বিশেষ প্রতিবেদক : ইলিশে খুশি সবাই, বিশ্বের ৭০ শতাংশ উৎপাদন এখন বাংলাদেশে। কেননা বর্তমানে ভরা মৌসুমে কিংবা মৌসুম ছাড়াও নদীতে জাল ফেললেই মিলছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। তেমনি এক উৎসব চলছে ইলিশের। রুপালি ইলিশ ধরার নেশায় মগ্ন এখন জেলেরা। তাঁদের চোখে-মুখে ঝিলিক, আনন্দের হাসি ও তৃপ্তি।
বিশেষজ্ঞের মতে, করোনার কারণে পানিতে দূষণ ও জলযান চলাচল কমেছে, আর এবার বৃষ্টি বেশি হওয়ায় সাগরে বেশি ইলিশ মিলছে। মা ইলিশ রক্ষা, জাটকা সংরক্ষণ ও অভয়াশ্রম নিশ্চিত হচ্ছে; সেই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের মনিটরিংও বড় অবদান রাখছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মোট ইলিশের ৭০ শতাংশের বেশির উৎস বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ক্রমাগত বাড়ছে ইলিশের উৎপাদন।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। এবার তার চেয়ে আরো বেশি ইলিশ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
এবার বড় ইলিশ পাওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি একটি পরিপত্র জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। পরিপত্র অনুযায়ী, ইলিশ ধরা জালের ফাঁস হতে হবে সাড়ে ছয় সেন্টিমিটার—যা আগে ছিল সাড়ে চার সেন্টিমিটার। তাহলে জেলেরা ইচ্ছা করলেও, আর ছোট ইলিশ ধরতে পারবে না।
সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলেদের জালে এবার গত বছরের চেয়ে বড় আকারের এবং বেশি পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে। তারা বলছেন, সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ায় ইলিশের সুদিন ফিরেছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত রাখতে সরকারি উদ্যোগ আরো বিস্তৃত করতে হবে।
ইলিশ গবেষক ও চাঁদপুরের বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিছুর রহমানের মতে, বেশ কয়েকটি কারণে বর্তমানে দেশে বড় আকারের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী জানান, চলতি মাসের শুরুতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে, এর মধ্যে বড় আকারের ইলিশই বেশি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ইলিশ নিয়ে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ায় নির্ধারিত সময়ে জাটকা ধরা বন্ধ থাকে। একই সময়ে জেলেদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। এ কারণে প্রকৃতভাবে ইলিশ সংরক্ষণ হচ্ছে। মৌসুমে এর সুফল মিলছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইলিশ প্রজননসংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে এটা বড় ভূমিকা রাখছে। একসময় মাছ ধরা নিষিদ্ধের ঘোষণা থাকলেও প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ছিল না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। জাটকা ধরতে গেলে জাল পুড়িয়ে দেওয়া, কারা ও অর্থদণ্ড করেছে প্রশাসন। এতে জেলেরা নিয়মের মধ্যে থাকতে অভ্যস্ত হচ্ছেন, আর বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে জাটকা, ফলে মৌসুমে জেলেদের জালে আসছে বড় আকারের ইলিশ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) মাসুদ আরা মমি বলেন, সরকারের সামগ্রিক উদ্যোগে ইলিশ উৎপাদন বাড়ছে। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ইলিশ ধরা বন্ধ রাখতে জেলেদের খাদ্য সহায়তা সরকারের বড় একটি উদ্যোগ। গত ২০ আগস্ট প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, জেলেদের খাদ্য সহায়তা যাতে প্রকৃত উপকারভোগীরা পায় তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তাদের বেশি পরিমাণে সাহায্য দিতে পারলে ইলিশের উৎপাদনে আরো ভালো ফল পাওয়া যাবে। আমরা সেই চেষ্টা করছি।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মৎস্যবন্দর আলীপুর-মহিপুরের সব মাছের আড়ত বর্তমানে বেশ সরগরম। স্থানীয় ছোট ট্রলারে আশানুরূপ ইলিশ ধরা না-পড়লেও, গভীর সমুদ্রে বড় ট্রলারে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।
সীতাকুণ্ডের (চট্টগ্রাম) সলিমপুর থেকে বারৈয়াঢালা পর্যন্ত এলাকায় ১৩৮টি জেলেপাড়া আছে। এসব জেলে পল্লীতে প্রায় পাঁচ হাজার মৎস্যজীবীর বাস। এসব জেলেরা বছরজুড়ে সাগরে মাছ ধরলেও, অপেক্ষায় থাকে ইলিশ মৌসুমের জন্য।
এবার তাই মানুষের মুখে হাসি, ইলিশে সবাই খুশি।
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস
যেসব পণ্যের দাম বাড়বে-কমবে
৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট, আগের ৪৯টি বাজেটের ইতিহাস