shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

শিব্রাম বলেছিলেন, কিছু বাস্তব সত্য

Free prose

খুচরো কথা চারপাশে

শিব্রাম বলেছিলেন, কিছু বাস্তব সত্য

সুনীল শর্মাচার্য

শিব্রাম বলেছিলেন, কিছু বাস্তব সত্য

শিব্রাম বলেছিলেন

শিব্রাম বলেছিলেন, ‘বিয়ে করিনি, করিনি কেন? ও-কাজ কেউ করে? একটা চুমু খেতে গেলেও পরমুখাপেক্ষী হতে হয়!’ এখন দেখছি আমাদের দেশের অবস্থাও তাই। পরের ধনে পোঁদারি শুধু মুখে বলি হও স্বাবলম্বী।

তাই ভাবি, দেশপ্রেম আর দেশ প্রেমের হাওয়া এক নয়। মধ কি বাত বলতে গিয়ে যারা বাতেলা মারে, তারা সকাল বেলায় চীনা সংস্থাকে বরাত দিয়ে দুপুরবেলা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলে সন্ধ্যেবেলা দেশবাসীকে ওঁ ওঁ ওঁ কে লিয়ে শোক প্রকাশ করে রাতে শান্তিতে ঘুমাতে যায়।

মোবাইল, টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রো ওভেন, ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ সবই বিদেশি। সিঁদুর, টুনি লাইট, সস্তা সস্তা যা কিছু তার সবকিছুই মেড ইন চায়না। প্রশ্ন হলো, বিদেশি কোম্পানির এসব প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক গুডস ভারতে তৈরি হয় না কেন? (এমনকি যে ঔষধ আমরা খাই, সেসবও অধিকাংশই চীনের।) দেশকে আত্মনির্ভর না-করে পরমুখাপেক্ষী হলাম কেন আমরা?

কিছু মাস আগে, রাফালের আমদানি করে অনিল আম্বানিকে দায়িত্ব দেওয়া হলো, সরকারি সংস্থা হলকে বঞ্চিত করে। নোটবন্দীর সময় রাতারাতি পেটিএম চালু করে প্রধানমন্ত্রী নিজে এর প্রচার করলেন। এই পেটিএম চীনের।

নিজের দেশকে দুর্বল করে পরদেশকে কারা এদেশে অবাধ বাণিজ্য করার সুবিধা করে দিল এবং কেন? এই কেনোর উত্তরেই লুকিয়ে আছে আমাদের দেশের দুরবস্থার কারণগুলি। চীনা পণ্য বয়কট করার কথা যারা বলছেন, তারা আগে বয়কট করুন কর্পোরেট দাসদের, বাজার ও পুঁজিকে।

.

কিছু বাস্তব সত্য

কিছু বাস্তব সত্য কথা মানে উচিত কথা বলতে গেলে—অনেকেই হা হা করে ওঠেন। কারণ, তারাও এক একটা প্রতিষ্ঠান। সমাজের মধ্যে, পাড়ার মধ্যে, আপনার চারপাশে। আপনার ব্যক্তিত্ব বিকাশে তারা চিরকাল বিরোধী।

পাগলা, কোথায় যাবি? সব দিকে তাদের ফাঁদ পাতা। ভুবনে। প্রতিষ্ঠানবিরোধী আপনি। যা কিছু করেন। যা কিছু লেখেন। সমালোচনার ঝড় বইয়ে তারা তাদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা আপনার ওপরে চাপাবেন।

আপনি প্রতিষ্ঠান ভাঙতে সাহসী। আপনি জানেন, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা একটি সক্রিয় নান্দনিক প্রত্যয়—যা নিরন্তর জিজ্ঞাসার পথ উন্মোচিত করে। প্রতিষ্ঠিত শক্তি প্রতিষ্ঠান আর প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা আসলে কোনো খণ্ডিত বিষয় নয়। এটা আমাদের মধ্যবিত্ত মানসিকতার প্রচলিত মূল্যবোধ, ব্যবস্থা ও প্রবল বা প্রতিষ্ঠিত যাবতীয় নান্দনিক ধারণার বিরুদ্ধে ব্যাপক আক্রমণ, প্রতিরোধ বা আন্দোলন।

