছ কবিতা
তোমার জন্য বন্ধু আমার
(সুরাইয়াকে)
.
শব্দ ওঠে। শব্দ মরে। শব্দ, শব্দে ভেসে যায়।
তোমার জন্য বন্ধু আমার খিদে বেড়ে যায়!
.
খিদে বাড়ে। খিদে মরে। খিদে, খিদে ভুলে যাই।
তোমার জন্য বন্ধু আমার খিদের অপচয়!
.
ঘর ভরে না পাকা ধানে! বাড়া ভাতে ছাই!
তোমার জন্য বন্ধু আমার খিদের আইডাই!
.
চাঁদ কপালে আকাশ ঘুমায় মেঘের কলিজায়
তোমার জন্য বন্ধু আমার রাতগুলো পাল্টায়!
.
তার কথা যে
(প্রীতি রায়কে)
.
রাতে যখন মুঠো মুঠো ছড়িয়ে যাবে তারা
তার কথা যে পড়বে মনে বিষাদ বুকে চেপে,
চাঁদ দাঁড়িয়ে একা একা আকাশে মেঘ হারা
চাঁদের আলোয় ও-মুখ দেখি, দূরত্ব যাই মেপে!
.
শেষ হবে না ঋণ, তবু আশায় জাগে বোধ
ফোটায় কাঁটা অহরহ, যন্ত্রণা দেয় আলো,
আগুন তাপে রক্ত বুকের ছড়ায় যে ক্ষোভ—
এসব কিছু ঘটনা ঘটে, ব্যথায় দিন কালো!
.
চাঁদ কাঁপে গাছের পাতায় ছড়িয়ে দিয়ে আলো
তার কথাটা পড়ছে মনে জাগিয়ে বুকের ক্ষত,
ঘুম নামছে দু’চোখজুড়ে মনটা ভীষণ কালো
ভাবনা কানে বাজায় বাঁশি স্মৃতির পুষ্প যতো…
.
এ সংসারে বাঁচার দায় বেঁচে থাকার মতো,
মুক্তি পেতে নদীর জলে ধুই যে হাজার ক্ষত!
.
একদা দেখা
(স্মৃতিময়ীকে)
.
একদা দেখা মুখখানি তার মায়া মাখা,
ছড়ানো চুলে মুখ ঢাকা তার দীপ্ত-রাকা!
.
পথের বাঁকে ছায়ায় ঢাকা জংলা-মাটি,
চাঁদ উঠছে আকাশ জোড়া সাঁঝ বেলাটি!
.
বৃথাই ছিল যাতনা ভরা সেই চারুতা,
ভাবতে গেলে কাঁপায় বুক লাজ ভীরুতা!
.
হরিণ চোখে দাঁড়িয়ে দূরে সে এলোকেশী,
বন ছায়ায় হারিয়ে গেছে হায়, ছদ্মবেশী!
.
এখন মনে অবাধ হয়ে বাতাস ঢোকে,
উঠোনজুড়ে স্মৃতির পালক শূন্যলোকে!
.
কাঠকুড়ুনি মেয়ে
(রাবেয়াকে)
.
গহন বনে দেখা
চমকে ওঠে বুক,
কাঠকুড়ুনি মেয়ে
লাজে রাঙা মুখ!
.
কাঠকুড়ুনি মেয়ে—
ঘর পালিয়ে এসে
পায়নি সুখের ঘর,
সোনার খোকাখুকু
মনের মতো বর!
.
বন ভাঙে তাই রাগে
ভয়ের ছুরি হাতে
শিকড়ে দেয় টান—
ছড়িয়ে রাখে চোখে
খেলা ভাঙার গান!
.
সাপ জড়ানো চুলে
আড়াল করে মুখ
তার অভিমান জানে—
চমকে ওঠা বুক!
.
গহন বনে দেখা
লাজে রাঙা মুখ!
.
সেদিন রাতে
(বাদশা ও সীবলিকে)
.
সেদিন রাতে নদীর ধারে
রহস্য কী ছিল?
দুই যুবকের রঙ্গ-খেলায়
স্বপ্ন এনে দিল!
.
হাতে তাদের তপ্ত পাথর
মাথার চুলে বন্য আতর
শালশিরীষে শব্দ কাতর
বাতাস খোলামেলা,
কামের টানে মিলিয়ে গেল
মুগ্ধ কিছু বেলা!
.
মনে গড়ায় শুদ্ধ শিশির
উল্লাসে চাঁদ ছায়া নিশির
সঙ্গে বায়ু ফিসির ফিসির
আঁধার শূন্যতা,
নগ্ন শরীর দেখে তাদের
মনেতে পূর্ণতা!
.
সেদিন রাতে নদীর বুকে
তরঙ্গ কী ছিল?
পাথর ঠুকে ঠুকে আগুন
তারা জ্বেলেছিল!
.
কুন্দ বনের কুন্দ
(নাসিরকে)
.
কুন্দ বনের কুন্দ
ফুটলো ফুটলো ক্ষণে তারা
অন্ধকারে জুটলো!
.
কুন্দ বনের কুন্দ
দু’জন দু’জন এক হয়ে
আত্ম-সুখ লুটলো!
.
ভ্রমর পাখি আনমনা
ফুলে ফুলে আঁকলো তারা
কিসের যেন আলপনা!
.
কুন্দ বনের কুন্দ
ভেবে ভেবে থৈ পায় না
তবুও মনে আনন্দ!
.
মিলন
(কমলকে)
.
নাভির নিচে
গোপন নদী
……… ……… ছলকে ওঠে;
দেখতে থাকো
অবাক হয়ে
……… ……… মায়ার ঘোরে…
.
চোখ ধাঁধানো
রেশম ঘাসে
……… ……… দু’পাড় ঢাকা,
ঋতু বদল
যখন তখন
……… ……… নদীর বুকে;
.
মাঝখানে জল
প্রেম যমুনা
……… ……… অতল গভীর,
খিদেয় কাতর
আগুন জ্বলে
……… ……… সারা দেহে;
.
চালায় নৌকো
অবুঝ মাঝি—
……… ……… কূল না জানে,
কালের টানে
এসব খেলা
……… ……… কী আনন্দে!!
.
রাত ছবি
(টোকনকে)
.
আঁধার বনে
জোনাক পোকা
জ্বলছে মৃদু
.
রাত্রি গহীন
ঝিঁঝিঁ নীরব
রহস্যময়
.
কোথাও হাওয়া
ওঠে কোথায়
শাল বনে
.
শুকনো পাতা
বাজনা বাজায়
সড় সড় সড়
.
তখন মনের
গোপন কোণে
রাত্রি জাগে
.
কেউ জানে না
নিদ্রা ঘোরে
উদাস ব্যথা
সুর না জানা
মোহন টানে
রাত নির্ঝর!
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য
প্রয়াণগাথা : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের বারোটি কবিতা
বন্ধু-বান্ধবীর জন্য একগুচ্ছ কবিতা
মুক্তপদ্য
ইচিং বিচিং পদ্য : সুনীল শর্মাচার্য
1 thought on “বন্ধু-বান্ধবীর জন্য একগুচ্ছ কবিতা”