shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা

A bunch of poems by Sunil Sharmacharya

A bunch of poems by Sunil Sharmacharya

A bunch of poems by Sunil Sharmacharya

সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা

.

ছয়টি ঋতু একদা

.

ছয়টি ঋতু একদা বানিয়েছে প্রকৃতি কেবল

                      আমাদের খুশি করার জন্য

ঋতু চুপে শুয়ে আছে আমাদের সত্তার মধ্যে…

অবশ্য এখন কিছু ঋতু নিজে

                         আমাদের পাহারা দেয়

                      তাতে আমরা বর্তমানে ভালো আছি—

কেননা ঋতুদোষ হলে আমাদের স্বভাবপাখি

পাখির স্বভাব পেলে আমরা আরো, আরো

উড়নচণ্ডী হয়ে ঘর ছাড়া হয়ে যাবো!

সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা

এই সোজা সত্য

পূর্ণিমার দিন চাঁদ যে সময়ে ওঠে

অমাবস্যায় চাঁদ ওঠে ঠিক সে-সময়

অর্থাৎ প্রতি মিনিটেই চাঁদ ওঠে আর

চাঁদ ডোবে; দিনে চাঁদ থাকে আমাদের

চোখের আড়ালে; রাতে চাঁদ থাকে

আমাদের চোখের ভেতরে; এইভাবে

প্রতি মিনিটে মিনিটে চাঁদ ওঠে, চাঁদ ডোবে

আমাদের চোখের আড়ালে; অর্থাৎ

অনেক কিছুই ওঠে পূর্ণিমার পরে

কিংবা আগে; তার মানে অমাবস্যাও

হয় দিনেরাতে; আমাদের অগোচরে

এই সোজা সত্য কথা মনে রাখি জীবনে!

সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা

তারা হবো

পৃথিবীজুড়ে হাজার হাজার কুঠি আছে

হাজার হাজার দালান আছে, এই

দালান একটা আমারো আছে।

এবং চাঁদের দেশেও হাজার কুঠি আছে,

এই কুঠি দালান হয়ে চাঁদের গ্রামে উজ্জ্বল।

এই দালানের কথা ভাবতেই বুঝি

অনেক আগেই খুব গোপনে গোপনে

দালানের  রহস্য সবাই জেনে গেছে

জেনে গেছে চাঁদের দেশের দালান

কী ক’রে পৃথিবীতে এলো—

তার রহস্য উদ্ঘাটনে আমি তারা হবো।

সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা

পাথরে পাথরে ঘষে

পাথরে পাথর ঘষে প্রথমেই দু’রকম শব্দ

শুনেছি। একটা শব্দ তো আরেকটা শব্দে

তরঙ্গ তুলেছে; শব্দ দুটোই কানে বেজেছে,

বেজেছে আমার বুকের মধ্যে। আমি যেসব

শব্দ শুনেছি, সেইসব সত্য কথা। পাথরে

পাথর ঘর্ষণ করে তুমি নিজেও পরীক্ষা ক’রে

দেখতে পারো সব কথা সত্য কিনা। যেমন

মানুষ মানুষকে দেবদেবী বানাতে পারে; এমন

কি শব্দগুলো নিজেরাই প্রাণ সৃষ্টি

করতে পারে। শব্দই তো সৃষ্টি করেছে

সেই অনির্বাণ ধ্বনিব্রহ্মকে আর প্রাণবীজকে।

সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা

কেউ আবার

ফুল ঝরে গেলে ফল হয়

কোনো গাছে ফুল হয়, আবার কোনো গাছে

শুধু ফল; ফল কি কখনো ফুল হয়?

অথবা গাছ? গাছ জানে না অথবা জানে

আকাশের তারা মিলে নক্ষত্রপুঞ্জ

রাতে বাগানে বাগানে নানা ফুল ফোটে

কিন্তু প্রজাপতি ভোমরের কোনো আকর্ষণ নেই

কী উপায়ে পৃথিবীতে এমন সব কাণ্ড ঘটে?

