shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

সংস্কার নিয়ে

Retail talk all around
How many problems I am in
খুচরো কথা চারপাশে

সংস্কার নিয়ে

সুনীল শর্মাচার্য

সংস্কার নিয়ে

সংস্কার শব্দটি আজ আমাকে ধাক্কা দিলো। ভাবলাম : সংস্কার শব্দটির মধ্যে একটি আপেক্ষিকতার গন্ধ লেগে আছে। একটা ‘নেগেটিভ ইমেজ’ লুকিয়ে আছে।

তাই সংস্কার বলতেই আমাদের মনে একটা ‘কু’শব্দ চটপট জোড়া লেগে যায়। তবে এই কুসংস্কার বিষয়টি যুগ যুগ ধরে আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।

বিজ্ঞান যতই এগিয়ে যাক, চোরাস্রোতের মতো কুসংস্কার এখনো মানুষকে উল্টো পথে টানে। শুধু এদেশে নয়, বিদেশেও এই কুসংস্কার নিয়ে নানা প্রবাদ প্রচলিত।

‘আনলাকি থার্টিন’, ‘টু ফর জয়’, ‘টাচ উড’—ইত্যাদি বিদেশি শব্দগুলো তা ইঙ্গিত করে। আমাদের দেশে কিছু কিছু কুসংস্কার শাস্ত্রীয় পুঁথিপত্রের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

‘নক্তম দধি ন ভুঞ্জীত’, ‘প্রাতরি কৃপণস্য মুখম ন দর্শয়েৎ’—ইত্যাদি প্রবচনের মধ্যে কুসংস্কারের নমুনা মিলতে পারে। জ্যোতিষী খনা পরবর্তীকালে নানা সংস্কারকে শ্লোকবদ্ধ রূপ দিয়েছেন।

এই সংস্কারগুলির কতটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে—তা নিয়ে তর্কের অবকাশ থেকে যায়। তবু বিতর্ক এড়িয়ে গেলেও, সংস্কার মানুষকে বশীভূত করে ফেলেছে—তা স্বীকার করে নিতেই হয়।

কুসংস্কারকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ক্ষেত্রে এমন কিছু সংস্কার—যা ব্যক্তির ক্ষতি করে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে এমন কিছু সংস্কার—যার ভালো বা মন্দ কোনো প্রভাবই নেই। তৃতীয় ক্ষেত্রে এমন কিছু সংস্কার—যা একসময় প্রাসঙ্গিক ছিল, কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অর্থহীন হয়ে গেছে।

কিংবা সামাজিক রীতিনীতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অবলুপ্ত হতে চলেছে। প্রথম পঙক্তিভুক্ত কুসংস্কারগুলি সমাজের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই পর্যায়ের কুসংস্কার যুক্তিহীনতা কিংবা অশিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে।

যেমন—ডাইনি সন্দেহে কাউকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা। কিংবা কাউকে অলক্ষুণে কিংবা অপয়া বলে আঘাত করা। অনেক সময় অনেক শিক্ষিত ব্যক্তিও এ ধরনের সংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন।

দ্বিতীয় ধরনের সংস্কারগুলি নিজস্ব জীবনচর্যা এবং পারিবারিক নিয়মকানুনের মধ্যেই সম্পৃক্ত থাকে। এ রকম সংস্কার প্রায় প্রত্যেক মানুষেরই কিছু-না-কিছু থেকে যায়।

বিশেষত, যারা ‘লাক’-এর ওপর বেশি রকম মুখাপেক্ষী তাদের ক্ষেত্রে এই সংস্কারগুলি প্রযোজ্য। খেলোয়াড়, অভিনেতা, ব্যবসায়জীবী ইত্যাদি পেশার মানুষদের ক্ষেত্রে এই সংস্কার-নির্ভরতা খুবই প্রবল।

পথে বেড়াল ডিঙিয়ে গেলে যাত্রা অশুভ হওয়া, দরজার সামনে লঙ্কা, লেবু ঝুলিয়ে ভাগ্যের ওপর অন্যের নজর লাগা প্রতিহত করা ইত্যাদি এই গোত্রভুক্ত।

