খুচরো কথা চারপাশে
ভারতীয় ঘুষের কেত্তন
সুনীল শর্মাচার্য
ভারতীয় ঘুষের কেত্তন
পুলিশ ঘুষ খায়! মন্ত্রীরাও ঘুষ খায়! একা একা। কিন্তু ভিআইপি-রা? এখনো পর্যন্ত যত আর্থিক কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির ঘটনা জনসমক্ষে এসেছে—তাতে জড়িত কোনো ভিআইপির কোনো দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়েছে—এমন ঘটনা আমার জানা নেই।
শুনেছি চীনে এই ধরনের অপরাধের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং তা বারবার কার্যকর হয়েছে গত ৫০ বছরে। আমাদের দেশে বড়জোর মন্ত্রীপদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়, তাহলেই অভিযুক্ত নেতা চুরি করা টাকা ভোগ করেন অবাধে এবং রাষ্ট্র সেই টাকা ফেরত চায় না।
সুখরামের ঘর থেকে নগদ চার কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছিল, কিন্তু তাঁর কোনো সাজা হয়নি। অপারেশন দুর্যোধনে ১১ জন সাংসদ ধরা পড়েছেন এবং সংসদীয় অনুসন্ধান কমিটি এঁদের সংসদ থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করলেও, কমিটির সদস্য বিজেপির বিজয় কুমার মালহোত্রা এর বিরোধিতা করেছেন, তিনি পবন বনশল কমিটির সুপারিশপত্রে সই করেননি। উল্টে তিনি বিষয়টি ‘প্রিভিলেজ কমিটিতে’ পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
এইভাবেই নানা আইনি প্যাঁচে বিজেপি শাস্তিদানের প্রক্রিয়া ভণ্ডুল করে দিয়ে তার দলীয় অভিযুক্ত সাংসদকে বাঁচাতে তৎপর। মাত্র ১১ জন সাংসদ স্টিং অপারেটরদের ফাঁদে পড়লেও, আরো কতজন এই ফাঁদের বাইরে রয়ে গেলেন তা কে জানে।
এ ছাড়া দেশের রাজ্য বিধানসভাগুলির বিধায়ক ‘ল্যাডের’ টাকা নিয়ে কি হচ্ছে তার খবরও আসতে বাকি। বাম সাংসদরা এ দুর্নীতিতে জড়াননি দেখে মুখ টিপে হাসি। কে আর ধুয়া তুলসী পাতা! সুযোগে বিড়ালও বাঘ হয়ে যায়!
ঘুষ অপেক্ষাও যে জিনিসটি রাজনীতি থেকে চুরি গেছে তা হলো : ‘নৈতিকতা’ ও ‘মূল্যবোধ’, তা না-হলে পুলিশের চোখের সামনে মন্ত্রী-নেতারা বছরের পর বছর ‘ফেরার’ হয়ে ঘুরে বেড়াবেন কেন?
এখন রাজনীতি করতে, বিধায়ক বা সাংসদ হতে প্রচুর টাকা লাগে। বিধায়ক হতে ২৫ থেকে ৫০ লাখ এবং সাংসদ হতে কমপক্ষে লাগে ১ কোটি টাকারও বেশি। খুব কম ব্যক্তিই আছেন, যিনি নিজের অর্জিত টাকায় ৫ বছর অন্তর বারবার এত টাকা খরচ করে নির্বাচনে লড়ার ক্ষমতা রাখেন।
তাহলে বাকিরা এই টাকা পান কোথায়? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজলেই এইসব ঘুষ কাণ্ডের গোড়ায় পৌঁছনোর একটা সূত্র পাওয়া যেতে পারে।
সাংসদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের বার্ষিক ১৬ হাজার কোটি টাকা বন্ধ করে ওই টাকায় নির্বাচন ‘স্টেট ফান্ডিং’ করার জন্য একটি তহবিল গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন সংসদের একটি মহল। এটা করা হলে নির্বাচনে লড়ার টাকা সংগ্রহ করতে প্রার্থীদের আর কারো কাছে হাত পাততে হবে না।
তবে, রাজনৈতিক দলগুলি যদি অসৎ ও দাগীদের প্রার্থী করার প্রথা ত্যাগ না-করলে, সরকারি টাকা নয়-ছয়ের ঘটনা রোধ করা যাবে না।
প্রকৃত শিক্ষিত, সৎ, দেশপ্রেমিক মানুষের অভাব দেশে নেই। তাঁদের রাজনীতিতে আনতে হলে রাজনৈতিক দলগুলিতে আগে আত্মশুদ্ধি করতে হবে। না-হলে, ‘নানারকম লুটের’ ঘটনা ঘটতেই থাকবে যেমন এখন ঘটছে।
আর এসব ব্যাপার মানুষের একবার গা সওয়া হয়ে গেলে তার ফল হবে ভয়ঙ্কর—ওপর তলার ধোপদুরস্ত নেতারাও তখন দাগীদের হাত থেকে রক্ষা পাবেন না।
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
গল্প
এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প: সুনীল শর্মাচার্য
আঁধার বদলায় : সুনীল শর্মাচার্য
প্রবন্ধ
কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য
মুক্তগদ্য
খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে
ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন
বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে
17 thoughts on “ভারতীয় ঘুষের কেত্তন”