সচেতনভাবে দিল খোলা মানুষ সর্বদা প্রতিষ্ঠানবিরোধী। সে সবকিছু ভাঙতে চায়। নিজের অধিকারে চলতে চায়। বাঁচতে চায়। আজ গণতন্ত্রের নামে বিকৃত পুঁজিবাদী এই সমাজ ব্যবস্থায় অস্তিত্ব এবং ধারাবাহিক কার্যাবলী সর্বোপরি আধিপত্যবাদী চরিত্রকে কোনোক্রমেই অস্বীকার করার উপায় নেই। এর মূলে একমাত্র দায়ী পুঁজি, পুঁজির বিকাশ, পুঁজির লগ্নি।

ভাবুন, জোঁক যতই ছোট হোক, রক্ত চোষাই তার স্বভাব। পুঁজি বা পুঁজিপতি, কর্পোরেটও তাই। শুভ লাভে, উন্নয়নের ধুয়ো জনগণের বা আমার, আপনার রক্তচোষাই কাজ করছে। সেখানে (মনে হয় ভুয়া) গণতন্ত্র সেই পুঁজিপতি, বুর্জোয়া, পাতি বুর্জোয়া, সুবিধাবাদী, দালাল, চাটুকার, ঘুষখোর, দুর্নীতিপরায়ন চরিত্রের নেতা-নেত্রী, তথাকথিত বিপ্লবী তৈরি করছে। পুঁজির নিয়ন্ত্রণে মিডিয়া, সমাজ, রাষ্ট্র, শাসক, শাসন কেমনতর হয়ে যাচ্ছে।

আপনি প্রতিবাদ করছেন, আমিও প্রতিবাদ করছি। কিন্তু জোরালো কিছুই হচ্ছে না। ব্যাপক গণ-আন্দোলন হলে এর ভিত হয়তো ভাঙা যায়। সেটা যে কবে? কবে? এখনো জানি না!

.

ভাবছি, বাংলা ভাষায় লিখেটিখে

ভাবছি, বাংলা ভাষায় লিখেটিখে কি হবে? এই পশ্চিমবঙ্গে আগামী বিশ বছরে বাংলা ভাষা আরো প্রান্তিক ভাষায় পরিণত হবে। যেভাবে ক্যারিয়ার-সর্বস্ব শিক্ষা বাঙালিদের পেয়ে বসেছে, তাতে বাংলা ভাষার বিসর্জন অবসম্ভাবী।

একদিকে হিন্দি আরেকদিকে ইংরেজি আমাদের বাংলাভাষাকে গিলে খাচ্ছে। কেননা, বাংলা শিক্ষা করে আর রুটিরুজি হবে না। হবে না জ্ঞানচর্চার উপযুক্ত আধার। অন্যদিকে, রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা ঘোষণা করে বাংলা ভাষার ঘৃতাহুতির আয়োজন করছেন।

পাশাপাশি অন্যান্য রাজ্যে তাদের ভাষা দিন দিন চড় চড় করে শ্রীবৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে। আর বাংলা ভাষা হিন্দি-ইংরেজি এবং অন্যান্য ভাষার মিশেলে অসমবর্ণ হয়ে উঠছে। এটা ভালো নয়, খারাপের দিক তা বুদ্ধিমানরা জানেন!

.

