shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

৭০০ কোটি বছর আগের ব্ল্যাক হোলের সন্ধান

black hole

black hole 700 million years ago

black hole

৭০০ কোটি বছর আগের ব্ল্যাক হোলের সন্ধান লাভ! শুনলেই চমকে ওঠার মতো বিষয়। আর বিজ্ঞানপ্রিয় ছাত্র-ছাত্রী, এমনকি বড়দের কাছেও আরো বিস্ময় এবং আনন্দের। হ্যাঁ, প্রাচীনতম এক কৃষ্ণগহ্বরের (ব্ল্যাক হোল) সন্ধান পেয়েছেন ‘ইউরোপিয়ান গ্র্যাভিটেশনাল অবজারভেটরি’র জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। এর নামকরণ করা হয়েছে ‘জিডব্লিউ১৯০৫২১’।

দেড় হাজার বিজ্ঞানী যুক্ত ছিলেন এই গবেষণায়। তাদের গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক স্ট্যাভরোস কাৎসানেভাস বলেন, ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর কীভাবে তৈরি হয়, সে রহস্য সমাধানে হয়তো মুখ্য ভূমিকা নেবে এই আবিষ্কার।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ৭০০ কোটি বছর আগে যখন এই কৃষ্ণগহ্বরটির জন্ম হয়েছিল, তখন ব্যাপক মহাকর্ষীয় তরঙ্গ তৈরি হয়েছিল। দুটি কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষে ওই তরঙ্গের সৃষ্টি হয়েছিল। কৃষ্ণগহ্বর দুটি জুড়ে গিয়ে ‘জিডব্লিউ১৯০৫২১’র জন্ম হয়।

গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আরেক বিজ্ঞানী মাইকেলা বলেন, বিগ ব্যাংয়ের পরে এত শক্তিশালী মহাজাগতিক বিস্ফোরণের ঘটনা জানা নেই।

তবে কৃষ্ণগহ্বরটির আসল বিশেষত্ব হলো—এর বিশালাকার। বলা ভালো, এমন বিশালাকৃতি কৃষ্ণগহ্বরের খোঁজ মিলল এই প্রথম।

বৈজ্ঞানিক ভাষায় যাকে বলে ‘ইন্টারমিডিয়েট মাস ব্ল্যাক হোল’। সূর্যের থেকে ১০০-১০,০০০ গুণ বড় ভরের কৃষ্ণগহ্বরগুলোকে এই নামে ডাকা হয়। সূর্যের ৩-১০ গুণ বড় কৃষ্ণগহ্বরগুলোকে বলা হয় ‘স্টেলার ব্ল্যাক হোল’। নতুন আবিষ্কৃত ‘জিডব্লিউ১৯০৫২১’র ভর সূর্যের প্রায় ১৪২ গুণ।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মিল্কি ওয়ে-সহ বহু ছায়াপথের মধ্যিখানে অবস্থিত এই ‘সুপারম্যাসিভ’ কৃষ্ণগহ্বরটি।

ব্ল্যাক হোল দেখতে কেমন?

গত বছরের (২০১৯) ১০ এপ্রিল পূর্বঘোষণা অনুযায়ী কৃষ্ণগহ্বরের (ব্ল্যাক হোল) ছবি প্রকাশ করা হয়। এতে করে প্রথমবারের মতো কৃষ্ণগহ্বর দেখতে কেমন, তা জানতে পারে বিশ্ববাসী। কৃষ্ণগহ্বরের ছবি ধারণ করার জন্য বিশেষভাবে নির্মিত ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপের (ইএইচটি) ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে কৃষ্ণগহ্বরের ছবি প্রকাশ করে বিজ্ঞানীরা।

অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে এদিন এই কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে বিজ্ঞানীরা। কৃষ্ণগহ্বরটির আকার প্রায় ৪০ বিলিয়ন কিলোমিটার। সহজ করে বললে, এটি পৃথিবীর প্রায় ৩০ লাখ গুণ বড়! আকারে এটি এতটাই বিশাল যে—বিজ্ঞানীরা একে ‘দৈত্যাকৃতি’র বলে উল্লেখ করেছেন।

কৃষ্ণগহ্বরটি পৃথিবী থেকে ৫০০ মিলিয়ন ট্রিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। পৃথিবীজুড়ে স্থাপন করা আটটি টেলিস্কোপের মাধ্যমে এই কৃষ্ণগহ্বরের ছবি ধারণ করে বিজ্ঞানীরা।

