shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস

Six point day
Six point day

বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস আজ ৭ জুন সোমবার। স্বাধীনতার পথে বাঙালির হাজার বছরের সংগ্রামী ইতিহাসের মাইলফলক এই ৬ দফা। এই দিনটি বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনকে স্পষ্টত নতুন পর্যায়ে উন্নীত করে।

১৯৬৬ সালের ৭ জুন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬-দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়। এই দিনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গি, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআর’র গুলিতে মনু মিয়া, শফিক ও শামসুল হকসহ ১০ জন শহীদ হন। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আপোসহীন সংগ্রামের ধারায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের দিকে এগিয়ে যায় পরাধীন বাঙালি জাতি।

এ ছয় দফার মধ্য দিয়েই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ছয় দফা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১১ দফা আন্দোলন, ’৬৯-র গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-র নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সর্বশেষ বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়।

তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও বৈষম্য নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে ঐতিহাসিক ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করেন। ছয় দফার সমর্থনে ১৩ মে আওয়ামী লীগ আয়োজিত পল্টনের জনসভায় ৭ জুন হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এদিন হরতাল চলাকালে পুলিশ ও ইপিআর নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালায়। এতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অনেকে শহীদ হন। গ্রেপ্তার হন হাজার হাজার মানুষ। সন্ধ্যায় কারফিউ জারি করা হয়। প্রতি বছরের মতো এবারো বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস পালন করছে বাঙালি জাতি। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফায় ছিল প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্রনীতি ছাড়া তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য অর্থনীতিসহ প্রায় সব বিষয়েই পৃথক ব্যবস্থার প্রস্তাব। সে কারণে অনেকেই একে স্বাধীনতার পথে বাঙালির প্রথম আনুষ্ঠানিক সনদ বলে মনে করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ৬ দফা অন্যতম মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব পেশের মাধ্যমে যেমন পাক-ভারত উপমহাদেশের জনগণ ব্রিটিশ শোষকদের এদেশ থেকে তাড়ানোর জন্য ঐক্যমত হয়েছিল, ঠিক তেমনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৬৬ সালের এইদিনে ঘোষিত ৬ দফাকে তৎকালীন পূর্ববাংলার জনগণ পশ্চিমাদের এদেশ থেকে তাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছিল।

এ ছাড়া ৬ দফা আন্দোলন আমাদেরকে বিদ্যমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে উদ্বুদ্ধ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অনুপ্রেরণা জোগায়। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের এক অবিস্মরণীয় দিন আজ।

আরো উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্ত্বশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। ওই বছরের ১ মার্চ ঢাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে বাঙালির মুক্তি ও স্বাধিকারের দাবি হিসেবে ৬ দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু।

৬ দফার মূল কথা ছিল—পাকিস্তানের একটি ফেডারেল বা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। ওই বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এই ৬ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন কর্মসূচির প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।

এরপর বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দিন আহমেদের ভূমিকাসহ এই ৬ দফা দাবিনামা একটি বুকলেট আকারে প্রকাশ করা হয়। ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সেই বুকলেট বিলি করা হয়।

বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফা দাবির মুখে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খান বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ৬ দফা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে অস্ত্রের ভাষায় উত্তর দেওয়া হবে।

এদিকে, ৬ দফা কর্মসূচি জনগণের মাঝে পৌঁছে দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-সহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সমগ্র পূর্ববাংলা সফর করেন এবং ৬ দফাকে বাঙালির বাঁচার দাবি হিসেবে অভিহিত করেন।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, জহুর আহমদ চৌধুরী, নূরুল ইসলাম চৌধুরী গণসংযোগে অংশ নেন। প্রতিটি জনসভায় বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করে।

ফলে শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-সহ অন্য নেতাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। যশোর, ময়মনসিংহ ও সিলেটসহ আরো কয়েকটি স্থানে ৬ দফার প্রচারের সময় বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে অমানবিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতন সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু ৬ দফা থেকে পিছপা হননি।

পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক ৬-দফাভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনই ধাপে ধাপে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত হয়। এ দাবির সপক্ষে বাঙালি জাতির সর্বাত্মক রায় ঘোষিত হয় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বাঙালিরা বিজয়ী করে।

অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর দলকে জনগণ বিজয়ী করলেও, স্বৈরাচারী পাক শাসকরা বিজয়ী দলকে সরকার গঠন করতে না-দিলে আবারো বঙ্গবন্ধু জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।

—শুভ বিশেষ প্রতিবেদক

About The Author

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...