বাঁশের সংস্কৃতি, বাঁশের রাজনীতি

আমাদের দেশে বাঁশের মহিমা অপার। এ বিশ্ব জগতে কোন স্মরণাতীত কাল থেকে বাঁশ মানব জীবনের সঙ্গে অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ—তার তালিকা যেমন দীর্ঘ তেমনি বিচিত্র। তৃণ-গোত্রীয় (Grass Family) বহুবর্ষজীবী রোমান ভাষার ‘Bambuac’, সংস্কৃতের ‘বংশ’ আর বাংলা ভাষার

বাঁশের সে সুদীর্ঘ ইতিহাসে না-ঢুকে বরং আমরা বাংলা ও বাঙালির জীবনে এই রক্তবীজ সদৃশ্য

‘ঝাড়’-এর অপরিসীম গুরুত্ব ও তাৎপর্য অতীব সংক্ষেপে বুঝে নেবার চেষ্টা করতে পারি।

বাঙালির অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক জীবনে বাঁশের উপযোগিতা নানাভাবে মান্যতা পেয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। আর্থিক উপযোগিতার দিক থেকে বাঁশের পায়া ভারী হলেও, বাঙালির রাজনৈতিক জীবনে বাঁশ যেন ক্রমশ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

উচ্চশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত, উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত—সকলের মধ্যেই বাঁশ দেওয়ার প্রতিযোগিতা যেমন আগেও ছিল, এখনো আছে। তবে ইদানীং বাংলার রাজনীতিতে বাঁশের কদর যথেষ্ট বেড়েছে। এখন নেতা-নেত্রী-মন্ত্রী-সান্ত্রীরা তাঁদের রাজনৈতিক মঞ্চে যেভাবে কথায় কথায় ‘বংশ’ দণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে আনছেন—তাতে মালুম হচ্ছে বাঁশের রাজনৈতিক প্রেক্ষিত এখন কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

বাঁশ কে বা কারা কেমন করে দিচ্ছে—তার সব তত্ত্বই ভাষণে ও মুদ্রায় বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সর্বশক্তিমান বাঁশের ক্ষমতা যে কতটা তা বোঝা যায়—এইসব রাজনৈতিক বক্তৃতায়। বাঁশের অসীম সাংস্কৃতিক ক্ষমতার কথা আমরা জানি, কোন পৌরাণিক যুগে রাধা ‘মরি লো মরি আমায় বাঁশিতে কে ডেকেছে’ বলে সেই যে ঘরসংসার-স্বামী ফেলে ঊর্ধ্বশ্বাসে কদমতলায় গিয়ে প্রেমিকপ্রবর শ্রীকৃষ্ণের কণ্ঠলগ্ন হয়ে অমর-প্রেমের মিথ গড়লেন আর স্বামীর ঘরে ফিরলেন না।

আর আছোলা বাঁশ খেলেন শ্রীরাধিকার স্বামী বেচারা আয়ান ঘোষ! এভাবেই বাঁশির সাংস্কৃতিক তথা

নান্দনিক উত্থানের মধ্যে দিয়ে ভারতবর্ষে নর-নারীর জীবনে পরকীয়া প্রেমের বৈধতা নির্দিষ্ট হয়ে গেল ঘরে ঘরে মন্দিরে মন্দিরে।

উদ্ভিদ জগতে আর কোনো বৃক্ষের বাঁশের মতো এমন প্রেম উৎপাদনের শক্তি নেই। অন্যদিকে, বাঁশের রাজনীতি ও রাজনীতির বাঁশও মানবজীবনে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিশেষ করে, হাল আমলের বঙ্গ-রাজনীতিতে তো বাঁশের রাজনীতির খুবই কদর চলছে। কোন দল কোন দলকে বাঁশ দিচ্ছে এবং সেটা কেমন করে বাঁশ দিচ্ছে—তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে তার মুদ্রাও দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজনীতির মঞ্চে মঞ্চে।

রাজনীতির মঞ্চে বাঁশের এমন হৈ হৈ করে ঢুকে পড়া আগে ছিল না। তাই বুঝি ইদানীং ছোট থেকে বড়, আট থেকে আশি, ঘরে-বাইরে, স্কুল-কলেজে বাঁশের চর্চায় সবাই মেতে উঠেছে।

.

