মোহাম্মদ হোসাইনের তিনটি কবিতা
রেনেসাঁ ও পঙক্তিগুচ্ছের ভোজ
কাদামাটির গন্ধ নিয়ে এসেছি
হাতে চালতার রস, আমলকি বন
গুলগুলির ভেতর থেকে এনেছি বাবুইয়ের বাসা, রেনেসাঁ
মাকু ফেলে চলে গিয়েছে যে মুখ, যে কাঁকন
তাকে ফিরিয়ে এনেছি
সর্ষে ক্ষেত থেকে নিয়ে এসেছি সলাজ হাসি, সরল অভিমান
স্কুলব্যাগে নীল প্রজাপতি, নীলাদ্রি
সব ফিরিয়ে এনেছি
মৃত্তিকার সাথে আমার একটা ডিল ছিল
সে যখন কবিতা চটকাবে, আমি তখন মেহগনি রাত
আমি যখন ধাতব শলাকা, সে তখন চৌরাশিয়া
সুতুপা তখন রাত্রি নামাবে, আমি নিটোল নীরবতা
রোদের চিঠি যদি নিয়ে আসে মেঘদীপা
আমি সেতারবাদক, জাফরান রঙ
নদীকেও আমন্ত্রণ জানাব
জলপাইগুড়ি, শিলং পাহাড় থেকে অমৃতা
নিয়ে আসবে সবুজ সবুজ বরফদানা
শেষের কবিতার হবে শুভ মহরত
পাঁচু গোপাল, রবীন্দ্রনাথ আর শাহ করিমের মাঝে চলবে রাতব্যাপী কবিয়াল গান
উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ বাজাবেন সরোদ
রবিশংকর তানপুরা
সুলতান তখন আঁকবেন, বাংলার গান,
বিদ্রোহী কবিতা
পাঁচমাথা মোড়, জানালার কার্নিশ, দেহের রেকাবিতে সাজানো থাকবে থরে থরে অপার্থিব আলো, খুঁনসুটি উষ্ণতার!
গ্রাম আর শহর বলে থাকবে না কিছু
ইটকাঠসিমেন্টের মাঝে রোপে দেয়া হবে কবিতার স্বরলিপি, সারগাম
ঋতুভেদে বসবে নানান বাহারি মেলা
প্রকৃতি নিজে আসবে ভ্রমণে
সাথে ‘সাতটি তারার তিমির’
রূপালি স্নান সেরে আসবে, বানিশান্তার মেয়েরা
তখন, তুমুল বেজে ওঠবে অন্ধকার, চাকা ফিরে আসবে, ফিরে আসবে আমাদের পিতামহ, প্রপিতামহরা
প্রিয় কবিদের রন্ধনশালায় জমে ওঠবে ভোজ, পাখিময় পঙক্তিগুচ্ছের…
.-.
মা ও মাটির কলস
কুট কুট করছে শরীর
ফুসকুড়ি দিচ্ছে ঘাম
অশ্রুত সব কথা
অব্যক্ত সব বেদনা
দানা বেঁধে হাঁটছে
ভেতরে ভেতরে ফুটছে ফারেনহাইট
ঝিম ধরে আছে শাখা
হাওয়া নেই
সবুজ নেই
এ এক অভেদ সময়
আশা ভেঙে যায়
গভীর ক্ষতের দাগ
বয়ে নেয় কাল!
চারপাশে বিষময়
অন্তহীনস্রোত
মা ও মাটির কলস
ভেসে যাচ্ছে, ভেসে যায়
তবু মায়াময় জীবন
ডেকে ওঠে শূন্যতা
ডেকে ওঠে প্রেম, ভক্তিময়
দূরের বেহাগ!
বুক পেতে আছে শাখা
গুল্মস্বভাব
জল চায়, মগ্নতা চায়
চায় শিহরণ
সুদূরের, সুন্দরের…
.-.
অনন্তের তরবারি
অনন্তের দিকে চলে যায় হাত
কখনো কখনো নানা বর্ণপাখি, নানা বর্ণের কানকো নিয়ে আসে
আমি যা চাইনি কোনোদিন
তাই মূর্ত হয়ে ওঠে
সোমের মতো নরম মেঘ, ভালোবাসার মতো পেঁজাতুলো, চন্দ্রমল্লিকার খুশবু ছিটিয়ে যায়
উত্তুঙ্গ বাতাস তখন উচ্ছৃঙ্খল তুর্কি তরুণ
যেদিন প্রশ্ন শেষ হয়ে যাবে
সেদিনই ভেঙে পড়বে ইমারত
সেদিনই শেষ সূর্যোদয়
মানুষ অন্ধকারকে যত না ভয় পায়
তারচে, হাজারগুণ ভয় পায় সে তার নিজেকে
কুর্ণিশ শব্দটিকে এখন আর কেউ আগের মত মেনে নিতে চায় না
খাঁচা শব্দটিও
যখনই
ধনেশ পাখির ঠোঁট এঁকে রেখেছি শূন্যপাতায়
অমনি উত্তরের পাহাড় থেকে ছুটে এসেছে
বল্লভ
আমি অন্ধকার ছুঁড়ে দিতেই হাওয়া
রামকিঙ্কর পর্বতে তখন আলোর ধুম
শ্বেত পায়রার সবাক কুসুম
গানগুলো কোরাস
হাতগুলো মহাবিশ্ব ছাড়িয়ে
অনন্তের তরবারি…
অসাধারণ কবিতা।
অনেক শুভেচ্ছা। শুভ কামনা…