ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের লিপুলেখ, কালাপানি ও লিম্পিয়াধুরার অঞ্চলকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দাবি করেছে নেপালের সরকার।
চারদিন আগে ভারতের ওই তিন এলাকাকে নিজেদের দাবি করে পার্লামেন্টে মানচিত্রও সংশোধন করে নেপাল সরকার।
এবার বিহারের একটি অংশ নিজেদের বলে দাবি করলো কাঠমান্ডু।
এমনকি ওই অংশে থাকা একটি বাঁধ সংস্কারের কাজেও ভারতকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নেপালের বিরুদ্ধে।
গত রোববার (২১ জুন ২০২০) ভারতের বন্যা নিয়ন্ত্রণথ অধিদফতরের প্রকৌশলী উমা নাথ রাম ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য দিয়েছেন।
নেপালের পার্লামেন্টে ভারত নিয়ন্ত্রিত ভূমিসহ নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র অনুমোদনের দুদিন পরই বাঁধ নির্মাণে বাধা দেওয়ার খবর এলো।
জানা গেছে, গত ৪ জুন বিহার সরকারকে বাঁধ নির্মাণে বাধা দিলেও তা প্রকাশ্যে আসে শনিবার। ওই অঞ্চলকে নো ম্যানস ল্যান্ড দাবি করে এই বাধা দেয় নেপাল।
বিহারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রকৌশলী উমা নাথ বলেছেন, লাল বাকাইয়া নদীতে প্রায় প্রতি মৌসুমের বন্যার সৃষ্টি হয়। তাতে প্রতি বছর বাঁধ মেরামত করতে হয়।
এবারও মেরামতের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ অর্ধেক শেষ হতেই নেপাল থেকে কয়েকজন কর্মকর্তা ও নিরাপত্তাকর্মীরা এতে বাধা দেন।
আলোচনা করে বিষয়টির সুরাহা করতে চেয়েছিলেন বিহার সরকার। কিন্তু নেপাল কিছুতেই সংস্কারের কাজ করতে দেবে না।
তারা জলসম্পদ দফতরের কর্মীদের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে।
নেপালের ইতিহাস
নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডুর উপত্যকায় প্রাপ্ত নিওলিথিক যুগের বেশকিছু উপাদান এটিই নির্দেশ করে যে হিমালয়ান অঞ্চলে প্রায় ৯০০০ বছর থেকে মানুষ বসবাস করছে।
এটি প্রতিষ্ঠিত যে প্রায় ২৫০০ বছর পূর্বে নেপালে তিব্বতী-বার্মীয় জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল।
১৫০০ খৃস্টপূর্বাব্দে ইন্দো ইরানীয় বা আর্য জাতিগোষ্ঠী এই হিমালয়ান উপত্যকায় প্রবেশ করে।
১০০০ খৃস্টপূর্বাব্দের দিকে এই অঞ্চলটিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর জন্য স্বতন্ত্র রাজ্য ও কনফেডারেশন গড়ে উঠে।
এরকমই একটি কনফেডারেশন ছিল সাকিয়া যার একসময়কার রাজা ছিলেন সিদ্ধার্থ গৌতম (৫৬৩-৪৮৩ খৃস্টাপূর্বাব্দ) যিনি গৌতম বুদ্ধ বা শুধু বুদ্ধ নামেই পরিচিত।
তিনি পবিত্র ও সাধনাময় জীবনযাপনের জন্য তার রাজত্ব ত্যাগ করেছিলেন।
২৫০ খৃস্টপূর্বাব্দে এই অঞ্চলটি উত্তর ভারতের মৌর্য সম্রাজ্যের (Mauryan) অধীনে আসে, এবং
পরবর্তী সময়ে ৪র্থ শতাব্দীতে এটি গুপ্ত সম্রাজ্যের অধীনে একটি পুতুল রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
পঞ্চম শতাব্দীর শেষ হতে শুরু করে পরবর্তী বেশ কিছুটা সময় শাসন করে একদল শাসক যারা সাধারণভাবে লিচ্ছবি (Licchavis) নামে পরিচিত।
লিচ্ছভি সাম্রাজ্যের (Licchavi) পতন ঘটে অষ্টম শতাব্দীতে এবং এরই সাথে শুরু হয় নেওয়ারি (Newari) যুগের।
৮৭৯ সালে নেওয়ারিদের রাজত্ব শুরু হলেও সমগ্র রাষ্ট্রের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই অনিশ্চিত ছিল।
একাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে নেপালের দক্ষিণাংশ দক্ষিণ ভারতের চালুক্য সাম্রাজ্যের (Chalukaya) অধীনে আসে।
চালুক্যদের রাজত্বকালে নেপালের ধর্মে ব্যাপক পরিবর্তন আসে কারণ সব রাজাই হিন্দু ধর্মের পৃ্ষ্ঠপোষকতা করতেন, এবং
বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারের বিপরীতে হিন্দু ধর্মের প্রচারে অবদান রাখেন।
দ্বাদশ শতাব্দীতে যেসব রাজা অধিষ্ঠান করেন তাদের নামের শেষে সাধারণ একটি শব্দ ছিল আর তা হল মল্ল যার অর্থ হচ্ছে কুস্তীগীর।
গোর্খারাজ পৃথ্বীনারায়ণ শাহ কয়েক দশক ধরে যুদ্ধের পর কাঠমান্ডু উপত্যকা দখল করে—
ছোট-বড় রাজ্যে বিভক্ত নেপালকে একটি রাষ্ট্রীয় সংহতি দান করেন।
নেপালের ইতিহাসে এই সময় থেকে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে হিমালয় কন্যা নেপালের যাত্রা শুরু বলা যায়।
এই পৃথ্বীনারায়ণ শাহকে আজকের নেপালের প্রতিষ্ঠাতা বলা যায়। [সূত্র : উইকিপিডিয়া]
—ডেস্ক শুভবিশ্ব
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
ত্রাণ নিয়ে মৌসুনি দ্বীপে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্ররা
বাগদাদে করোনা হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে ৮২ জনের মৃত্যু
কবি শঙ্খ ঘোষের জীবনাবসান