রাজনৈতিক দলগুলি এক একটি প্রতিষ্ঠান

ভারতীয় শাস্ত্র যেভাবে উচ্চারণ করে, বলে, ‘তোমার করণীয় কিছুই নেই, পূর্ব থেকে সব স্থির হয়ে আছে, এই জন্মে তুমি কি করবে!’ গীতায় শ্রীকৃষ্ণও প্রায় এরকম বলেছিলেন অর্জুনকে।

তেমনি এখন প্রতিষ্ঠান আমাদের সবকিছু ঠিক করে দেয়। এখন প্রতিষ্ঠানই আগে থেকে স্থির করে রাখে, কাকে কতটা বিপ্লবী বানাবে, কাকে পপুলার লেখক করবে, পুরস্কার দেবে, কাকেই-বা নামিয়ে দেবে সিংহাসন থেকে!

ভয়ঙ্কর এক সত্য আজ মিডিয়া বা সংবাদপত্র—যা রাজনীতি, সাহিত্য, শিল্প, নারীবাদ, ধর্ম ও দলিত বিষয়ে নির্মোহ ভঙ্গিতে পাঠকের সামনে, দর্শকের সামনে তুলে ধরে আরেক জগৎ। ফলে, তারকার জন্ম যখন দেখি মিডিয়ার দৌলতে, অবাক হই না।

মিডিয়া তো প্রতিষ্ঠানেরই অনুঘটক, ফলে, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্র যখন কৃষকের জমি নীরবে শিল্পপতির হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেয়, তা সুকৌশলে চেপে যায় মিডিয়া, মানুষকে জানতে দেয় না। কৃষক আন্দোলন সম্পর্কে ভুল তথ্য প্রচার করে মিডিয়া। মানুষ যাতে প্রকৃত তথ্য অবগত না হয়, তার জন্য সে সৃষ্টি করে, দেশপ্রেম থেকে শুরু করে কত নতুন চমক।

আজাদির শ্লোগান তো উঠে এসেছে নারীবাদীদের আন্দোলন থেকে, তখন মিডিয়া তা তুলে ধরেনি, কেন না, প্রতিষ্ঠান কখনোই চায় না নারীর প্রকৃত স্বাধীনতা।

দলিতপ্রেম কতখানি, তা ভারতবর্ষের সকল রাজনৈতিক দলই, এমনকি বামপন্থীরাও দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের। তাদের বক্তৃতা আর কাজে কত ফারাক, তার প্রমাণ তো যে কোনো দলের নেতৃত্বে নারী ও দলিতের সংখ্যার অনুপাতই দেবে।

কোনো ধর্মই চায় না নারীর প্রকৃত সম্মান, বরং শূদ্র ও নারীকে সমান চোখে দেখে এসেছে এই

ধর্ম নামক প্রতিষ্ঠানটি। রাজনৈতিক দলগুলি এক একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের কার্যকলাপ দেখলে, ভালো করে বিশ্লেষণ করলে, দেখা যাবে, নিজেদের অধিষ্ঠান পাকাপোক্ত করা ব্যতীত তাদের আর কোনো এজেন্ডা নেই।

শ্রমিক, কৃষক, দলিত, সংখ্যালঘু—এসব শব্দ তাদের উদ্দেশ্য সাধনের পথে এক একটি বোড়ে মাত্র। প্রতিষ্ঠান চায় না, এই শ্রমিক, কৃষক, দলিত ও সংখ্যালঘুরা প্রতিষ্ঠিত হোক। বর্ণবাদ এই জন্য টিকিয়ে রাখা হয়।

আমাদের দেশে এই বর্ণবাদের জয়জয়কার এখন। ফলে, সেই পুরাণকাল থেকে একলব্য ও শম্বুকরা, আজও, মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না প্রতিষ্ঠানের নষ্টামিতে!

.

