shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

বাবুই পাখির বাসা, দৃষ্টির আড়ালে চলে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার এই ‘শিল্প’

Babui birds nest

Babui birds nest

Babui birds nest

বাসা তৈরিতে নিপুণ বলে বাবুই পাখিকে অনেকে তাঁতি পাখি বা বুননী পাখিও বলে। একসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা যেত। এখন তা আর সচরাচর চোখে পড়ে না। রহস্যে ঘেরা এই বাবুই পাখির বাসা, দৃষ্টির আড়ালে চলে যাচ্ছে ক্রমশ।

কালের বিবর্তনে ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সেই দৃষ্টি ভোলানো পাখিটিকেও তার নিজের তৈরি বাসা—যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো ফুটিয়ে তুলত, তা আজ আমরা হারাতে বসেছি।

কিন্তু বাবুই কেন এই অদ্ভুত প্রজাতির বাসা বানায়? এর পেছনে কি কোনো উদ্দেশ্য বা কারণ আছে? হ্যাঁ তার এই বাড়ি বানানোর পেছনে রয়েছে বিচিত্র সব তথ্য।

রহস্যে ঘেরা বাবুই পাখির বাসা, দৃষ্টির আড়ালে চলে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার এই ‘শিল্প’

বাবুই পাখির বাসা ও জীবনযাপন নিয়ে ভারতের একজন খ্যাতিমান পাখি বিশারদ এক অদ্ভুত তথ্য দিয়েছেন। খুব কাছে থেকে তাঁর তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ১৯৩০ সালে এ রহস্যের কথা জানতে পারেন।

বাবুই পাখি দেখতে অনেকটা চড়ুই পাখির মতো। পুরুষ বাবুই দেখতে খুব সুন্দর, এর গায়ের রঙ উজ্জ্বল সোনালী হলুদ। একটা পুরুষ বাবুই দু’য়ের অধিক যে কোনো সংখ্যক নারী বাবুই স্ত্রী হিসেবে রাখতে পারে।

তবে কোনো স্ত্রীর মনে আঘাত দিয়ে সে একাধিক স্ত্রী পোষার ঝামেলায় যায় না। স্ত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি করার ব্যাপারটি সে খুব সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে ঘটায়। সে কয়টা স্ত্রী দেখা-শোনা করতে পারবে, তা নির্ভর করে তার বাসা তৈরির কারিগরি দক্ষতা ও ক্ষমতার উপর।

বাসা তৈরির সব ঝামেলা পোহাতে হয় একা পুরুষ বাবুইকে। বাসা তৈরিতে স্ত্রী বাবুই মোটেও সাহায্য করে না।

পুরুষ বাবুই বাসা অর্ধেক তৈরি করে ফেললেও, নারী বাবুই দল বেঁধে উড়ে আসে বাসা দেখার জন্য। পুরুষ বাবুই বাসা তৈরিতে কি পরিমাণ দক্ষতা ও বুদ্ধি ঢেলেছে নারী বাবুই তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। বাসা পছন্দ হলে দখল করে নেয় বাসা এবং বাসা নির্মাতাকে।

আর দেরী না-করে পুরুষ বাবুই ঐ অর্ধ-সমাপ্ত বাসাতেই নারী বাবুইয়ের সঙ্গে সংসার পাতে এবং সুখি দাম্পত্য জীবন শুরু করে।

অপর এক তথ্যে জানা যায়, বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সঙ্গী খুঁজতে যায় অন্য বাসায়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য নানা ভাবে ভাব-ভালোবাসা নিবেদন করে এরা।

বাসা তৈরির কাজ অর্ধেক হলে কাঙ্ক্ষিত স্ত্রী বাবুইকে সে বাসা দেখায়। বাসা পছন্দ হলে কেবল সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

স্ত্রী বাবুই পাখির বাসা পছন্দ হলে বাকি কাজ শেষ করতে পুরুষ বাবুইয়ের সময় লাগে চার দিন। স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই মনের আনন্দে শিল্পসম্মত ও নিপুণভাবে বিরামহীনভাবে বাসা তৈরির কাজ শেষ করে।

প্রেমিক বাবুই যত প্রেমই দেখাক না কেন, প্রেমিকা ডিম দেওয়ার সাথে সাথেই প্রেমিক বাবুই আবার খুঁজতে থাকে অন্য সঙ্গী। পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে মোট ছয়টি বাসা তৈরি করতে পারে।

ক্ষেতের ধান পাকার সময় হলো বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার পর পরই বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য স্ত্রী বাবুই ক্ষেত থেকে দুধ ধান সংগ্রহ করে।

রহস্যে ঘেরা বাবুই পাখির বাসা, দৃষ্টির আড়ালে চলে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার এই ‘শিল্প’

বর্তমানে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে গ্রামাঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে—প্রকৃতির এক অপরূপে সৃষ্টি এই বাবুই পাখি। প্রকৃতির বয়নশিল্পী, স্থপতি ও সামাজিক বন্ধনের কারিগর নামে সমধিক পরিচিত বাবুই পাখি ও তার অপরূপ শিল্পসম্মত বাসা এখন বলতে গেলে আর চোখে পড়ে না।

বাংলাদেশের দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের অধীনে চরকাই ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার জানান, বাবুই পাখি নিপুণ কারিগর। এ পাখি অত্যন্ত সৌন্দর্যসচেতন। রেঞ্জ অফিসের বিভিন্ন গাছে বাসা বেঁধে থাকে তারা।

চরকাই ফরেস্ট রেঞ্জ এরই মধ্যে শালবনের গাছে গাছে পাখিদের জন্য ২ হাজার বাসা তৈরি করে দিয়েছে। এতে বনে নিরাপদে যেমন পাখিরা থাকতে পারছে, তেমনি শাল বনেরও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের কাঠাখালি মাঠ ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পাশে কিছু খেজুর গাছ এবং দু’একটি তালগাছের ডালে বাবুই পাখির বাসা। শোনা যায় বাবুই পাখির সুমধুর ডাক। তবে বর্তমানে তালগাছ যেমন হারিয়ে যাচ্ছে, তেমনি হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখিও।

জানা যায়, বাবুই পাখির মাংস সুস্বাদু বলে শিকারীদের কারণেও এর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে।

সাধারণত তিন প্রজাতির বাবুই পাখি দেখা যায়। দেশি, দাগি এবং বাংলা। তার মধ্যে দাগি এবং বাংলা বাবুই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে দেশি বাবুই এখনো কিছু কিছু চোখে পড়ে।

পরিবেশবিদরা মনে করেন, বাবুই পাখির শৈল্পিক নিদর্শন টিকিয়ে রাখতে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

এ ছাড়া এক শ্রেণির শিকারী নির্বিঘ্নে বাবুই পাখিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শিকার করছেন। এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একেবারে উদাসীন বনবিভাগ। ফলে বাবুই পাখিসহ অন্য অতিথি পাখি ক্রমশ এলাকা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

—ডেস্ক শুভ সারাদেশ

About The Author

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...