shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

রওশন রুবীর ছয়টি কবিতা

Rowshon Rube six poems
Rowshon Rube six poems

ছয়টি কবিতা

রওশন রুবী

রওশন রুবীর ছয়টি কবিতা

আমাদের রোদগুলো

আমাদের রোদগুলো লেপ্টে আছে যেন রোদনদী

নৌকো নিয়ে ছুটে যায় কত কত বয়সী সেই রঙ;

মাছ-গন্ধ, কাচিমগন্ধ, মানুষ, সবুজ আর ছায়া-গন্ধ

ভেসে যায় তেরসা, সোজা, আঁকা-বাঁকা।

.

আমাদের রোদগুলো জুলিয়েট, মোনালিসা,

শাহজাহান, সিরাজউদ্দৌলা, বখতিয়ার খলজি,

প্রয়োজনে কাছে, অপ্রয়োজনে দূরে সরে যায়।

.

শহরটাও প্রসারিত হতে থাকে

মাসের শুরুর দিকের কথা,

এক কোণে শহর এসে শেষ, গুমোট হাওয়া

কপোতের গায়ে আঁকে তারাপুঞ্জের আলপনা,

দু’চারবার চোখ ফিরিয়েও আটকে রইলাম।

.

এগিয়ে গেলাম সামনে।

শ্রমিকের ঘাম আর ক্লান্তি ভেজা বাতাস এখানে স্যাঁতস্যাঁতে

ইট ভাঙা কুৎসিত রুক্ষ হাত চা এগিয়ে বলল—

শহরের ছায়া তল নেই, ক্লান্তি দম ফেলে এই উত্তাপে,

নে একটুকরো রোদ, অনুসরণ কর রুক্ষতার পা,

পাথুরে ভূমি পরে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দূরাগত

ডালপালা ছুঁড়ে ফেল। জিনিস-পত্তরে স্বদেশি গন্ধ,

কোন মঞ্চ থেকে নেমে এলি?

.

ব্ল্যাকবোর্ডের দাগ মুছে মুহূর্তে গোলাপগুচ্ছ

হয়ে যায় বাড়িয়ে দেয়া চা। চকচকে করে বোর্ড।

মনে পড়ে রমাকে, সেও পরোপকারী ছিল।

দেখা হলেই দু’টিতে খুঁনশুটি, খলখল কলতল।

এক ক্রিশমাসে রমা হারিয়ে গেছে।

হয়তো এখন দেখা হলে চিনবে না শৈশবের আমাকে,

আমিও তাকে চিনবো কি? একটা বাক্য ছিল আমাদের;

লম্বা একটা দম নিয়ে ওকে পথে নামিয়ে দেই—

‘যদি খুঁজে পাও আপন ঠিকানা,

কাঁচের ধারালো টুকরো আমাকে দিও।’

.

অতঃপর আমরা ব্যবধান ভুলে গেলাম;

শহরটাও প্রসারিত হতে থাকে।

সে ব্যবচ্ছেদ করলো স্মৃতির মমি।

.

দ্রোহ

কবিরও থাকে সীমা অসীমের মোহ

সবকিছু ঠেলে শেষে আগলে নেয় দ্রোহ।

.

দেশ

দেখ তরুণ বুকের দাঁতে আটকে আছে দেশ

নিংড়ে নিলেও ভালোবাসা হবে না নিঃশেষ।

.

বন্ধু মানে শৈল্পিকমেঘ

বন্ধু মানে একফালি চাঁদ জোছনা ভেজাবেলা

কপাটজুড়ে মধ্যদুপুর মধুর অবহেলা

বন্ধু মানে দু’হাতে যার দুঃখের হাতের নদী

এই বুকেতে অনাহুত বইতো নিরবধি

বন্ধু মানে শৈল্পিকমেঘ কারুঅন্তঃপুর

কণ্ঠজুড়ে মূর্ছনা তার প্রাণে প্রাণের সুর।

.

সন্ধ্যাতারায় দেখে নিতে পারোনি পথ

এরকম সন্ধ্যায় কখনো তুমি ছড়াওনি বারুদের আস্তিন

তাই বলে তুমি নও ক্যামেলিয়া হেরাগুহা কিংবা জমজম।

.

লাবণ্যের ধারাপাত ছুঁয়ে যে মুখ, তার বিশুদ্ধতা দেখনি

বুঝনি, সিঁদুর মুছে গেলে রমণীরা চিতাও গিলে নিতে পারে।

.

আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে ধেয়ে আসা টাইফুন কতবার থেমে গেছে

অবিশ্বাসের বানে বিস্ফোরিত চোখও একদিন ঘুমিয়েছে।

.

তুমি রাখনি তখনো খবরের কাগজে ঘুম ঘুম চোখ

গুডমর্নিং ‘টি’-এর মধ্যে ডোবাওনি সল্টস্বাদের ঠোঁট।

.

মজ্জা, পাঁজরে, তারও ভেতর আরো মোহের জগৎ

সেই জগতে এফোঁড় ওফোঁড় আমার দেশের আকাশ।

.

সীমান্তের চিহ্ন তুলে দেখ বহুবার পৃথিবী হতে চেয়েছি

উদ্যম ভালোবাসায় মানুষের কাছে হারিয়ে যেতে চেয়েছি।

.

তুমি তো জানোনি বাঁচার লোভে কতটা কাঙাল মন

কতটা অনিহায় আঙুল থেকে মুছে দিয়েছি আঙুলের ক্রন্দন

.

জানোনি বলেই তুমি সন্ধ্যাতারায় দেখে নিতে পারোনি পথ

শুকতারা চেনোনি বলে, চিনতে পারোনি শৈল্পিক সমাদর।

About The Author

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...