উনি বলছেন না

করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলা করবার জন্য ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথার শেষ নেই। ‘মূল্যবান কথা’ সব। বলেছেন, টিকাকরণে দিতে হবে জোর। বলেছেন, বাড়াতে হবে মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জোন। বলেছেন, কোভিড রোগীকে করতে হবে শনাক্ত। বলেছেন, ভাইরাস চেহারা বদলাচ্ছে, নজর বাড়াতে হবে। বলেছেন, বিভিন্ন রাজ্যে যে করোনা বাড়ছে তা উদ্বেগজনক।

দেশের মানুষ

প্রধানমন্ত্রীর এত ‘কথা’ শুনেছেন, শুনছেন। কিন্তু যে কথা তারা শুনতে চায়, সে কথা যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন না। যেমন বলেননি, রাজ্যগুলির হাতে প্রয়োজন মতো টিকা পৌঁছোবে কবে? বলেননি, টিকাকরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তার ধারে কাছে কেন এখনো পৌঁছোতে পারছে না দেশ। বলেননি, টিকা বিলি বন্টনের দায়িত্ব নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকার কেন ব্যর্থ হচ্ছে?

বলেননি, কোভিড চিকিৎসার জন্য বহু অর্থ খরচ করেও রাজ্যগুলি কেন কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রাপ্য আর্থিক সাহায্য পাচ্ছে না। বলছেন না, দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় দেশে অক্সিজেন, ওষুধ উৎপাদনে যে ঘাটতি ছিল, তার আসল রহস্যটি কী? বলছেন না, করোনার কড়াকড়িতে যে কোটি কোটি মানুষ উপার্জন হারাচ্ছে, তাদের জন্য পুনর্বাসনের কোন পথ সরকার দেখাবে!

বলছেন না, যেসব রাজ্য কোভিড মোকাবিলায় ভালো কাজ করছে, কেন্দ্র তাদের বাড়তি সুবিধে কী দিচ্ছে? বললেন না, তৃতীয় ঢেউ সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকার কোন কোন ব্যবস্থা নিয়েছে। তৈরি থাকছে হাসপাতালে কত বেড? কত অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে রাজ্যে রাজ্যে?

সব থেকে প্রয়োজনীয় কথা যা এবার বলছেন না প্রধানমন্ত্রী, তা হলো : প্রথম ঢেউয়ে দেশবাসী বাজিয়েছিল থালা, দ্বিতীয় ঢেউতে ভাতের খালি হাঁড়ি, তৃতীয় ঢেউতে কী বাজাতে হবে?

বলছেন না, করোনায় সঠিক কত লোক মারা গেছে, কত লোক টিকা নিয়ে কি কি পার্শ্বক্রিয়ায় কি কি যন্ত্রণায় কি কি অবস্থায় কি কি হয়েছে—তার সঠিক তথ্য?

বলছেন না, করোনা প্রবাহে কত কত জাতীয় সংস্থা বিক্রি করে কত আয় হয়েছে, আর কত কত টাকা শিল্পপতির অনাদায়ী ঋণের জন্য মওকুব করেছেন? কত টাকা জনগণের পকেট কেটে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি করে লাভ করেছেন? আর কত টাকা জনগণের সেবায় তা খরচ করেছেন?

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করে জনগণের ট্যাক্সের টাকা কত গিলে খেয়েছেন? আর যুদ্ধ, জেহাদী তৎপরতা, সীমান্তে উত্তেজনায় জনগণের টাকা তিনি এই দশ বছরে কত খরচ করেছেন?

কোনো ব্যর্থতার কথা তার ভাষণে থাকে না! কেমন বায়বীয় সব তার কথাবার্তা শুনছি আমরা এই করোনাকালেও!

.

আর কতটা পথ…

আমাদের সভ্যতার ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের। মনুষ্যেতর জীব থেকে আজকের এই আধুনিক মানুষের বিবর্তনের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম। কিন্তু কতটা আধুনিক মানুষ আমরা? আরো কতটা পথ হাঁটলে মানুষ হবো!