কখনো কখনো ধর্মীয় কিছু নির্দেশও এই পর্যায়ের সংস্কারকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন—সপ্তাহের কোনো নির্দিষ্ট দিনে নখ, চুল না কাটা, নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট কোনো ভোজনদ্রব্য গ্রহণ করা প্রভৃতি।

এই সংস্কারগুলির অনুবর্তী হয়ে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না-হলেও, অনেক ক্ষেত্রে এই ধরনের সংস্কার পারিবারিক সমস্যার সৃষ্টি করে।

বিশেষত, আজকের ব্যস্ততার যুগে অনেক ক্ষেত্রেই কুসংস্কার মনোমালিন্যের সৃষ্টি করে। বহু পরিবারেই এই ছোট ছোট কুসংস্কার পালনের বাধ্যবাধকতা সংসার ভাঙনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তৃতীয় ধরনের সংস্কারগুলি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে। অন্তত খানিকটা শিথিল হয়েছে। যেমন—একসময় সূর্য কিংবা চন্দ্রগ্রহণের দিনে সমস্ত রান্না করা খাদ্যদ্রব্য গ্রহণকালের পরে ফেলে দেওয়ার রেওয়াজ ছিল বহু বাড়িতে।

এখন বিজ্ঞানের জনপ্রিয়তা এবং জনশিক্ষা বাড়ার সঙ্গে এই ধরনের নিয়ম-কানুন বদলে গেছে। তা ছাড়া সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বৈধব্য পালন, অস্পৃশ্যতার মতো বেশ কিছু কুসংস্কার অনেকটা লঘু হতে শুরু করেছে।

যুক্তিবাদীরা বলে থাকেন, ধর্ম এবং সংস্কারের মধ্যে বিভেদের খুঁটি অত্যন্ত সুক্ষ্ম। প্রায়ই এগুলি একে-অন্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু ধর্মের ব্যাপ্তি কখনোই কুসংস্কারের দ্বারা খণ্ডিত হতে পারে না।

অন্যদিকে, বিজ্ঞানমনস্কতা দিয়ে অনেক সময়ই কুসংস্কারের অযৌক্তিকতাকে প্রমাণ করা হয়। এ জন্য বহু সংস্থা তৈরি হয়েছে। তবুও বিজ্ঞানের অগ্রগতির জোয়ারের মধ্যে এখনো ভাটার টানের মতো রয়ে গেছে কুসংস্কারের প্রতি আকর্ষণ।

যেদিন মানুষ এই ভাটার টানকে অস্বীকার করতে পারবে—সেদিনই বোধহয় বিজ্ঞান-সাধনা সার্থক হয়ে উঠবে।

…………………

পড়ুন

কবিতা

সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা

সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ

লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য

গল্প

উকিল ডাকাত : সুনীল শর্মাচার্য

প্রবন্ধ

কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য

ধর্ম নিয়ে : সুনীল শর্মাচার্য

মুক্তগদ্য

খুচরো কথা চারপাশে : কত রকম সমস্যার মধ্যে থাকি : সুনীল শর্মাচার্য

খুচরো কথা চারপাশে : শক্তি পূজোর চিরাচরিত : সুনীল শর্মাচার্য

খুচরো কথা চারপাশে : ভূতের গল্প : সুনীল শর্মাচার্য

খুচরো কথা চারপাশে : বেগুনে আগুন: সুনীল শর্মাচার্য

খুচরো কথা চারপাশে : পরকীয়া প্রেমের রোমান্স : সুনীল শর্মাচার্য

খুচরো কথা চারপাশে : মুসলমান বাঙালির নামকরণ নিয়ে : সুনীল শর্মাচার্য

খুচরো কথা চারপাশে : এখন লিটল ম্যাগাজিন : সুনীল শর্মাচার্য

খুচরো কথা চারপাশে : যদিও সংকট এখন : সুনীল শর্মাচার্য

খুচরো কথা চারপাশে : খাবারে রঙ : সুনীল শর্মাচার্য

খুচরো কথা চারপাশে : সংস্কার নিয়ে : সুনীল শর্মাচার্য

About The Author

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...