ব্ল্যাক হোল কী?
  • ব্ল্যাক হোল বা ‘কৃষ্ণগহ্বর’ এমন একটি জায়গা, যেখানে কোনো কিছু প্রবেশ করলে আর ফিরে আসে না। এমনকি আলোও এই গহ্বরকে অতিক্রম করতে পারে না।
  • নাম গহ্বর হলেও, এর মধ্যে পুরোটা ফাঁকা জায়গা নয়। বরং এর মধ্যে খুব অল্প জায়গায় এত ভারী সব বস্তু আছে যে—এসবের কারণে তীব্র মহাকর্ষীয় শক্তি উৎপন্ন হয়।
  • ব্ল্যাক হোলের পেছনে ‘ইভেন্ট হরাইজন’ নামের একটি স্থান আছে, যাকে বলা হয় ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’। এই জায়গায় মহাকর্ষীয় শক্তি এতটাই তীব্র যে এখান থেকে কোনো কিছুই আর ফেরত আসতে পারে না।

প্রথম এই গবেষণার প্রস্তাব তোলা অধ্যাপক হেইনো ফালকে সংবাদমাধ্যমকে জানান, এম৮৭ নামের একটি বহুদূরবর্তী গ্যালাক্সি বা ছায়াপথে এই বিশাল কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। গহ্বরটির আকৃতি সম্পর্কে বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেছেন, আমরা যা দেখতে পেয়েছি, তার ভিত্তিতে বলতে হয়, আকৃতিতে কৃষ্ণগহ্বরটি আমাদের সমগ্র সৌরজগতের চেয়েও বড়। এর ভর সূর্যের ভরের চেয়ে ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন গুণ বেশি।

আমাদের ধারণা, যতগুলো কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব রয়েছে, সব কটির মধ্যে এটি ভরের দিক থেকে অন্যতম। এটি স্রেফ দৈত্যাকৃতির একটি কৃষ্ণগহ্বর।

প্রথম ছবিতে দেখা যায়, একটি বৃত্তাকার কালো আভার চারদিকে এক উজ্জ্বল আগুনের বলয় বা ‘আগুনের চক্র’ নির্গত হচ্ছে। আগের উল্লেখানুযায়ী, এ্যান্টার্কটিকা, স্পেন ও চিলির মতো পৃথিবীর নানা প্রান্তে বসানো আটটি রেডিও টেলিস্কোপের এক নেটওয়ার্ক দিয়ে এই ছবি তোলা সম্ভব হয়। যদিও এর আগে কোনো ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলা যায়নি। কারণ একক কোনো টেলিস্কোপের এর ছবি তোলার ক্ষমতা নেই।

ছবিতে দেখা : কৃষ্ণগহ্বর থেকে ‘আগুনের চক্র’ নির্গত হচ্ছে। এ ব্যাপারে অধ্যাপক ফালকে বলেন, একটি সম্পূর্ণ গোলাকৃতি ও অন্ধকার গহ্বরকে ঘিরে রয়েছে এই আগুনের চক্র। গহ্বরের ভেতরে আটকে পড়া উচ্চ তাপমাত্রার গ্যাসের কারণে এই আগুনের উৎপত্তি বলে জানান ফালকে।

তিনি বলেন, চক্রাকার এই আগুনের কারণে উৎপন্ন হচ্ছে তীব্র এক আলোকরশ্মি। এই আলোর তীব্রতা এতটাই বেশি যে—ওই ছায়াপথে অবস্থিত শত শত কোটি তারার মোট ঔজ্জ্বল্যের চেয়েও উজ্জ্বল এই গহ্বর! এ কারণেই এত দূরে থাকা পৃথিবী থেকেও কৃষ্ণগহ্বরটিকে দেখা গেছে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, এত দিন বিজ্ঞানীরা কৃষ্ণগহ্বরের আকৃতি সম্পর্কে যে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা ও অনুমান করেছিলেন, বাস্তবের কৃষ্ণগহ্বরের সঙ্গে তার অধিকাংশই মিলে গেছে।

গবেষক দলের সদস্য ড. যিরি ইউনুসি তো এমনটাও বলছেন যে কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে বহু বছর আগে আইনস্টাইন যে ধারণা রেখে গিয়েছিলেন, সেটিই সত্যি প্রমাণিত হতে চলেছে।

তিনি জানান, কৃষ্ণগহ্বরের উপস্থিতি সময়, মহাকাশ, এমনকি আমাদের অস্তিত্বের বিষয়গুলোকে অনেক জটিল প্রশ্নের সামনে ফেলে দিচ্ছে। এটা আশ্চর্যজনক যে আমরা যে ছবি পেয়েছি, সেটি আমাদের তাত্ত্বিক গবেষণার সঙ্গে অনেকটাই মিলে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, আইনস্টাইন আরো একবার সঠিক মাপকাঠিতে উপরে তুলে ধরলেন নিজেকে।

আর, সে-সময় মহাকাশবিজ্ঞানীরা মত প্রকাশ করেন, ‘ব্ল্যাক হোল’ সম্পর্কে মানুষের বোধ বাড়াতে এসব ছবি বিশেষ সাহায্য করবে।

—ডেস্ক শুভ বিজ্ঞান। সূত্র : বিবিসি, বাংলা

About The Author

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...