টলিউড অভিনেত্রী শ্রুতি দাসের গায়ের রং নিয়ে যে ব্যঙ্গবিদ্রুপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, তা দেখে বলতে ইচ্ছে করে, এই ব্যাধি তো ঘরে ঘরে আমরা লালন করে এসেছি প্রজন্মের পর প্রজন্ম।

প্রায় প্রতিটি ঘরের অভিভাবকেরাই সজ্ঞানে বউমা খুঁজতে গিয়ে ফর্সা রং খুঁজে এসেছেন বা আসছেন। কনে দেখতে গিয়ে গায়ের রং, শরীরের গড়ন বিচার করেন তাঁরা, এমনকী বাঁকা কথাও শোনান সময় সময়।

এভাবে কালো মেয়েদের প্রতি কতখানি অসম্মান দেখানো হয়, তা যদি তাঁরা বুঝতেন! এই মূল্যবোধের শেকড় তো রয়েছে আমাদের পরিবারগুলিতেই। একটি ছেলে বা মেয়ের যোগ্যতা বিচার করা উচিত তার শিক্ষাদীক্ষা, শিষ্টাচার দেখে। গায়ের রঙে নয়।

কিন্তু পুরুষশাসিত সমাজে ছেলেদের মনের বাসনা পূর্ণ করার নামে মেয়েদের যে রূপ খোঁজা হয়, তার একটা ছক আছে, যেখানে গায়ের রংটা ভারি গুরুতর ব্যাপার। ঘটনাচক্রে মেয়েরাই হয়ে যায় এই ভাবনার বাহক। যে কারণে অনেক সময়ই বলা হয়, মেয়েরাই মেয়েদের চরম শত্রু।

এই অচলায়তন ভাঙতে হলে সবার আগে মেয়েদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। স্টিরিওটাইপগুলি ভাঙতে হবে, ভাঙার শিক্ষা দিতে হবে সন্তানদের। বিশ্বাস করতে হবে, এই পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণের ভার শুধু শুধু পুরুষ মানুষের হাতে থাকতে পারে না, শুধু সাদা চামড়ার মানুষের হাতেও নয়।

পরিশেষে কবির সেই গানের কথা মনে পড়ছ, ‘কালো যদি মন্দ তবে, কেশ পাকিলে কান্দ কেনে?’ গায়ের রং নিয়ে উন্নাসিকতা বা হীনমন্যতা এক গভীর সামাজিক ব্যাধি!

.

আয় ইলিশ, আয়

বঙ্গবাসীর সঙ্গে ইলিশের সম্পর্ক সুপ্রাচীনকাল থেকে। পঞ্চদশ শতকের কবি বিজয় গুপ্তের মনসামঙ্গল কাব্যে লখিন্দর জন্মানোর আগে সনকার সাধভক্ষণে ইলিশের ঝোলের কথা রয়েছে—‘আনিয়া ইলিশ মৎস্য/ করিল ফালা ফালা/ তাহা দিয়ে রাঁধে ব্যঞ্জন/ দক্ষিণসাগর কলা।’

১৮২২ সালে ড. ফ্রান্সিস বুখানন হ্যামিলটন (১৭৬২-১৮২৯) সাহেব বঙ্গোপসাগরের মাছ নিয়ে গবেষণা করার সময় ইলিশের প্রতিশব্দ ইংরেজি হিলসা শব্দটি ব্যবহার করেন।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘ইলশেগুড়ি’ কবিতায় আছে—‘ইলশেগুড়ি ইলশেগুড়ি/ ইলিশ মাছের ডিম/ ইলশেগুড়ি ইলশেগুড়ি/ দিনের বেলায় হিম।’

এখন ইলিশের খরা। ইলিশ দুর্মূল্য। বর্ষায় অন্তত খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজাও জোটে না—আম বাঙালির কপালে। ঘটি-বাঙালের ইলিশ-তর্ক প্রায় স্থগিত। বাঙালি ইলিশ বঞ্চিত, স্মৃতিভারাক্রান্ত!

