পরলোকগমন করেছেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মিতা হক। আজ সকাল ৬টা ২০ মিনিটে রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি; তবে চারদিন আগে করোনা নেগেটিভ এসেছিল। আজ রোববার (১২ এপ্রিল ২০২১) বেলা ১১টায় শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ ছায়ানটে নেওয়া হয়।
মিতা হকের জামাতা অভিনেতা মুস্তাফিজ শাহিন জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। চারদিন আগে করোনা নেগেটিভ হলে বাসায় নেওয়া হয়। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে, আবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মিতা হক পাঁচ বছর ধরে কিডনি রোগে ভুগছিলেন। নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিয়ে ভালোই ছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েন।
১৯৬২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন মিতা হক। প্রয়াত অভিনেতা খালেদ খানের স্ত্রী তিনি। তাঁর চাচা দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রপথিক ও রবীন্দ্র-গবেষক ওয়াহিদুল হক। একমাত্র মেয়ে ফারহিন খান জয়িতাও রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী, জামাতা অভিনেতা মুস্তাফিজ শাহিন।
মিতা হক প্রথমে চাচা ওয়াহিদুল হক এবং পরে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খান ও সন্জীদা খাতুনের কাছে গান শেখেন। তিনি তবলাবাদক মোহাম্মদ হোসেন খানের কাছে ১৯৭৬ সাল থেকে গান শেখা শুরু করেন।
মিতা হক বাংলাদেশ বেতারের সর্বোচ্চ গ্রেডের তালিকাভুক্ত শিল্পী। ১৯৯০ সালে বিউটি কর্নার থেকে প্রকাশিত হয় মিতা হকের প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম ‘আমার মন মানে না’। সংগীতায়োজনে ছিলেন সুজেয় শ্যাম।
এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ২০০টি রবীন্দ্রসংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। তাঁর এককভাবে মুক্তি পাওয়া অ্যালবাম ২৪টি। এর মধ্যে ১৪টি ভারত থেকে ও ১০টি বাংলাদেশ থেকে। তিনি ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক লাভ করেন। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০২০ সালে একুশে পদক প্রদান করে।।
‘সুরতীর্থ’ নামে একটি গানের স্কুল রয়েছে তাঁর। একসময় ছায়ানটের রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন পরিষদের সহ-সভাপতিও ছিলেন।
সংগীতশিল্পী মিতা হকের পরলোকগমন। মিতা
মা–বাবার পাশে শেষ ঘুমে মিতা হক
আজ জোহরের নামাজের পর কেরানীগঞ্জের বড় মনোহারিয়ায় জানাজা শেষে মা–বাবার কবরের পাশে শেষ ঘুমে শায়িত হন মিতা হক।
এর আগে বেলা ১১টায় তাঁর মরদেহ নেওয়া হয় ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে। সেখানে ফুল দিয়ে মিতা হককে শেষ শ্রদ্ধা জানান তাঁর সহকর্মী, স্বজন, শিক্ষার্থী ও গুণগ্রাহীরা।
এ সময় সমস্বরে তাঁরা গেয়ে ওঠেন, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে’, ‘জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে’ ও ‘পথে চলে যেতে যেতে’ গানগুলো।
মিতা হকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শোক প্রকাশ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।
—প্রতিবেদক, শুভ বিনোদন
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস
যেসব পণ্যের দাম বাড়বে-কমবে
৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট, আগের ৪৯টি বাজেটের ইতিহাস