পাঁচটি কবিতা
শিশির আজম
শিশির আজমের পাঁচটি কবিতা
পল ব্রেইমারকে
পল ব্রেইমার, ইরাকের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মার্কিন বেসামরিক উপদেষ্টা, আপনি মিস্টার বুশের কাছে আরো সৈন্য চেয়ে পাঠান।
.
সন্ত্রাসীদের চোরাগোপ্তা হামলায় প্রতিদিন আপনার দশ-পনেরো জন সৈন্য মারা যাচ্ছে। অবশ্য আপনার সুপ্রশিক্ষিত সৈন্যরা এর উচিত জবাব দিতে মোটেও কার্পণ্য করছে না।
.
বাগদাদের ন্যাশনাল মিউজিয়াম লুট হয়ে গেল। আর এতে বেশি কিছু করার ছিল না, কেননা মার্কিন সৈন্যরা তখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চিনাবাদাম খাচ্ছিল।
.
মূল্যবান তেলক্ষেত্রগুলোর কোনো ক্ষতিই হয়নি। জ্বালানি তেলের ব্যাপারে আমেরিকার নিজস্ব দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা রয়েছে।
.
ইরাকে আপনার নিরাপত্তা দিন দিন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পাবলিক সেন্টারগুলোর দায়িত্বে নিয়োজিত সৈন্যরা আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এমনটা আশা করা যায়নি। গণতন্ত্র যে একটা প্রক্রিয়া, এটা বুঝতে ইরাকিদের সময় লাগবে।
.
যা হোক, এ-একটা মহৎ দায়িত্ব। এ থেকে আপনি সরে আসতে পারেন না। চিলিতে ভিয়েতনামে নিকারাগুয়ায় আফগানিস্তানে আমেরিকা তার দায়িত্ব পালন করেছে। আপনি আরো সৈন্য চেয়ে পাঠান, পর্যাপ্ত তহবিল ইরাক থেকে পেতে অসুবিধা নেই।
.
মনে রাখবেন, মহান আমেরিকা আপনাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে।
.
যখন আপনি স্বদেশে ফিরবেন, আপনার কোটের পকেটে যদি অন্তত পাঁচ লাখ ইরাকি শিশুর মাথা না পাওয়া যায়, খাঁটি আমেরিকান হিসেবে আপনি বিবেচিত হবেন না।
.
পাতিবুর্জোয়া কবি
খোদার দোহাই, পাতিবুর্জোয়াদের দলে আমি ভালো আছি
ধুমছে লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছি
টাকাপয়সা আসছে
বউটাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে আসছি মিয়ামি।
.
নিখুঁত বাংলা কবিতা যে বর্তমানে শুধু আমিই লিখছি
(আমিই লিখতে সক্ষম)
এতে কোনো সন্দেহ নেই
মাত্রাজ্ঞান এবং ছন্দের ওপর দখল
মার অসামান্য (প্রভাবশালী সমালোচকগণ বলেন)।
.
অবশ্য আমার সময় অঙ্কে বাঁধা
কাটছাট করেও সপ্তাহের প্রায় প্রতিটা দিনেই
কোনো-না-কোনো অনুষ্ঠানে (তা সে সংস্কৃতি হতে শুরু করে আন্তর্জাতিক মৎস্য সপ্তাহ বিষয়ক যা-ই হোক)
প্রধান অতিথির চেয়ারটা আমাকে সামলাতে হয়
আমি যেন এক ম্যাজিশিয়ান
আমার নির্জলা উপস্থিতিই অনুষ্ঠানটির
সুষ্ঠু সমাপ্তির জন্য যথেষ্ট
আর মিডিয়ার আনুকূল্যের ব্যাপারটা
না বললেও চলে।
.
খোদার দোহাই, পাতিবুর্জোয়াদের দলে আমি ভালো আছি।
দেরিদা বা সাঈদ নিয়ে আমরা তর্ক করি
উঠে আসে বাংলাদেশে মুঘল শাসনের বিচিত্র কীর্তি
কাগজে লিখি বাংলা কবিতায় উত্তরাধুনিকতা
আফ্রিকা যে সভ্য হয়ে উঠছে এতে বিস্ময়ের কিছু নেই
সূর্যাস্তে স্রোতের চিহ্ন ক্লিনটন তনয়া চেলছি
আর উইলিয়ামস বোনেরা সাদাদের মতোই টেনিস কোর্টে ঝড় তুলছে
আমি বলছি না যে কম্যুনিস্টরা খারাপ
তবে হাওয়াটাকে তো বুঝতে হবে
আর মানুষের ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়াকে
অবহেলা করলে চলবে কেন?
.
আমি যা লিখছি তা অবশ্যই দেশের জন্য
নিজের জন্যও
আধুনিক কবিতা
আধুনিক পৃথিবীর জন্য
প্রলেতারিয়েতের জন্যও।
.
মার্কস, আপনি তো সবই জানেন!
.