নানান প্রাণী গতি-প্রকৃতি, নানান চিত্র

ভাবতে ভাবতে কেউ কেউ জীবনপাত করে

কেউ আবার জানবার প্রয়োজন নেই ভেবে

সারাজীবন নির্লিপ্ত ঘর-বার করে…

সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা

অগ্নিদেবকে জড়িয়ে

নিজেকে পোড়াবে ভেবে প্রজ্জ্বলন্ত করেছ আগুন

আগুনে পুড়লে নাকি সব খাঁটি হয়—ভেবে তুমি বলছো, ‘অগ্নিদেব, সারাটা জীবনে আমি যদি

কোনোরূপ অন্যায় বা মিথ্যাচার একটিও করে থাকি

তবে আমাকে পোড়াও, আমি পুড়ে গিয়ে শুদ্ধ হতে

রাজি’—

অগ্নিদেবকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাও, শরীর দিয়ে ঘষে দিতে থাকো

তবুও তোমাকে কিন্তু অগ্নিদেব পোড়ায় না—

কিছুক্ষণ পরে নিভে যায়!

সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা

এতদিনে

এতদিনে ঘষে মেজে বুঝলাম : দেহের আগুনে ও রূপের আগুনে

প্রচুর পার্থক্য আছে। এখন জানি, দেহের আগুন জ্বালাতে

মনে শপথ লাগে; তাতে তেল লাগে না! দেহের

বহ্নি থেকে ঝরে পড়ে ব্যক্তিত্ব; ব্যক্তিত্ব থেকে আগুন

সরাবো না।

রক্ত থাকলে অগ্নি নিভে যাবে। জানি, সূর্যের কোনো দেহ নেই—

দেহ ছাড়াই সূর্য জ্বলছে। তাই সূর্যকে আগুন বলার অর্থ নেই—

তবে তার রূপে অন্যকিছু আছে। রূপের আগুনের মতো সূর্য দীপ্ত—

খালি চোখে তার দিকে তাকাতে পারি না!

সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা

ঘূর্ণির কাছে

নিজেকে সম্পূর্ণ আবিষ্কার করলে কী কী ঘটে

সেটা সবাই জানে।

যেমন তারাদের মৃত্যু হলে সাগরে সাগরে তুফান ওঠে…

জাগতিক টানে কত কত পরিবর্তন। তখন আশ্চর্য

লাগে।…

আকাশে তাকাই। যা দেখি তা ভুল দেখি। চোখের দেখা

কত ভুল দেখায়। যা সত্য ভাবি তাও মিথ্যে হয়।…

এই লোকাচার। এই যাপন-জীবন। সেও এক ছকে বাঁধা—

ছক ভাঙতে চাই। পারি না। তবুও প্রচেষ্টা অপার…

একটা ঘূর্ণির টানে জগৎ চলে। আমিও ঘুরিফিরি—

ঘূর্ণি থেকে বেরুতে চাই। পারি না! যা আমি করতে চাই।

তাও পারি না! সেও এক টান। সর্বদা আকর্ষণে আমার কাছে ধরেছে তোমায়!

তুমি কিংবা আমি আমৃত্যু ঘুরি। শুধু ঘুরি। ঘুরে ঘুরে যাই

ঘূর্ণির কাছে। ঘূর্ণি আমাকে গ্রহণ ক’রে অচিন্ত্যে নিয়ে যায়।

ফিরি না! তখন ফিরি না। চোখে উধাও…

সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা

চালচিত্র

খড়বোঝাই নৌকো

খালের জলে ভাসে

ফুলে ছাওয়া কদমগাছ

ঝুঁকে পড়েছে তার দিকে

নৌকোজুড়ে কদমগাছের ছায়া

খালের জলেও ছায়া তার

অনেক দূর ছড়িয়ে পড়েছে।

.

দুই

ধান কেটে নেয়া বিস্তৃত মাঠ

ডুবে আছে জ্যোৎস্নায়,

শিশিরের হিমে।

রাতের পাখিরা ডাকে

দূর কোন গাছে।

কোথাও কেউ নেই!

না, আছে; ওই তো

হাট-ফেরত একটা লোক

আল পথে আসছে।

.

তিন

মাঠের একপাশে

ছাতার মতো দাঁড়িয়ে

মস্ত সরাগাছ

ওপরে নীল রঙের আকাশ

দু’এক কুচি সাদা মেঘ

খুব ছোট কয়েকটা প্রজাপতি উড়ছে

বিকেলের নরম আলোয়

বাড়ি ফিরছে কাকের দল

অনেক দূরে

ওই যাচ্ছে ট্রেন!

……………………………………………………………………………………………

পড়ুন সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...