সনেট পঞ্চ
সুনীল শর্মাচার্য
সনেট পঞ্চ
ভালোবাসা
‘Between what is said and not meant,
And what is meant and not said,
……… ……… most of love is lost.’
……… ……… —Kahill Gibran
.
যৌবনে আবীররাঙা যুবক-যুবতী
মেঘের স্বভাব পায়, চোখ হয় মন,
পরস্পর নিবেদনে তারা প্রেমব্রতী
ট্রেনে-বাসে, পথ-ঘাট ভাবে বৃন্দাবন!
.
কাছে আসে, ঠোঁট কাঁপে ,হাতে রাখে হাত
বুকে ধরে উত্তেজনা—ক্ষণিক বিদ্যুৎ,
ভুলে যায় লজ্জা ভয়—ভোলে দিন-রাত
কোমল হৃদয়ে তারা যেন দেবদূত!
.
নিন্দার পরোয়া নেই, জাত আর জাতি
পীরিতি ভীষণ আঠা, ভাবে ভরা প্রাণ,
তার কাছে সব মিছে, সব আতিপাতি—
দুজনে দুজনে গড়ে দান প্রতিদান!
.
ভালোবাসা ভালোবাসা খুঁজে দিশেহারা
যুবক-যুবতী যত ভোগে প্রেম হারা!
.
বকুল
বকুল ফুটলো রাতে আনন্দে আকুল
শিশির পরশে তার ছড়ায় সৌরভ,
বাতাস কাঁপায় ওই পাঁপড়ি ব্যাকুল
প্রকৃতি দিয়েছে তাকে মুহূর্ত গৌরব!
.
রাত বাড়ে জেগে থাকে তখন বকুল
কত আশা, কত কথা গাছের পাতায়—
লিখে রাখে কেঁপে কেঁপে মনের খাতায়
তারপর ভোর হলে ঝরে বিলকুল:
.
মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যেন শাদা হাড়
কত কথা শেষ হয়, হঠাৎ হারায়—
ঝরে যায় সবকিছু, সব ব্যথা ভার
প্রকৃতি নিয়মে বাঁধা সময়-পাড়ায়!
.
বকুলের মতো ফুটি আমরা জীবিত
সময়ের চক্রে ঘুরি আঘাতে পীড়িত!
.
তার কথা ভাবো মন
পারোনি ডাকতে তাকে, কখনো পারোনি
গোপন ইশারা কাঁপে চোখের দৃষ্টিতে,
কল্পনায় মেলেছো পাখা নানান সৃষ্টিতে,
অপেক্ষায় বাজি ধরে হৃদয় বোঝনি!
.
নির্জনে হয়েছ একা, থেকেছ তো চুপ
চারদিকে দেখ শুধু তার ছবি ছায়া,
চমকে দমকে ওঠে তার মুখ ছায়া,
তাকে ভেবে বুকে ধরো বেদনার স্তূপ!
.
তারপর বিস্ফোরণ, তারপর একা
প্রতিটি মুহূর্তজুড়ে খেলেছ কি খেলা!
তাকে জানতে চিনতে হারায় যে বেলা,
হৃদয়ে হৃদয় খুঁড়ে নিজেকেই দেখা!
.
চারদিকে শব্দ শোনো বাতাসে বাতাসে
তার কথা ভাবো মনে তাকিয়ে আকাশে!
.
দিঠি
তুমি ঠিক কত দূরে বুঝতে পারি না!
তাই লিখি চিরকুট পাখিদের ডাকে—
জাঁকিয়ে বসেছে কথা কাছে চায় কাকে?
উড়ো মন উড়ে চলে কিছুতে থামে না!
.
আকাশে-বাতাসে ঢেউ মনে দেয় দোলা
ভালো আছি, ভালো নেই, বুকে যন্ত্রণা,
অহরহ কুরে খায় নানা মন্ত্রণা—
তবু হাঁটি পথ রোজ খুশি দিল খোলা!
.
ভৌতিক চাঁদের আলো রাত হলে দেখি—
আমার ঘরের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে,
টেলিফোনে কথা বলি হাত-পা বিছিয়ে—
তোমার মুখের ছবি ছায়া ধরে সে কি?
.
জানি না বুঝি না ঠিক তাই লিখি চিঠি
এখানে ওখানে যাই মেলে রাখি দিঠি!
.
বাঙালি
বাঙালি শাসিত হতে খুব ভালোবাসে
ইতিহাস ঘেঁটে দেখে এই কথা মানি,
বল্লাল সেনের কথা সকলেই জানি,
বাঙালি ভুলেছে সব লতা-পাতা-ঘাসে!
.
বল্লাল বাঙালি নয়, সেও পরদেশী
কর্ণাটক থেকে এসে দণ্ডমুণ্ড-কর্তা,
গোপাল, শশাঙ্ক নামে নেই বঙ্গ সত্তা,
বিহারী বঙ্গ-সিরাজ ছিল ছদ্মবেশী!
.
অপমান সয়ে সয়ে আমাদের মতি—
সরল গরল ভরা জল-ডোবা-ডাঙ্গা,
পরাধীন থেকে থেকে শিরদাঁড়া ভাঙা,
বাঙালি ঐতিহ্য হারা থেমে গেছে গতি!
.
চিরকাল বর্গী এসে লুটেপুটে খায়,
বাঙালি স্বভাব দেখি পর গুণ গায়!
…………………
পড়ুন
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য
প্রয়াণগাথা : সুনীল শর্মাচার্য
4 thoughts on “সনেট পঞ্চ”