মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ নৃপেন্দ্রনাথ রায়চৌধুরীর (নৃপেন ঠাকুর) স্মরণে ১৯৯৮ সালে স্থাপিত হয় স্মৃতিস্তম্ভ। স্মৃতিস্তম্ভটি সৃজিত হয়েছে, স্পর্ধিত এবং বর্ধিত হয়েছে কবি প্রদীপ মিত্রের একটি কবিতার সৌকর্য। এ দিক থেকে এই স্মৃতিস্তম্ভটি একাধারে মহান মুক্তিযুদ্ধের অক্ষয় চেতনার স্মারক এবং স্রোতস্বিনী বাংলা ভাষার অমল দ্যোতক।
১ অগ্রহায়ণ ১৪০৪, কৃষিসংস্কৃতির প্রধান উৎসব নবান্ন উপলক্ষে শহীদ নৃপেন ঠাকুর স্বমহিমায় কবিতাটি বুকে ধারণ করে তাঁর গ্রাম, গণ্ডগ্রামে আর্বিভূত হলেন; জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে অশ্রু আর আনন্দের আবীর ছড়িয়ে।
অতঃপর ‘তিরিশ লক্ষ শহীদের প্রতীক ও প্রতিভূ’ হয়ে গ্রহণ করলেন নবান্ন। এরপর অগ্রহায়ণ শেষে পৌষ মাস যেতে-না-যেতেই মাঘ মাসের শ্রী শ্রী পঞ্চমী [সরস্বতী পূজা] তিথিতে স্থায়ীভাবে আপনার আসন পেতে বসলেন যেন কোনো এক ‘বরাভয় সাহসের’ ধ্যানী ঋষি।
‘প্রতিষ্ঠার অধিক প্রতিষ্ঠিত’ [পতাকার অহঙ্কার, প্রদীপ মিত্র : ১৯৯৯] কাব্য শিরোনাম যেন সত্যের মতোন চিরদীপ্ত যেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অগ্নিমন্ত্র : শহীদ নৃপেন ঠাকুর স্মৃতি সংসদ, গণ্ডগ্রাম, শাজাহানপুর, বগুড়া। যার উদ্বোধক গ্রামেরই বীরমুক্তিযোদ্ধা নিরঞ্জন মোহন্ত। জয় হে জয় হে জয়, জয়, জয় জয়; জয় বাংলা।
আনন্দ আনন্দকে আহ্বান করে, সঙ্ঘ সঙ্ঘকে আহ্বান করে, ভাষা ভাষাকে আহ্বান করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আহ্বান : ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে শোনো শোনো পিতা/ কহো কানে কানে শোনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গল বারতা।’ এমনই আহ্বানে শহীদ নৃপেন ঠাকুর স্মৃতি সংসদ দুইহাত প্রসারিত করে, ঢাকাস্থ ‘বাংলাদেশ ভারত মানবাধিকার মৈত্রী সংস্থা’ কর্তৃক প্রদত্ত ‘মহাত্মাগান্ধী স্বর্ণস্মারক-২০১৬ সম্মাননা’। কেন এই সম্মাননা?
শহীদ নৃপেন ঠাকুর স্মৃতি সংসদের ‘আঙটপাত’ থেকে জানা যায়, জাতীয় দিবস উদযাপনের বাইরেও নারী-পুরুষ এই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক তিথি পর্ব-পার্বণ, সামাজিক এবং পারিবারিক অনুষ্ঠানেও সমানভাবে শ্রদ্ধা জানায়।
ভক্ত যেমনটা ভক্তি-অর্ঘ্য জানায় তার দেবস্থানে, তীর্থে এবং জলঘাটে। লোকাচারের ক্রিয়া-কর্ম সমাজবিজ্ঞানের এক শক্তিশালী এবং সতেজ অধ্যায়। সবচেয়ে বড় ঘটনা, শহীদ নৃপেন ঠাকুর স্মৃতি সংসদ উদযাপন করে সর্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গাপূজা।
শহীদ-আত্মার উদ্দেশে নবান্ন নিবেদন, গণ্ডগ্রামবাসীর এক অনন্য অর্জন—যা অন্য কোথাও কেউ খুঁজে পাবে নাকো কেউ! তারপরেও বেদনার কথায় বৃন্দাবন দাস বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথে, লোকসংস্কৃতির বিদগ্ধ গবেষক, অধ্যাপক আসুন…; পাঠ করুন…। তবেই না প্রাণ থেকে প্রাণের গহীনে বইবে গো নতুন আলো…।
—বিশেষ প্রতিনিধি
…………………
পড়ুন
কবিতা
মতামত
বঙ্গবন্ধু : দর্শনগত চর্চার সংক্ষিপ্ত ভূমিকা
বঙ্গবন্ধু : দর্শনগত চর্চার সংক্ষিপ্ত ভূমিকা – ২য় পর্ব
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
করোনায় দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ১০৮, শনাক্ত ৫৮৬৯ জন
করোনায় আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্ত, মৃত্যু ৮১
একদিনে করোনায় ৮৫ জনের মৃত্যু