…………………
পড়ুন

কবিতা

সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা

সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ

লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য

প্রয়াণগাথা : সুনীল শর্মাচার্য

সুনীল শর্মাচার্যের কবিতাগুচ্ছ

অন্যভুবনের কবিতা

ঘোড়া : সুনীল শর্মাচার্য

মুহূর্তের কবিতা

অনুভূতি বেজে ওঠে

আমার কবিতা

সনেটগুচ্ছ

সুনীল শর্মাচার্যের সনেটগুচ্ছ

ভারতীয় লিমেরিক

সনেট পঞ্চ

সুনীল শর্মাচার্যের বারোটি কবিতা

মুক্তগদ্য

খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য

কত রকম সমস্যার মধ্যে থাকি

শক্তি পূজোর চিরাচরিত

ভূতের গল্প

বেগুনে আগুন

পরকীয়া প্রেমের রোমান্স

মুসলমান বাঙালির নামকরণ নিয়ে

এখন লিটল ম্যাগাজিন

যদিও সংকট এখন

খাবারে রঙ

সংস্কার নিয়ে

খেজুর রসের রকমারি

‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে

মোবাইল সমাচার

ভালো কবিতা, মন্দ কবিতা

ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন

বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে

দাড়ি-গোঁফ নামচা

নস্যি নিয়ে দু-চার কথা

শীত ভাবনা

উশ্চারণ বিভ্রাট

কাঠঠোকরার খোঁজে নাসা

ভারতীয় ঘুষের কেত্তন

পায়রার সংসার

রবীন্দ্রনাথ এখন

কামতাপুরি ভাষা নিয়ে

আত্মসংকট থেকে

মিসেস আইয়ার

ফিরবে না, সে ফিরবে না

২০২১-শের কাছে প্রার্থনা

ভারতে চীনা দ্রব্য বয়কট : বিষয়টা হাল্কা ভাবলেও, সমস্যাটা কঠিন এবং আমরা

রাজনীতি বোঝো, অর্থনীতি বোঝো! বনাম ভারতের যুবসমাজ

কবিতায় ‘আমি’

ভারতে শুধু অমর্ত্য সেন নয়, বাঙালি সংস্কৃতি আক্রান্ত

ধুতি হারালো তার কৌলীন্য

ভারতের CAA NRC নিয়ে দু’চার কথা

পৌষ পার্বণ নিয়ে

প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে

শ্রী শ্রী হক কথা

বর্তমান ভারত

ভারতের এবারের বাজেট আসলে অশ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধু কর্পোরেট কা

ইন্ডিয়া ইউনাইটেড বনাম সেলিব্রিটিদের শানে-নজুল

ডায়েরির ছেঁড়া পাতা

অহল্যার প্রতি

উদ্ভট মানুষের চিৎপাত চিন্তা

তাহারা অদ্ভুত লোক

পৌর্বাপর্য চিন্তা-ভাবনা

নিহিত কথামালা

অবিভাজ্য আগুন

পাথরের মতো মৌন জিজ্ঞাসা

ভাবনা যত আনমনে

বিবেক পোড়ে অশান্ত অনলে

কালাকালের ডায়েরি

উন্মাদের নীতিকথা

করোনা, ভারতীয় জনগণ ও তার সমস্যা

ধরি মাছ না ছুঁই পানি, ফেসবুক, কবিতা ও অন্যান্য

আমরা প্রত্যেকেই আজ ফ্যাসিস্ট এবং প.বঙ্গের বাঙালিরা

ফেসবুক, কবি, বুনো ফুল এবং আমিও পলিটিক্যাল

নিত্য নতুন বাঁশ, লিটল ম্যাগাজিন ও অন্যান্য

ঈশ্বর আল্লা তেরে নাম

আমাদের পৃথিবী, করোনা ভ্যাকসিন ও অন্যান্য

বয়স বাড়ে কখন, নোটবই ও অন্যান্য

শিব্রাম বলেছিলেন, কিছু বাস্তব সত্য

About The Author

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...