প্রগতিশীল লোক
বড় হয়ে তোমরা কী হতে চাও, এমন কথা
বাচ্চাদের আমি জিজ্ঞেস করিনে।
ব্যাপারটা হলো, কী হবো
এটা কোনো ব্যাপারই না।
আসল কথা হলো, প্রথম হতে হবে
প্রথম হতেই হবে।
.
এটা খুব বাজে ব্যাপার হবে যদি নিজের বউ অন্য কারো প্রেমে পড়ে যায়
আরো বাজে ব্যাপার হবে যদি ব্যাপারটা দশদিকে চাউর হয়ে যায়।
হাওয়াকে ধরে ফেলতে হবে
যেন সে যেদিকেই যাক তোমাকে সঙ্গে নেয়
এমন কথা যেন শুনতে না হয় যে তুমি পাছ পড়েছ।
.
গোসলের আগে সারা গায়ে তেল মেখে প্রতিদিন আধা ঘণ্টা রোদে বসতে হবে
নিয়মিত ঘুমাতে হবে
ক্ষুদে ক্ষুদে ইঁদুরগুলোকে আশকারা না দিয়ে
পটাপট মেরে ফেলা পরিবেশের জন্য উত্তম।
.
রবীন্দ্রনাথ মহৎ কবি। কিন্তু দেখাও তার এমন একটা কবিতা
যা আমার লেখা ‘মহাপৃথিবীর নাড়িভুড়ির তত্ত্বকথা’ কবিতার মতো এমন প্রাচ্যবাদী,
এমন স্বচ্ছ বক্তব্যসম্পন্ন।
.
আমি সেই অনাঘ্রাত কুমারীর স্তনে হাত দিয়েছি
তার পর তা পরিণত হয়েছে উজ্জ্বল আগ্নেয়গিরিতে।
অর্থাৎ এ-দাবি তো আমি করতে পারি
যে ঐ আগ্নেয়গিরির উদ্ভাবক হিসেবে আমার নামই যথার্থ।
.
মার্কসের পর ফিদেল সবচে বেশি আয়ু পেয়েছে,
কিন্তু আমি বলছি
আর মোটামুটি একশো বছরের মধ্যে ও মারা যাবে।
গত সপ্তাহের কলম্বোর সেমিনারেও আমার এ বক্তব্য
সমর্থিত হয়েছে।
.
আমিই প্রথম বলেছি :
মানুষের আগে পৃথিবীতে এসেছে ছারপোকা।
ছারপোকার চিরদিনের শত্রু পাখি
আর প্রতিদিন মানুষ অফিসে ঢোকে পচা টমেটো পকেটে নিয়ে।
.
মহৎ আদর্শসমূহে প্রস্রাব করতে পারাও এক আদর্শ।
মনে রেখ, এ-পতাকা একান্তই আমাদের নিজেদের।
দেখ, ছুঁয়ে দেখ, গন্ধ নাও—
এ তুমি কীভাবে অবিশ্বাস করবে?
.
ক্লাসে আমি কখনো দ্বিতীয় হইনি।
এ-বয়সে আমার যে কোনো তরুণ কলিগের চেয়ে
আমি বেশি হ্যান্ডসাম।
.
একটা ডাল
পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সূর্য ছিল খুব নিচুতে
অবশেষে নক্ষত্রের পুচ্ছে ঝুলে পড়বার মতো একটা ডাল
আর আমি আমার পা উপরে তুলতে ভয় পাচ্ছিলাম।
বাঁশঝাড়ের স্বভাবটা সবসময়ই অনমনীয়,
সমুদ্রের চেয়ে ছোট তার ডানা যখন রাস্তার ওপরই
শুয়ে পড়লো তখন সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা খর্ব না-হয়ে
উপায় ছিল না। ঘাসফড়িঙের
ডানার তলে আর লুকোছাপা নেই চাষিপরিবার, বিদ্যুতের তার
সরলমনা গ্রামগুলোর বুক ছিদ্র করে চলে গেছে।
তার জন্য সভ্যতার টানাহ্যাঁচড়া, রক্তচলাচল দু’মিনিট বন্ধ,
তৃতীয় মিনিটে ভূমধ্যসাগরের তল ঘেষে
সংকেত ছাড়াই বাঙালি ট্রেনের জয়যাত্রা। কেননা গার্মেন্টস শিল্পে
মেয়েরা একীভূত। আর ঝুলে পড়াই
যুক্তিযুক্ত মনে হলো যদি শকুনকুমারী তার পুচ্ছ থেকে নামিয়ে দেয়
একটা ডাল।
শিশির আজমের পাঁচটি কবিতা
একটি এ্যান্টি-গ্রিক ভাস্কর্যের ব্যাখ্যা
আলাদা আলাদা ক’রে
তোমার চুল
তোমার চোখ
তোমার ঠোঁট
তোমার স্তন
তোমার নাভি
তোমার ঊরু
প্রতিটি
………শিল্প
.
আর
যখন সম্পূর্ণ নগ্ন তুমি
তুমি কী
পিকাসো জানে না
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
সুনীল শর্মাচার্যের দশটি কবিতা
নাসিমা খাতুনের কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা