গুচ্ছ কবিতা
সুদীপ্ত বিশ্বাস
সুদীপ্ত বিশ্বাসের গুচ্ছ কবিতা
বাঁচার মজা
আমি তো বেশ ভালোই বেঁচে আছি
তোমায় ছেড়ে দিব্যি একা একা
অনেকটা রাত চাঁদের সঙ্গে জাগি
সকালে পাই টুনটুনিটার দেখা।
.
ল্যাপটপ বা স্ক্রিনটাচ মোবাইলে
ফেসবুকে রোজ নতুন কিছু লাইক
দেশটাও বেশ গড়গড়িয়ে চলে
ইনফ্লেশান, দ্রব্যমূল্য হাইক!
.
সবকিছু বেশ সয়ে গেছে আজকাল
ভালোবাসাও পদ্মপাতার জল
একজীবনে ও মেয়ে তুই এসে
কতটা আর দুঃখ দিবি বল?
.
মনখারাপের মেঘেরা ভেসে গেছে
অনেক দূরে, দূর পাহাড়ের গায়ে
নদীর তীরে একলা হাঁটি আমি
ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ-এর রাশি পায়ে।
.
মরুভূমির উট হারিয়ে গেলে
হেঁটেই চলে একলা বেদুইন
মরীচিকার মিথ্যে জলের খোঁজে
ঘুরে বেড়ায় প্যারিস, জাপান, চীন।
.
আমিও যাই ছোট্ট নদীর তীরে
রোজই করি টুনটুনিটার খোঁজ
বাতাস মেখে তাধিন তাধিন বাঁচি
বাঁচার মজায় বেঁচেই থাকি রোজ…
.
মোম গলছে
সেদিন যখন আলতো করে আমার ডানায়
আদর মাখা অভিমানের স্পর্শ দিলে
সেই দুপুরে জীবন তখন শীতলপাটি
ফুরফুরিয়ে চলল উড়ে আকাশ পথে।
ভারচুয়ালি ফেসবুকে না, ঠোঁটের পাশে
উষ্ণ তোমার স্পর্শ পেয়ে পাগল পাগল
নাছোড়বান্দা তোমাকে আর কীই বা বলি?
হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি সব লুটে নাও, সব লুটে নাও।
ধকধকিয়ে উঠল জ্বলে বহ্নি শিখা
মোম গলছে, মোম গলছে শরীরজুড়ে!
.
রাত
জেগে বসে আছি রাত দুপুরে একলা। গোটা পৃথিবীটা ঘুমে
আকাশে জ্বলছে অনেক তারার মেলা, কেউ কেউ চ্যাট রুমে
সম্পর্ক তৈরিতে এখনো ভীষণ ব্যস্ত। ওড়ে রাত চড়া পাখি
শাল পিয়ালের ঘুম ঘুম ভেজা ডালে। কবিতায় লিখে রাখি
ছলাৎ ছলাৎ শব্দে নদীটা এগোয়, সাগরের অভিসারে
পাহাড় চূড়াটা একা একা জেগে থাকে এ রাতের অন্ধকারে
লাজুক চাঁদটা গাঁয়ের বধূর মত ঘোমটায় মুখ ঢাকে
দু-একটা পাতা খসে যায় চুপিসারে, কেই-বা হিসাব রাখে?
বনের গভীরে নিশাচর ছুটে যায়, রাতের শিশির ঝরে
খুব মমতায় পৃথিবীর সারা গায়ে। মনে পড়ে মনে পড়ে
হারানো সেসব বাঁধাবাঁধি করে বাঁচা, সুরে সুরে বাঁধা তার
গভীর গভীর অজানা অলীক দেশে প্রেম ভরা অভিসার…
.
বিরহ
সেটা স্পষ্ট ভাবে খোদাই হয়ে আছে
সেটা মরতে গিয়ে আবার বেঁচে ওঠে
তাকে মারব বলে মিথ্যে ছোটাছুটি
সেটা রোজ সকালে পদ্ম হয়ে ফোটে।
সেটা হারিয়ে গেলে দারুণ ভালো হতো
সেটা অনেক বেশি কষ্ট বয়ে আনে
সেটা দিনের শেষে নিদ্রা কেড়ে নেয়
সেটা কাঁটার মতো বিঁধেই থাকে প্রাণে ।
তাকে এড়িয়ে যেতে দু’হাতে চোখ ঢাকি
তাকে ভুলব বলে মিথ্যে ছুটে মরি
তার মায়ার জালে বদ্ধ আমি আজও
তার গভীর জলে ডোবে আমার তরি ।
তার শীতল বিষে জ্বলছে গোটা দেহ
তাকে ভুলব বলে তিলক মাটি আঁকি
তার আবছা মুখে কাপড় ঢেকে দিলে
তার স্মৃতির কথা বলে ভোরের পাখি।
.
পাতকী
এসেছে প্রেমিক যুবা প্রেম ভেঙে গেলে,
পাষণ্ড পুলিশ থেকে ডাকাতের দল—
সব্বাই এসেছে, আর ঢেলে গেছে বিষ।
ধোয়া তুলসী পাতা যে, সেও তো এসেছে!
এঁটো পাতে চেটেপুটে খেয়ে চলে গেছে।
এসেছে উকিল বাবু, এসেছে সন্ন্যাসী;
মুখ পাল্টাতে এসেছে গৃহস্থ মানুষ।
এসছে জুতো বিক্রেতা, জুতো কেনে যারা,
তারাও এসেছে সব গাঁ উজাড় করে।
কী নেবে গো দেহ থেকে? দেহে কীই-বা আছে?
নর দেহে যত পাপ সব মুছে নিয়ে
রক্ত-মাংস-বিষ মেখে অন্তরে অন্তরে
ধর্ষিত হয়েছি রাতে অযুত বছর।
সমস্ত শরীর দিয়ে বিষ শুষে নিয়ে
অপবিত্র তবু আমি কুলটা, পাতকী!
.
মৃত্যু
বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কনডেনসারের মতো
পার্থিব জীবনে মৃত্যুও এক খুব প্রয়োজনীয় ক্ষতি।
নতুন মুখের শিশু, টাটকা গোলাপ
কিছুই থাকত না, মৃত্যু না-থাকলে।
মৃত্যু না-থাকলে আজ পৃথিবীটা ভরে যেত
বৃদ্ধ-বৃদ্ধায় আর বৃদ্ধাশ্রমে।
.
দুঃখ
ওগো দুঃখ, তোমার জন্য দুঃখ হচ্ছে খুব,
তুমিই ছিলে বন্ধু সখা, শত্রু ছিল সুখ।
মরলে আমি তখন তুমি কোথায় যাবে বলো?
দুঃখ, তোমার দুঃখে আমার দু’চোখ ছলোছলো।
3 thoughts on “সুদীপ্ত বিশ্বাসের গুচ্ছ কবিতা”