shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমকে নিয়ে বিদেশে নানা কার্যক্রম

Shah Abdul Karim

Shah Abdul Karim

Shah Abdul Karim

আবু জাফর সাইফুদ্দিন : বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম বাংলাদেশের প্রখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও সঙ্গীত শিক্ষক। যিনি বাউল সঙ্গীতকে অনন্য উচ্চাতায় নিয়ে গেছেন। আজ ১২ সেপ্টেম্বর, তাঁর ১২তম প্রয়াণ দিবস। আমরা তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।

বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমকে নিয়ে এখন বিদেশেও চলছে নানা কার্যক্রম। প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে প্রথমবারের মতো এবার বিদেশের মাটিতে ‘শাহ আবদুল করিম স্মরণ উৎসব’ আয়োজন করা হয়েছে।

লন্ডনে এ আয়োজনে যুক্ত হন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের তার উত্তরসূরি বাউল শিল্পীরা। এ ছাড়া কলকাতা থেকে যুক্ত হয়েছেন জনপ্রিয় লোকগান ও আবদুল করিমের ভাবশিষ্য কালিকাপ্রসাদের দল দোহার।

শাহ আবদুল করিম স্মরণ উৎসবের সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এই প্রথমবারের মতো লন্ডনে শাহ আবদুল করিম স্মরণ উৎসব আয়োজন করতে যাচ্ছি। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং যুক্তরাজ্যের শিল্পীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের।

এ অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার টিভি থ্রি বাংলার চেয়ারম্যান নাশীত রহমান বলেন, বিদেশের মাটিতে শাহ আবদুল করিম স্মরণে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এ উৎসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরে আমরা গর্বিত।

এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে শাহ আবদুল করিমের ছেলে শাহ নূর জালাল বলেন, বাউল সম্রাটের স্মরণ উৎসবে সুনামগঞ্জ থেকে আমার সঙ্গে তাঁর শিষ্যরা উপস্থিত থাকবেন।

তিনি এই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের অসংখ্য অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান। কলকাতার ফোক ব্যান্ড দোহারের সদস্য রাজিব বলেন, এই অনুষ্ঠানে আবদুল করিমের ভাবশিষ্য দোহারের শুধু গানই থাকছে না, থাকবে আরো অনেক কথা।

শাহ আবদুল করিম ও তাঁর গান

শাহ আবদুল করিম হাওরের ঢেউ আর কালনী নদীর স্রোত, গ্রামের সহজ-সরল মানুষের প্রাত্যহিক জীবন, দুঃখ-দুর্দশা, প্রেম-ভালোবাসাকে তুলে ধরেছেন তাঁর গানে। ছোট ছোট গল্প বুনে সৃষ্টি করেছেন কালজয়ী সব গান।

‘বন্দে মায়া লাগাইছে’, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি’, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো’, ‘তুমি মানুষ আমিও মানুষ’, ‘প্রাণে সহে না দুঃখ বলবো কারে’, ‘কোন মেস্তোরি নাও বানাইছে’, ‘ওরে ভব সাগরের নাইয়া’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গীতিকার, সুরকার শাহ আবদুল করিম।

তিনি দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের উজানধল গ্রামে ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম ইব্রাহীম আলী ও মা নাইওরজান।

করিমের শৈশব-কৈশোর-যৌবন কাটে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে। মৃত্যুর পর উজানধল গ্রামের নিজ বাড়িতে প্রিয়তমা স্ত্রী সরলা খাতুনের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি।

মাত্র আট দিন নাইটস্কুলে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন আব্দুল করিম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও, তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত।

জীবদ্দশায় কালনী নদীর তীরে বসে তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বাউল গান। ভাটিবাংলার অপার সৌন্দর্য তিনি ধারণ করেছিলেন তাঁর হৃদয় সত্তায়। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা তাঁকে তিলেতিলে পীড়ন করতো।

গানে তিনি গ্রাম-বাংলার জীবনচিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন সুনিপুণভাবে। গানে গানে তিনি হয়ে উঠেছিলেন মানুষের আত্মার আত্মীয়, অকৃত্রিম দেশপ্রেমিক ও গণ মানুষের শিল্পী।

শাহ আব্দুল করিমের সুর করা গানের সংখ্যা ১৫শ’র বেশি। বাংলা একাডেমি থেকে তাঁর ১০টি কালজয়ী গান ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেছে। প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ৬টি গ্রন্থ।

বাংলা সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালে তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আড়াইশ’র বেশি পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন এই বাউল সম্রাট।

এই গুণীকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক শাকুর মজিদ নির্মাণ করেছেন ‘ভাটির পুরুষ’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র। এ ছাড়া নাটকের দল সুবচন নাট্য সংসদ তাঁকে নিয়ে শাকুর মজিদের লেখা ‘মহাজনের নাও’ নাটকের ৮৮টি প্রদর্শনী করেছে।

সুনামগঞ্জ জেলার সংস্কৃতি বিষয়ক কর্মকর্তা আহমেদ মঞ্জুর পাবেল বলেন, শাহ আব্দুল করিম কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া জলজোছনার সুর গ্রন্থে বাউল সম্রাটের সব গান শুদ্ধ স্বরলিপির মাধ্যমে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলার শিকড়ের সঙ্গে প্রোথিত লোকগীতি, বাউল গান, ভাটিয়ালিকে আন্তর্জাতিক পরিম-লে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ছিল বিশেষ ভূমিকা। সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি তিনি বেহালা, তবলা ও ম্যান্ডোলিন বাজাতে পারদর্শী ছিলেন। অমিয় বাণী আর সুরের শৈল্পিকতায় এ দেশের বাউলসংগীতের ভাবজগতে সম্রাটের আসনে উন্নীত হয়েছিলেন তিনি।

২০০৯ সালের এই দিনে পুণ্যভূমি সিলেটের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর এক দিন আগে থেকেই তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ দেশের বাউলসংগীত অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে।

About The Author

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...